যাত্রী চম্পট, ভাড়া না পেয়ে জ্ঞান হারালেন রিকশাচালক

কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যান রিকশাচালক ইবাদুল। তাকে ঘিরে আছেন কয়েকজন পথচারী, পেছনে তার রিকশা। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

ধোলাইখাল থেকে কারওয়ান বাজার পর্যন্ত ভাড়া ঠিক হয় ২৫০ টাকা। শরীরের সব শক্তি দিয়ে প্যাডেল চেপে চেপে দুই ঘণ্টা পর যাত্রীসহ কারওয়ান বাজার পৌঁছান শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী রিকশাচালক ইবাদুল ইসলাম (৩৫)।

কারওয়ান বাজারে ওয়াসা ভবনের সামনে রিকশা থামাতেই, মুহূর্তেই নেমে দ্রুত রাস্তার অপর পাশে চলে যান আনুমানিক ২৫ বছর বয়সী ওই যাত্রী। আর তখনই রিকশা থেকে নামার কিছুক্ষণের মধ্যে জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে যান ইবাদুল। 

পথচারীদের চেষ্টায় জ্ঞান ফিরে আসার পর রিকশার কাছে গিয়েই কেঁদে দেন ইবাদুল। ছবি: শাহীন মোল্লা/স্টার

আজ শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কারওয়ান বাজার এলাকায় ওয়াসা ভবনের সামনে দিয়ে যাচ্ছিলেন এই প্রতিবেদক। ওই রিকশাচালককে তিনি রাস্তায় পড়ে যেতে দেখেন।

কাছে গিয়ে দেখেন, রাস্তায় পড়ে থাকা লোকটিকে ঘিরে আছেন বেশ কয়েকজন পথচারী। কেউ বাতাস করছেন, কেউ পানি ছিটিয়ে দিচ্ছেন।  

প্রায় ১০ মিনিট পর জ্ঞান ফেরে অচেতন মানুষটির। লোকজন ধরাধরি করে তাকে রিকশার ওপর বসায়।

তিনি তখন জানান, তার নাম ইবাদুল, থাকেন যাত্রাবাড়ী এলাকার একটি রিকশা গ্যারেজে, গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর। 

কী হয়েছিল জানতে চাইলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন ইবাদুল। বলেন, 'ধোলাইখাল এলাকা থেকে একটি ছেলে কারওয়ান বাজার আসবে, ২৫০ টাকা রিকশা ভাড়া করে। কারওয়ান বাজার এসে রিকশা থামাই। হঠাৎ সে ভাড়া না দিয়ে দৌড়ে মেইন রোড পার হয়ে ওপাশে চলে যায়।'

ইবাদুল বলেন, 'আমি তার পিছু নিতে দৌড় দেই। কিন্তু আমার বাম পায়ে ছোটবেলা থেকে সমস্যা, জোর কম। দুই পা যেতেই পড়ে যাই। তারপর মনে নাই।'

এই রিকশাচালক জানান, পাঁচ সদস্যের পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। আগে ইঞ্জিনচালিত রিকশা চালালেও, এখন পুলিশের বাধায় তা পারেন না। পায়ে চালানো রিকশা নিয়ে বের হন প্রতিদিন। জানালেন, গ্যারেজে রিকশার জমা ও অন্যান্য খরচ বাবদ তাকে প্রতিদিন দিতে হয় ১০০ টাকা।

আজ দুই ঘণ্টা রিকশা চালিয়ে এতদূর আসার পর ২৫০ টাকা ভাড়া না পেয়ে এবং নিজেদের শারীরিক দুর্বলতার জন্য চম্পট দেওয়া যাত্রীকে ধরতে না পারায়, কষ্টের তীব্রতায় অচেতন হয়ে পড়েন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

Israel says it targeted nuclear sites in Iran's Natanz and Arak overnight

Iran and Israel traded further air attacks on Thursday as Trump kept the world guessing about whether the US would join Israel's bombardment of Iranian nuclear facilities.

13h ago