উপাচার্য-শিক্ষকদের বিরোধে বন্ধ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, খোলার দাবি শিক্ষার্থীদের

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত এক মাস ধরে বন্ধ একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: খালিদ বিন নজরুল/ স্টার

উপাচার্য ও শিক্ষক সমিতির বিরোধের জেরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গত এক মাস ধরে বন্ধ একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম। বার বার শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় চালুর দাবি জানিয়ে এলেও শিক্ষকদের বিরোধের জেরে কোনো উদ্যোগই কাজে আসেনি।

সাধারণত বাংলাদেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নানা ধরনের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের বিরোধ আর সংঘর্ষের কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ, হল ফাঁকা করার নজির দেখা যায়। তবে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের কারণেই এক মাস ধরে শিক্ষার্থীরা নিজেদের ক্লাসরুমে ফিরতে পারছেন না।

যেভাবে শুরু

গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকেলে নবনির্বাচিত শিক্ষক সমিতির নেতারা কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ ফ ম আব্দুল মঈনের অফিসে যান দেখা করতে। সেখানে তারা তাদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন। এসময় উপাচার্য ও শিক্ষক নেতাদের মধ্যে বাকবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা, ছাত্রলীগ নেতাকর্মী, চাকরিপ্রত্যাশীদের সঙ্গে শিক্ষকদের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় হয়। এসময় দাবি না মানা পর্যন্ত উপাচার্যের কক্ষে অবস্থানের সিদ্ধান্ত জানান শিক্ষক নেতারা।

অফিস কক্ষে প্রায় চার ঘণ্টা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ ওঠে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন উপাচার্যের কক্ষে প্রবেশ করলে কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে তার বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। এসময় শিক্ষকদের ওপর হামলার অভিযোগ আনে শিক্ষক সমিতি।

এসব ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগ দায়ের করেন।

এরপর গত ৬ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার দিন প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ তোলে শিক্ষক সমিতি। এদিন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও উপাচার্যের মধ্যে বাকবিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। ভেস্তে যায় নিয়োগ পরীক্ষা।

১২ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি সাত দফা দাবি জানিয়ে আল্টিমেটাম দেয়।

দাবিগুলো হলো- ১৯ ফেব্রুয়ারি উপাচার্যের দপ্তরে শিক্ষকদের ওপর হামলার নেতৃত্ব দেওয়া কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার ও ঘটনার তদন্ত; হামলায় মদদ দেওয়া প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকীকে অপসারণ; ঢাকার অতিথিশালা শিক্ষক-কর্মকর্তাদের জন্য অবমুক্ত করা; অধ্যাপক গ্রেড ১ ও ২-তে আবেদন করা শিক্ষকদের পদোন্নতির ব্যবস্থা; কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী বিভাগীয় প্রধান ও ডিন নিয়োগ এবং ইতোমধ্যে বেআইনিভাবে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের প্রত্যাহার; শিক্ষক নিয়োগ, পদোন্নতি স্থায়ীকরণে আইনবহির্ভূত শর্তারোপ করে জ্যেষ্ঠতা ক্ষুণ্ণের বিষয়টি নিষ্পত্তি করা; ৯০তম সিন্ডিকেট সভায় বিতর্কিত শিক্ষাছুটি নীতিমালা প্রত্যাহার করে আগের নীতিমালা বহাল এবং ৮৬তম সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদিত স্থায়ীকরণ সিদ্ধান্ত বাতিল করা।

এরপর ১৯ থেকে ২৭ মার্চ এই সাত দাবিতে ক্লাস বর্জন করে শিক্ষক সমিতি।

ঈদুল ফিতরের ছুটির পর ২২ এপ্রিল তীব্র তাপদাহের কারণে অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এসময় সশরীরে ক্লাস নেওয়ার কথা জানিয়ে অনলাইন ক্লাস বর্জন করে শিক্ষক সমিতি।

২১ থেকে ২৫ এপ্রিল পর্যন্ত ক্লাস বর্জন করেন শিক্ষকেরা। ২৫ এপ্রিল উপাচার্য, ট্রেজারার ও প্রক্টরের দপ্তরে তালা ঝুলায় শিক্ষক সমিতি। ২৭ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিতব্য জিএসটি ২০২৩-২৪ সেশনের পরীক্ষার দিন ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। পরীক্ষা শেষে ৩ ঘণ্টা ট্রেজারার মো. আসাদুজ্জামানকে গাড়িসহ অবরোধ করে রাখে শিক্ষক সমিতি। পরদিন দুপুরে উপাচার্য, কয়েকজন শিক্ষক ও চাকরিপ্রত্যাশী ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রদের নিয়ে দপ্তরে প্রবেশ করতে গেলে শিক্ষক সমিতির সঙ্গে ধস্তাধস্তি হয়। শিক্ষক নেতারা উপাচার্যের বিরুদ্ধে বহিরাগতের দিয়ে তাদের ওপর হামলার অভিযোগ করেন। উপাচার্যও সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে তার ওপরে হামলা ও উপাচার্যকে অফিসে রেখে বাইরে থেকে তালা দেওয়া চেষ্টার অভিযোগ আনেন। পরস্পরের বিরুদ্ধে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ থানায় লিখিত অভিযোগ করে দুই পক্ষ।

