বাংলাদেশ-ভারত কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট চক্র: নয়াদিল্লিতে অ্যাপোলোর ডাক্তার গ্রেপ্তার

নয়াদিল্লিতে অবস্থিত ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতাল । ছবি: সংগৃহীত
নয়াদিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতাল । ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ ও ভারতে অবৈধভাবে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দিল্লির ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের চিকিৎসক বিজয়া কুমারী (৫০) ও তিন বাংলাদেশিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

গত সপ্তাহে দিল্লি পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে বলে আজ মঙ্গলবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

পুলিশ জানিয়েছে, এই চক্রের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বিজয়া। ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তিনি নয়ডাভিত্তিক বেসরকারি যথার্থ হাসপাতালে ১৫ থেকে ১৬টি কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট করেন।

জানা গেছে, এই চক্র দালালদের মাধ্যমে বাংলাদেশি রোগীদের দিল্লির বিভিন্ন সেরা হাসপাতালে কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্টের প্রলোভন দেখিয়ে বিজয়া কুমারী ও তার সহযোগীদের কাছে নিয়ে আসতেন। বিজয়ার পাশাপাশি গত মাসে তিন বাংলাদেশি নাগরিককেও গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

ভারতীয় আইনের বাধ্যবাধকতা মানতে নয়াদিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশ হাইকমিশনের নামে তৈরি করা কিছু জাল নথির মাধ্যমে দাবি করা হয় কিডনিদাতা ও গ্রহীতার (উভয়ই বাংলাদেশি) মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক রয়েছে। সূত্ররা জানিয়েছেন, এসব জাল নথিও জব্দ করা হয়েছে।

সূত্র আরও জানিয়েছে, বিজয়া কুমারী একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন। তিনি প্রায় ১৫ বছর আগে জুনিয়র ডাক্তার হিসেবে অ্যাপোলোতে যোগ দেন। তিনি হাসপাতাল থেকে বেতন পেতেন না—প্রতিটি সার্জারি বা চিকিৎসার জন্য অর্থ পেতেন।

যথার্থ হাসপাতালের অতিরিক্ত মেডিকেল সুপার সুনিল বালিয়ান জানান, বিজয়া কুমারী হাসপাতালটির স্থায়ী কর্মী ছিলেন না। তিনি শুধু তার নিজের রেফারেন্সে আসা রোগীদের ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতেন।

'যথার্থ হাসপাতালের কোনো রোগীর চিকিৎসা বা সার্জারির দায়িত্ব তাকে দেওয়া হয়নি এবং তিনি গত তিন মাসে শুধু একটি সার্জারি করেছেন', যোগ করেন সুনিল।

অ্যাপোলো হাসপাতাল ইতোমধ্যে বিজয়া কুমারীকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করেছে বলে জানিয়েছেন হাসপাতালটির মুখপাত্র।

তার ভাষ্য, পুলিশের অপরাধ বিভাগ তদন্তের অংশ হিসেবে কিছু তথ্য চেয়েছে, যা ইতোমধ্যে তাদেরকে দেওয়া হয়েছে।

মুখপাত্র বলেন, 'অন্য একটি হাসপাতালে কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে ইন্দ্রপ্রস্থ অ্যাপোলো হাসপাতালের কোনো যোগসূত্র নেই।'

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে এক সূত্র জানিয়েছে, রাসেল (২৯), মোহাম্মদ সুমন মিয়া ও ইফতি নামের তিন বাংলাদেশি এবং ত্রিপুরার বাসিন্দা রতিশ পাল তাদের নিজ নিজ এলাকা থেকে আগ্রহী কিডনিদাতাদের মোটা অঙ্কের অর্থের প্রলোভন দেখিয়ে দিল্লিতে নিয়ে আসতেন। কিডনিদাতাদের চক্রটি চার থেকে পাঁচ লাখ রুপি দিলেও গ্রহীতাদের কাছ থেকে ২৫ থেকে ৩০ লাখ রুপি আদায় করতেন তারা।

ইফতি ছাড়া অভিযুক্ত বাকি তিন ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, রাজস্থানে একটি কিডনি চক্রের সদস্যদের গ্রেপ্তারের পর বাংলাদেশ-ভারতের এই চক্রের বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়। পুলিশ প্রায় তিন মাস আগে থেকে এ নিয়ে কাজ শুরু করে।

আল শিফা নামে একটি মেডিকেল ট্যুরিজম প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে সমন্বয়, চিকিৎসা, মেডিকেল পরীক্ষার কাজগুলোর ব্যবস্থাপনা করা হতো।

সূত্র জানিয়েছেন, যথার্থ হাসপাতাল থেকে বাংলাদেশ হাইকমিশনের নামযুক্ত জাল নথি জব্দ করা হয়েছে।

পুলিশ এখন সংঘবদ্ধ চক্রটির বাকিদের অনুসন্ধানে রয়েছে। তদন্ত চলাকালীন সময় বিজয়া কুমারীর সহযোগী বিক্রমকেও গ্রেপ্তার করা হয়।

জব্দ নথি থেকে জানা গেছে, জাসোলা গ্রামে একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভাড়া নিয়েছিলেন রাসেল। এই ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্টে একসঙ্গে পাঁচ-ছয়জন কিডনিদাতাকে রাখা হয়েছিল। ট্রান্সপ্ল্যান্টের আগেই তাদের সব ধরনের প্রয়োজনীয় মেডিকেল পরীক্ষা করানো হয়। এই অ্যাপার্টমেন্টেই গ্রহীতাদের সঙ্গে দাতাদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়।

বাংলাদেশের কুষ্টিয়া জেলার বাসিন্দা রাসেলের পাশাপাশি মিঞা (২৮) ও মোহাম্মদ রোকন (২৬) নামে দুই ব্যক্তি জিজ্ঞাসাবাদের সময় একই অ্যাপার্টমেন্টে ছিলেন।

গ্রেপ্তারের সময় রাসেলের কক্ষ থেকে একটি ব্যাগে নয়টি পাসপোর্ট, দুইটি ডায়েরি ও একটি রেজিস্টার খাতা উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে তিনটি পাসপোর্ট কিডনিদাতা ও গ্রহীতার এবং ডায়েরিতে তাদের মধ্যে (দাতা ও গ্রহীতা) আর্থিক লেনদেনের বিস্তারিত লেখা ছিল।

রোকনের কাছ থেকে উদ্ধার করা ব্যাগে ২০টি সিল দেওয়ার স্ট্যাম্প ও দুইটি স্ট্যাম্প প্যাড (নীল ও লাল) পাওয়া যায়। অভিযোগ মতে, জাল নথি তৈরিতে এসব উপকরণ ব্যবহার করা হতো। রোকনকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
High Court

HC to deliver verdict over quick rental law Nov 14

Sections 9 and 6(2) of the Quick Enhancement of Electricity and Energy Supply (Special Provisions) Act 2010 protect rental and quick rental power plants from legal challenges

29m ago