পূর্ব জুরাইনে জলাবদ্ধতা নিরসন ও গ্যাসের চাপ বাড়ানোর দাবিতে অনশন

জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্তি ও গ্যাসের চাপ বাড়ানোর দাবিতে রাজধানীর পূর্ব জুরাইনে অনশনে বসেছেন এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনশনস্থলে ভিড় করেছেন আরও কয়েকজন।
অনশন চলছে। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

জলাবদ্ধতার কবল থেকে মুক্তি ও গ্যাসের চাপ বাড়ানোর দাবিতে রাজধানীর পূর্ব জুরাইনে অনশনে বসেছেন এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা। তাদের সঙ্গে সংহতি জানিয়ে অনশনস্থলে ভিড় করেছেন আরও কয়েকজন।

আজ শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে পূর্ব জুরাইনের মিষ্টির দোকান এলাকায় এই অনশন শুরু হয়; যা চলবে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত।

অনশনকারীদের ভাষ্য, এই অঞ্চলের মানুষ দীর্ঘকাল ধরে জলাবদ্ধতা ও গ্যাসের স্বল্প চাপের সমস্যার মধ্যে আছেন। কিন্তু এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানে কর্তৃপক্ষ কার্যকর কোনো উদ্যোগই নেয়নি। জলাবদ্ধতা নিরসনে বিভিন্ন সময় দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) পক্ষ থেকে লোকদেখানো কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও তা কোনো কাজে আসেনি। এ অবস্থায় এই অনশন কর্মসূচির ভেতর দিয়ে তারা দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের পাশাপাশি এখানকার লাখো বাসিন্দাকে নিজেদের অধিকার আদায়ে তৎপর হওয়ার বার্তা দিতে চান।

পূর্ব জুরাইন এলাকাটি ডিএসসিসির ৫৩ নম্বর ওয়ার্ড ও ডিএনডি বেড়িবাঁধের অন্তর্ভুক্ত। দক্ষিণ সিটির সবচেয়ে দারিদ্রপ্রবণ এই এলাকাটির বেশিরভাগ সড়ক অপরিকল্পিতভাবে উঁচু করায় এখানকার অনেক ভবনের নিচতলার অবস্থান এখন রাস্তার উচ্চতা থেকে নিচে। যে কারণে এসব ভবনের নিচতলায় বছরের বেশিরভাগ সময় পানি জমে থাকে। যেসব ভবন মালিকের সামর্থ্য আছে তারা নিয়মিত মটর লাগিয়ে পানি অপসারণের ব্যবস্থা করেন। যাদের সেই সামর্থ্য নেই, তাদের নিচতলা পানিতেই ডুবে থাকে।

মানবেতর। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া এই সড়ক থেকে পানি এখনো নামেনি। ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

এর বাইরে এই এলাকার অধিকাংশ নালা কংক্রিটের স্ল্যাব দিয়ে ঢাকা থাকায় সেগুলো নিয়মিত পরিষ্কার করা হয় না। ফলে দীর্ঘদিনের ময়লা-আবর্জনা জমে নালাগুলোর প্রবাহমনতা থেমে যাওয়ায় সেগুলোও মশা উৎপাদনের একেকটি কারখানা হয়ে উঠেছে। তৈরি হয়েছে এক পূতিগন্ধময় পরিবেশ। এমনকি গত ২৭ মে ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে ভারী বৃষ্টিতে ডুবে যাওয়া এই এলাকার অনেকগুলো সড়ক থেকে আজ শুক্রবার পর্যন্তও পানি নামেনি। ফলে এই নোংরা পানি মাড়িয়েই চলতে হচ্ছে অনেককে।

আজ দুপুর ১২টার দিকে মিষ্টির দোকান এলাকায় এখানকার অন্তত ১০ জন বাসিন্দাকে অনশনে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়। কেউ কেউ আবার অনশনস্থলে খানিকক্ষণ বসে তাদের দাবির সঙ্গে সংহতি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে এই এলাকার আরেক বাসিন্দা ও জনস্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন নাগরিক আন্দোলনে যুক্ত মিজানুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই অঞ্চলে ভুক্তভোগী মানুষের সংখ্যা লক্ষ লক্ষ। কিন্তু এখানে যারা দায়িত্বশীল তাদের তেমন কোনো কার্যক্রম আমরা দেখি না। তারা নড়াচড়া করছেন, দৌড়াদৌড়ি করছেন কিন্তু আমাদের কাছে সেটা প্রতারণা মনে হয়। কারণ এতে আমাদের সমস্যার কোনো সুরাহা হয় না।'