২৯ এপ্রিল উপাচার্যের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন করে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে একদফা আন্দোলনের ডাক দেয় শিক্ষক সমিতি। এ সময় বিভিন্ন প্রশাসনিক পদ থেকে শিক্ষক সমিতির শিক্ষকরা পদত্যাগ করতে থাকেন। ৩০ এপ্রিল সিন্ডিকেট সভায় ১ মে থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সব একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ ও ছাত্র-ছাত্রীদের হল ত্যাগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্তে প্রতিবাদ জানিয়ে শিক্ষক সমিতি আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন।

১ মে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ছাত্রছাত্রীরা ও ছাত্রলীগের একাংশ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের প্রতিবাদে মানববন্ধন করে।  এসময় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্বেচ্ছায় বাড়ি ফিরতে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন স্থানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস সার্ভিস দেয় ও যারা হলে থাকতে ইচ্ছুক তাদের জন্য হল কর্তৃপক্ষকে থাকার ব্যবস্থা করতে নির্দেশ দেয়।

কেন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে না, শিক্ষক সমিতির সঙ্গে উপাচার্যের বিরোধ

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সপ্তম উপাচার্য হিসেবে ২০২২ সালের ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. আ ফ ম আব্দুল মঈন যোগ দেন। পরবর্তী চার বছরের জন্য নিয়োগ পান তিনি।

দায়িত্ব নেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন কাজের ঠিকাদারি ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে কাজ পাইয়ে দেওয়া নিয়ে তৎকালীন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ ও তার অনুসারীদের সঙ্গে বিরোধ হয় উপাচার্যের। সবুজ ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে উপাচার্যকে একাধিকবার অবরুদ্ধ করার।

এছাড়া, জিএসটি পরীক্ষায় প্রাপ্ত অর্থ যা শিক্ষক ও কর্মকর্তারা পেতেন সেই অর্থ দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বৃত্তির ব্যবস্থা করেন উপাচার্য। শিক্ষক নিয়োগে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত নিজস্ব উচ্চ জিপিএর পরিবর্তে ইউজিসির সার্বজনীন যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ, শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে শিক্ষকদের ক্লাস, পরীক্ষা নেওয়ার তদারকি শুরু করেন তিনি।

তবে শিক্ষকদের পদোন্নতির জন্য মানসম্পন্ন কিউ ওয়ান ও কিউ টু জার্নাল প্রকাশনা বাধ্যতামূলক করা, দাবি সত্ত্বেও এমফিল ও পিএইচডি চালু না করা, বিভিন্ন বিভাগের দায়িত্বপালনের ক্ষেত্রে নিয়মিত শিক্ষকদের অগ্রাধিকার এবং শিক্ষকদের শিক্ষাজনিত ছুটির ক্ষেত্রে ইউজিসির নিয়ম মতো ব্যবস্থা চালু করার কারণে প্রভাবশালী শিক্ষকদের সঙ্গে উপাচার্যের বিরোধ বাধে।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়। ছবি: খালিদ বিন নজরুল/ স্টার

এ বিষয়ে উপাচার্য আ ফ ম আব্দুল মঈন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সিনিয়র নেতাদের বিরুদ্ধে কাজের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা আরোপের অভিযোগ করেন। নিয়মতান্ত্রিকভাবে মানসম্পন্ন উচ্চ শিক্ষা নিশ্চিত না হলে বিশ্ববিদ্যালয় মানহীন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে দাবি করেন।

দ্রুত বিশ্ববিদ্যালয় খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্লাস চালু করতে চান বলেও জানান।

তবে এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'উপাচার্য গুন্ডাবাহিনী দিয়ে শিক্ষকদের ওপর হামলা করেছেন। এই মুহূর্তে ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক কেউই ক্যাম্পাসে নিরাপদ নয়।'

'গবেষণার কথা বলে শিক্ষকদের পদোন্নতিতে নানারকম হয়রানি করছেন উপাচার্য। আসলে তিনি নিজেই এই গবেষণার ব্যাপারে আগ্রহী নন,' বলেও দাবি করেন মেহেদি হাসান।

তিনি বলেন, এক বছরে তিনটা মানসম্মত জার্নালে প্রকাশনা বাধ্যতামূলক করা একধরনের অসম্ভব কাজ শিক্ষকদের জন্য। এ ধরনের জার্নালে লেখা প্রকাশের জন্য সময় দরকার। দুই-তিন বছরে সেটি করা যেতে পারে। এটা শিক্ষকদের ওপরে একধরনের চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষক নিয়োগে স্বচ্ছতার বিষয়ে তিনি বলেন, গত ৬ মার্চ ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের শিক্ষক নিয়োগের লিখিত পরীক্ষার দিন উপাচার্য নিজেই প্রশ্ন নিয়ে সেখানে আসেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন তৈরির কাজে বেশ কয়েকটি ধাপ রয়েছে। বোর্ড থাকে। তারা প্রশ্ন তৈরি করেন। পরীক্ষার আগে কেউ জানতে পারেন না কী প্রশ্ন আসবে। উপাচার্য নিজেই যদি প্রশ্ন তৈরি করে চলে আসেন তাহলে এখানে মানসম্পন্ন স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া কীভাবে থাকল। তিনি মুখে বলছেন নিয়োগে স্বচ্ছতার কথা কিন্তু নিজেই মানছেন না।

