ট্রেজারি বিল ও বন্ডে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়ছে, কমছে ঋণের সক্ষমতা

বাংলাদেশ ব্যাংক, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট, বাংলাদেশের কোটিপতি,

বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো ক্রমবর্ধমান সুদের হার থেকে বেশি মুনাফা পেতে ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ফলে এসব ব্যাংক থেকে ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পাওয়ার মতো অর্থের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। অর্থাৎ ব্যাংকগুলোর ঋণ দেওয়ার সক্ষমতা কমছে।

এতে ব্যাংকগুলোর একটি অংশ তাদের প্রতিদিনের অর্থের চাহিদা মেটাতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ক্রমাগত তারল্য সহায়তা নিতে বাধ্য হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ১ জুলাই ও ২৯ মে সময়ে সরকার বিল ও বন্ড ব্যবহার করে ব্যাংক থেকে ৭৮ হাজার ১১৭ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের ১৭ হাজার ৮৮৩ কোটি টাকার চেয়ে ৩৩৭ শতাংশ বেশি।

মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক সরকারকে ঋণ দেওয়া বন্ধ করলে বিল ও বন্ডের মাধ্যমে সরকারের ঋণ নেওয়া বাড়তে থাকে। কারণ অর্থনীতিতে এ ধরনের অর্থের সরবরাহ মূল্যস্ফীতিকে ইন্ধন জোগায়। আর দেশের মূল্যস্ফীতি প্রায় দুই বছর ধরে ৯ শতাংশের ওপরে আছে এবং তা কমার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।

২০২৪-২৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে ঘাটতি মেটাতে ব্যাংক থেকে ১ লাখ ৩৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের।

এদিকে ক্রমবর্ধমান সুদহারের কারণে ব্যাংকগুলো বেসরকারি খাতে ঋণ দেওয়ার চেয়ে বিল ও বন্ডে বিনিয়োগে বেশি আগ্রহী। কারণ সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ নিরাপদ, কিন্তু ঋণ মন্দ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, 'তাই ব্যাংকগুলো ট্রেজারি বিল ও বন্ডের ব্যাপারে আগ্রহী। তারা তাদের উদ্বৃত্ত তারল্যের একটি বড় অংশ এসব উপকরণে বিনিয়োগ করেছে।'

ট্রেজারি বিলের সুদের হার বর্তমানে ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে আছে। অথচ গত বছরের জুনে তা ছিল ৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ থেকে ৭ দশমিক ৭৫ শতাংশ। এছাড়া সম্প্রতি বন্ডের সুদের হার ১৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৭৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

টেজারি বিলগুলোর স্বল্পমেয়াদী ম্যাচুরিটি ও বন্ডগুলোর দীর্ঘমেয়াদী ম্যাচুরিটি সময়কাল রয়েছে।

এদিকে সরকারি সিকিউরিটিজে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বেশি হওয়ায় ব্যাংকিং ব্যবস্থায় উদ্বৃত্ত তারল্য বেড়েছে। যার মধ্যে ট্রেজারি বিল ও বন্ডসহ নগদ ও নগদ অর্থের সমতুল্য সম্পদ রয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, এপ্রিল শেষে উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৬ হাজার ২০৫ কোটি টাকায়, যা এক মাস আগে ছিল ১ লাখ ৬৬ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা।

একজন জ্যেষ্ঠ ব্যাংকার বলেন, বিল ও বন্ডকে লিকুইড অ্যাসেট হিসেবে বিবেচনা করা হলেও সেকেন্ডারি মার্কেট এখনো প্রাণবন্ত হয়ে ওঠেনি। তাই তাৎক্ষণিকভাবে এগুলো নগদে পরিণত করা যাবে না। সুতরাং, বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখানো উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ প্রকৃত তারল্য পরিস্থিতি নয়।

'তার প্রমাণ বর্তমানে বেশ কয়েকটি ব্যাংক তারল্য সংকটে ভুগছে,' বলেন তিনি।

অন্যদিকে গত ছয় মাসে ব্যাংকগুলো রেপো ও তারল্য সহায়তার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রতি কর্মদিবসে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা নিয়েছে।

যমুনা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মির্জা ইলিয়াছ উদ্দিন আহম্মেদ বলেন, উদ্বৃত্ত তারল্য বাড়লেও অনেক ব্যাংক এখনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে তারল্য সহায়তা নিচ্ছে।

তিনি বলেন, 'ব্যাংকিং খাতে তারল্য সংকট রয়েছে। কোনো কোনো ইসলামী ব্যাংক এক বছরের বেশি সময় ধরে তারল্য সংকটে ভুগছে। এর প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক ব্যাংকিং খাতে।'

মির্জা ইলিয়াছ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, এছাড়া ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো বর্তমানে সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। কারণ লাগামহীন খেলাপি ঋণ, এ বছরের মার্চে খেলাপি ঋণ সর্বকালের সর্বোচ্চ ১ লাখ ৮২ হাজার ২৯৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে।

করোনা মহামারি ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে গত দুই বছর ধরে অর্থনীতিতে মন্দা পরিস্থিতি দেখা গেছে। এজন্য নতুন ঋণের চাহিদাও কমেছে।

আবার ক্রমবর্ধমান সুদহারের কারণে ঋণগ্রহীতারাও ধীর পদ্ধতি অবলম্বন করেছে।

এর আগে, শিল্পায়নের গতি বাড়াতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের ব্যয় কম রাখতে স্মার্ট হার চালু করেছিল। ফলে ২০২০ সালের এপ্রিল থেকে গত বছরের জুন পর্যন্ত গ্রাহকরা সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদের সুবিধা পেয়েছেন।

কিন্তু দীর্ঘস্থায়ী মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গত বছরের জুলাইয়ে সুদের ঊর্ধ্বসীমা তুলে নিতে বাধ্য হয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ এ বছরের ৮ মে সুদহারও বাজারের হাতে ছেড়ে দেওয়া হয়।

খাতভিত্তিক উদ্বৃত্ত তারল্য

গত বছরের নভেম্বর থেকে ব্যাংকিং খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। নভেম্বরে উদ্বৃত্ত তারল্যের পরিমাণ দাঁড়ায় ১ লাখ ৪০ হাজার ৯৭৯ কোটি টাকা।

চলতি বছরের এপ্রিলে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক বাদে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ৮৪ হাজার ৭৫৮ কোটি টাকা।

রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোর উদ্বৃত্ত তারল্য ছিল ৫২ হাজার ৭৩৩ কোটি টাকা এবং বিদেশি ব্যাংকগুলোর ছিল ৩৭ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা।

২০২১ সাল পর্যন্ত ইসলামি ব্যাংকগুলোতে অতিরিক্ত নগদ অর্থের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি ছিল। কিন্তু পরবর্তী বছরগুলোতে শরিয়াহভিত্তিক অর্ধডজন ব্যাংকে ঋণ অনিয়মের অভিযোগে ‍ওঠে, এরপর থেকে ব্যাপক তারল্য সংকটে পড়তে শুরু করে এসব ব্যাংক।

Comments

The Daily Star  | English

Eid meat: Stories of sacrifice, sharing and struggle

While the well-off fulfilled their religious duty by sacrificing cows and goats, crowds of people -- less fortunate and often overlooked -- stood patiently outside gates, waiting for a small share of meat they could take home to their families

3h ago