আজকের অনশন কর্মসূচি শেষে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের দাবি আদায়ের পরবর্তী কর্মপন্থা ঠিক করা হবে বলেও জানান মিজানুর। তিনি বলেন, 'আমরা চেষ্টা করবো এই আন্দোলনকে সামষ্টিক করতে। যাতে সবাই নিজ নিজ দাবি আদায়ে পথে নামে।'

এর আগে একবার ঢাকা ওয়াসার  'সুপেয়' পানি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তাকসিম এ খানকে (এমডি) শরবত খাওয়ানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন মিজানুর রহমান। এবারের কর্মসূচি তিনি আরও বলেন, 'এই অঞ্চলে মানুষের বসবাসের জন্য যা যা দরকার তার আসলে কিছুই নাই। সমস্যার কথা বলতে বলতে আমাদের ভাষা হারিয়ে গেছে। আক্ষরিক অর্থেই হারিয়ে গেছে। মানুষের সেই ভাষা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি আমরা। মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার জন্য রাস্তায় নামার আহ্বান জানাচ্ছি।' আমরা যে মানুষ, সম্মান-মর্যাদার সঙ্গে বাঁচার অধিকার যে আমাদেরও আছে সেই বার্তাটা আমরা সবাইকে দিতে চাই।'

মিজানুরের ভাষ্য, 'যাদের আমরা দায়িত্ব দিয়েছি, তাদেরও এই বার্তা দিতে চাই যে—কিছু না করে আপনার থাকতে পারবেন না। দায়িত্বে থাকতে হলে আমাদের জন্য কাজ করতে হবে।'

মিজানুর প্রশ্ন রাখেন, 'আমাদের পয়সা, আমাদের সম্পদ, আমাদের সবকিছু। তাহলে আমাদের সবকিছু দিয়ে আমাদের সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে আপনাদের (কর্তৃপক্ষ) এত গড়িমসি কেন?'

বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য ডিএসসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মিজানুর রহমানের মুঠোফোনে কল করা হলে সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।

পরে জলাবদ্ধতা নিরসনের দায়িত্বে থাকা সংস্থাটির পরিবেশ, জলবায়ু ও দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পুর) মো. খায়রুল বাকের ডেইলি স্টারকে প্রথমে বলেন, 'জুরাইন তো একটা ডোবা এলাকা ছিল। এটাকে ফসলি জমি হিসেবে রক্ষা করার জন্য বাঁধ দিয়ে পানি ধরে রেখে চাষাবাদের উপযুক্ত করা হয়েছিল। পরে সেখানে বসবাস শুরু হয়। কিন্তু জায়গাটি তো প্রাকৃতিকভাবেই নিচু। আর পানি তো বিদ্যুতের মতো নয় যে সুইচ দিলে অন্য দিকে চলে যাবে। পানি তো নিচু জায়গায় জমবেই।'

এ পর্যায়ে ডিএসসিসির এই প্রকৌশলী বলেন, 'শ্যামপুর খাল দিয়ে এখানকার পানি নামানোর দুটি উপায় আছে। একটা হলো বরইতলা রেললাইনের নিচ দিয়ে। এখানে আমরা একটা কালভার্ট করেছি। এখান থেকে বুড়িগঙ্গা নদী পর্যন্ত ড্রেনেজ লাইন করার জন্য কার্যক্রম শুরু করেছি। এর মাধ্যমে আমরা শ্যামপুর খালের পানি বুড়িগঙ্গায় নামাবো।

'আরেকটা হলো—জিয়া সরনি খাল থেকে মুসলিমবাগের দিক থেকে যে খালটি আছে সেটার পানি নির্গমন পথটি হলো সিমরাইল পাম্পিং স্টেশন। ওই খালগুলোতে সেনাবাহিনী দেখভাল করছে। আমরা সেখানে এখনো উন্নয়নকাজ করতে পারিনি। পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাছ থেকে খালগুলোর নিয়ন্ত্রণ বুঝে পেলে আমরা ওই খালগুলো দিয়ে বুড়িগঙ্গা নদীতে অথবা সিমরাইল পাম্প স্টেশনে নামানোর ব্যবস্থা করতে পারব।'

এক্ষেত্রে অন্তত এই বছরটা জুরাইনের মানুষেকে জলাবদ্ধতার সমস্যার ভেতর দিয়ে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেন খায়রুল বাকের।

Comments

The Daily Star  | English

US retailers lean on suppliers to absorb tariffs

Rather than absorbing the cost or immediately passing it on to consumers, many US apparel retailers and brands have turned to their suppliers in Bangladesh, demanding they share the pain

8h ago