আমদানি কমায় বিনিয়োগ-কর্মসংস্থানে হতাশা

আমদানি
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

টানা দ্বিতীয় অর্থবছরের মতো দেশের মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের কাঁচামালের পাশাপাশি অন্যান্য পণ্যের আমদানি কমেছে। বেসরকারি বিনিয়োগ ও নতুন কর্মসংস্থানে হতাশা দেখা যাচ্ছে।

এলসি নিষ্পত্তি সংক্রান্ত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, বিনিয়োগের প্রধান সূচক মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৪ শতাংশ কমে দুই দশমিক ৬৬ কোটি ডলার হয়েছে।

এর আগের অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ৩৪ শতাংশ।

ডলার ঘাটতি ও টাকার অবমূল্যায়নের কারণে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ায় এ দৃশ্য দেখা যাচ্ছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়ায় শিল্প খাতে বিনিয়োগ কমেছে। এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।'

তার মতে, বিনিয়োগকারীরা নতুন কারখানা গড়তে বা বিদ্যমান কারখানা সম্প্রসারণে আগ্রহী নন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্যে আরও দেখা গেছে, রপ্তানি কমে যাওয়া ও ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতির মুখে দেশে চাহিদা কমে যাওয়ায় শিল্পের কাঁচামালের আমদানি বছরে ১৬ শতাংশ কমে ২১ দশমিক ৭৫ বিলিয়ন ডলার হয়েছে।

গত অর্থবছরে আমদানি করা শিল্পের কাঁচামালের দাম কমেছে ১৩ শতাংশ।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম আরও বলেন, 'দেশের রপ্তানি পণ্যের চাহিদা বিশ্ববাজারে কমেছে। একই সময়ে দেশেও চাহিদা কমেছে। এ কারণে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিতে চাচ্ছেন না।'

মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) শিল্পকারখানার ভূমিকা আগামীতে কমবে বলেও আশঙ্কা করেন তিনি।

তার মতে, সম্প্রতি নানান চ্যালেঞ্জের কারণে দেশের অর্থনীতি কঠিন সময় পার করছে।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়ায় শিল্প খাতে বিনিয়োগ কমেছে। এর ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিরূপ প্রভাব পড়বে।'

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুসারে, রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে ৪১ দশমিক সাত বিলিয়ন ডলার থেকে গত ৩১ জুলাইয়ে ২০ দশমিক ৪১ বিলিয়ন ডলারে নেমে এসেছে।

রিজার্ভের নাজুক অবস্থার কারণে বিদেশিরা বিনিয়োগে 'ধীরে চলো' নীতি মেনে চলছেন।

খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম মনে করেন, ক্ষুদ্র-মাঝারি উদ্যোক্তারা (এসএমই) মারাত্মক চ্যালেঞ্জে পড়বেন।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ডলারের ঘাটতির কারণে আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ায় মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে।'

ডলারের দাম বেড়ে যাওয়াকে আরেকটি কারণ হিসেবে উল্লেখ করছেন তিনি।

'গত দুই বছরে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ অনেক কমেছে' জানিয়ে তিনি আরও বলেন, 'বেসরকারি খাতে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এই খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধিও উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে।'

তিনি সতর্ক করে বলেন, 'মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়ার প্রভাব আগামীতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গতি কমিয়ে দিতে পারে।'

'বিনিয়োগের পাশাপাশি কর্মসংস্থান কমে যাওয়ায় চাকরির বাজারে এর প্রভাব পড়বে। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য আমাদের মুদ্রার বিনিময় হারসহ সময়োপযোগী নীতিগত সিদ্ধান্ত প্রয়োজন। ডলার সংকটের চাপ কমাতে রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বাড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।'

'একই সঙ্গে ওভার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে অর্থপাচার হয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। সেই টাকা ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে হবে,' যোগ করেন তিনি।

সরকারের উচিত আমদানি বিধিনিষেধ পুনর্বিবেচনা করা। ওভার ও আন্ডার ইনভয়েসিং এড়াতে রপ্তানি ও আমদানি পর্যবেক্ষণ করা।

পলিসি এক্সচেঞ্জ অব বাংলাদেশের (পিসিআই) চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমায় শিল্প উৎপাদন ও অর্থনীতিতে এর প্রভাব ভীষণ উদ্বেগের বিষয়।'

'শিল্প উৎপাদন দ্রুত কমবে। রপ্তানি খাতে উন্নতি হবে না,' বলেন তিনি।

একই সঙ্গে অর্থনৈতিক উৎপাদন কমে যাবে। মূলধন তৈরি হবে না।

রিয়াজ আরও বলেন, কর্মসংস্থান কমে যাওয়ার পাশাপাশি চাকরিতে ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Beyond development paradox & unnayan without democracy

As Bangladesh seeks to recalibrate its path in the aftermath of recent upheavals, the time is ripe to revisit an oft-invoked but under-examined agenda: institutional reform. Institutions are crucial to understand, as they are foundational for governance, transformation, and economic development.

18h ago