এই সরকার হাজারো আজিজ-বেনজীর তৈরি করেছে: মির্জা ফখরুল
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'একটা বেনজীর বা একটা আজিজ নয়, এই সরকার হাজারো আজিজ-বেনজীর তৈরি করেছে।'
তিনি বলেন, 'আজকে খবরের কাগজ খুললেই কী দেখেন আপনারা? দেখবেন সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ, তার হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পত্তি। কখন করেছেন? যখন তিনি র্যাবের ডিজি ছিলেন, পুলিশে আইজি ছিলেন—তখন তৈরি করেছেন।'
'যার বেতন সব মিলিয়ে কয়েক কোটি টাকার বেশি হয় না, সেই লোকের এখন দেখা যাচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। যখন এটা ফাঁস হয়ে গেল এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন স্যাংশন দিলো, তারপর কিন্তু তাকে তারা আইজিপি করেছে এবং সব দায়িত্ব দিয়ে রেখেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যখন সরকারকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো, তোমরা তো সব দুর্নীতিপরায়ণ লোকগুলোকে, যারা মানুষের অধিকারকে খুন করেছে, যারা মানুষকে হত্যা করেছে-গুম করেছে, তাদেরকে পুরস্কৃত করছো। সুতরাং তোমাদের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিবো।'
আজ শনিবার বিকেলে নগরীর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় গাজীপুর মহানগর বিএনপি আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, 'এই বেনজীর মে মাসের ৪ তারিখে পুরো পরিবার নিয়ে সিঙ্গাপুর চলে গেছে। কাগজে-কলমে বলছে, মাত্র কয়েকটা ব্যাংকের যে অ্যাকাউন্ট সেখান থেকে ৬০ কোটি টাকা তুলে নিয়ে গেছে। শুধু ৬০ কোটি টাকাই নয়, আরও অসংখ্য টাকা তুলে নিয়ে গেছে। এরা কি চোখে আঙ্গুল দিয়ে বসেছিল? ইমিগ্রেশন ডিপার্টমেন্ট কি চোখে আঙ্গুল দিয়ে বসেছিল? সরকার কি চোখে আঙ্গুল দিয়ে বসেছিল?'
তিনি বলেন, 'আর আমরা যখন চিকিৎসার জন্য বাইরে যেতে চাই, পাসপোর্ট-ভিসা নিয়ে এয়ারপোর্টে গেলে আমাদেরকে দেড় ঘণ্টা-দুঘণ্টা বসিয়ে রাখে। আর তাকে (বেনজীর) জামাই আদর করে সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসে তুলে দিয়েছে, সে যেন দেশ থেকে বেরিয়ে যেতে পারে। এই সরকার হচ্ছে চোরের রাজা বাটপার। যারা চুরি করেছে, তাদের সবসময়ই প্রশ্রয় দিয়েছে।'
সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আব্দুল আজিজ সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, 'এটা গেল একজনের কথা। আরেকজনের কথা বাইরে বেরিয়ে এসেছে। হঠাৎ করে আমরা দেখলাম, সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল আজিজ—যার একটা ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছিল আল জাজিরাতে—তিনি কীভাবে তার ভাইদেরকে রক্ষা করার জন্য প্রভাব খাটিয়ে তাদেরকে মুক্ত করে পাসপোর্ট দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিয়েছিল। তার বিরুদ্ধে আমেরিকা স্যাংশন দেওয়ার পরে, এখন তাদের টনক নড়েছে। এখন বলছে, আমরা তদন্ত করবো।'
তিনি বলেন, 'আজকে দেশে যে ভূখণ্ডে বাস করি, আমরা তাকে বলি স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। সেই স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশটা স্বাধীন করার জন্য যাদের দায়িত্ব ছিল, তখন তারা দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। যখন পাক হানাদার বাহিনী আক্রমণ করেছে, তাদের বেশিরভাগ নেতাই পালিয়ে চলে গেছে এবং মূল নেতা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন। এ কথাগুলো বললে তারা খুব ক্ষিপ্ত হয়ে যায়, তাদের ভালো লাগে না। কিন্তু এটাই হলো চিরন্তন সত্য। শহীদ জিয়া নয় মাস যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছেন। শহীদ জিয়া শুধু বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাই করেননি, এরপর যখনই বাংলাদেশের সামনে আরও বড় সংকট উপস্থিত হয়েছে, ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর, তখন বাংলাদেশের মানুষের সামনে ত্রাণকর্তা হিসেবে উপস্থিত হয়েছেন।'
বিএনপি মহাসচিব বলেন, 'আমাদের বর্তমান শাসকগোষ্ঠী—যারা জোর করে ক্ষমতা দখল করে বসে আছে—সেই আওয়ামী লীগই ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ক্ষমতায় ছিল। ওই চার-পাঁচ বছরের মধ্যে তারা বাংলাদেশে একটা দুঃশাসনের রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল। এতে বাংলাদেশের মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে গিয়েছিল। তাদের দুর্নীতি ও অযোগ্যতা এবং দুঃশাসনের কারণের সেদিন দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয়েছিল। না খেতে পেয়ে সেদিন লাখ লাখ মানুষ মারা গিয়েছিল। কাপড় ছিল না, রংপুরের বাসন্তী তার লজ্জা নিবারণের জন্য এক টুকরো জালের টুকরো দিয়ে তার লজ্জা নিবারণ করেছিল। এই হচ্ছে ইতিহাস, এই হচ্ছে সত্য কথা। এই কথাগুলো আজকাল কখনো তারা বলে না। আমাদের ছেলেমেয়েরা কেউ কথাগুলো জানে না। কথাগুলো যদি কেউ বলে, তাকে আবার জেলের মধ্যে পুড়ে দিবে অথবা সংবিধানবিরোধী বলে মামলা করবে।'
Comments