শিক্ষক নিয়োগে ইউজিসির সার্বজনীন যোগ্যতার মানদণ্ড নির্ধারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় একটি স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। এখানে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, ডিন আলোচনার মাধ্যমে শিক্ষক নিয়োগের একটি মানদণ্ড ঠিক করেছেন। সেটি বাদ দিয়ে ইউজিসির সার্বজনীন যোগ্যতার মানদণ্ড গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিতে হলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করা দরকার ছিল।

উপাচার্যের সঙ্গে শিক্ষক সমিতির বিরোধের ভবিষ্যৎ ক্ষেত্র

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও সম্প্রসারণে ১ হাজার ৫৬৬ কোটি ৫০ লাখ টাকার প্রকল্পের কাজ চলছে। নতুন ক্যাম্পাসে বর্তমানের ১৯ বিভাগের স্থলে ৩৫টি বিভাগ চালু হবে। নতুন বিভাগগুলোতে দুই শতাধিক শিক্ষক ও সম সংখ্যক কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ হবে। বর্তমান অনেক শিক্ষক নেতারা সেই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিজেদের অবস্থান হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ২৬৪ জন শিক্ষকের মধ্যে ১৮০ জন শিক্ষক দেশে অবস্থান করছেন। যার মধ্যে শিক্ষক সমিতিতে আছেন ১৩০ জন শিক্ষক। ফলে শিক্ষক সমিতির দাবি দাওয়া নিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানে না পৌঁছালে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হবে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা।

বর্তমান পরিস্থিতি

এক মাসের বেশি সময় ক্লাস ও পরীক্ষা না হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষকদের বিরোধ অচিরেই কাটবে এমন সম্ভাবনাও দেখছেন না তারা।

গত ২০ মে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাত দফা দাবিতে গঠিত তদন্ত কমিটির সভা হয়।  ২৫ মে সভার প্রতিবেদনে অনাস্থা জানিয়ে লিখিত বিবৃতি দেন শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদি হাসান।

শিক্ষক সমিতির দাবির বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির সদস্য ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবু তাহের দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, শিক্ষকদের দাবি দাওয়া পূরণে সরকারের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিরপেক্ষ ব্যক্তির মধ্যস্থতা ছাড়া তদন্ত কমিটির ওপর আস্থা রাখা যাচ্ছে না।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মোহাম্মদ আবু তাহের। অন্যান্যরা হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, চলচ্চিত্র ও ফটোগ্রাফি বিভাগের অধ্যাপক ড. এ জে এম শফিউল আলম ভূইয়া, অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) আবদুন নূর মুহম্মদ আল ফিরোজ, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের ও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার আমিরুল হক চৌধুরী।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি নিজেই তদন্ত কমিটির সদস্য হলেও কেন তদন্ত কমিটির ওপর আস্থা রাখা যাচ্ছে না জানতে চাইলে আবু তাহের ডেইলি স্টারকে বলেন, 'তদন্ত কমিটি পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছে। পূর্ব থেকেই নেওয়া সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিতে চাইছে। কমিটির সদস্য অতিরিক্ত সচিব আবদুন নূর মুহম্মদ আল-ফিরোজ ২০ মে সভায় উপস্থিত ছিলেন না। পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদনের ওপর পরিপূর্ণভাবে পর্যবেক্ষণ ও মতামত দেওয়ার সুযোগও সীমিত ছিল।'

এদিকে ২৮ এপ্রিলে দুই পক্ষের হামলা, পাল্টা হামলার অভিযোগের ঘটনার তদন্তে জরুরি সিন্ডিকেট সভার সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দকে আহ্বায়ক করে ৫ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।

কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন- চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন অনুষদের ডিন ও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মুস্তাফিজুর রহমান ছিদ্দিকী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (বিশ্ববিদ্যালয়) খালেদা আক্তার ও সদস্য সচিব হিসেবে রয়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মো. আমিরুল হক চৌধুরী।

এই কমিটির সদস্য অধ্যাপক মো. হেলাল উদ্দিন নিজামীকে নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক।

এদিকে উপাচার্য ও শিক্ষকদের এমন পাল্টাপাল্টি অবস্থান ও বিরোধের জেরে ক্লাস-পরীক্ষা নিয়ে উদ্বিগ্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। শিক্ষকদের কারণে ক্লাসে যেতে না পারায় বড় ধরনের ক্ষতি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তারা। তারা বলছেন, 'উপাচার্যসহ শিক্ষকেরাই যদি এ ধরনের বিরোধে জড়িয়ে পড়েন তাহলে সেটি দুঃখজনক। কোনো ধরনের শিক্ষক রাজনীতিতে জড়াতে চাই না আমরা। যতদ্রুত সম্ভব ক্লাসে ফিরতে চাই।'

 

Comments