ঋণ ব্যবস্থাপনায় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা গঠনের চিন্তা করছে সরকার

রিজার্ভ কমে যাওয়ায় দেশ যখন ঋণ ব্যবস্থাপনার সংকটে পড়েছে তখন এমন সংস্থা গঠনের সিদ্ধান্ত এলো।
অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

যথাযথ ঋণ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা গঠনের কথা ভাবছে সরকার।

ট্রেজারি বন্ড ইস্যু থেকে শুরু করে জাতীয় সঞ্চয়পত্র তদারকি, বিদেশি ঋণ নেওয়াসহ সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনার সবদিক অর্থ বিভাগের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাটির মাধ্যমে পরিচালিত হবে।

সরকার সর্বশেষ মধ্যমেয়াদি ঋণ ব্যবস্থাপনা কৌশলে আশা করছে যে, একক ঋণ ব্যবস্থাপনা সংস্থা সমন্বয়ের কাজকে দ্রুত করবে, অপ্রয়োজনীয় খরচ কমাবে, ঋণের ঝুঁকি দক্ষতার সঙ্গে পরিচালনা করে সরকারের সক্ষমতা বাড়িয়ে তুলবে ও সরকারি ঋণের সুবিধা বাড়াবে।

রিজার্ভ কমে যাওয়ায় দেশ যখন ঋণ ব্যবস্থাপনার সংকটে পড়েছে তখন এমন সংস্থা গঠনের সিদ্ধান্ত এলো।

গত ৩০ জুন পর্যন্ত দেশের মোট ঋণ ছিল ১৮ লাখ ৩৫ হাজার ৩৫ কোটি টাকা বা ১৫৬ বিলিয়ন ডলার।

এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ ঋণ ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৫২৯ কোটি টাকা বা ৮৮ বিলিয়ন ডলার। বাকিটা বিদেশি ঋণ।

সরকারি ঋণ ব্যবস্থাপনা বাড়াতে ক্রমান্বয়ে সমন্বিত ঋণ ব্যবস্থাপনা কাঠামোর দিকে যাওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

সরকার বলেছে, সমন্বিত পদ্ধতি আরও সুসংহত ও কার্যকর ঋণ ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে।

এ ছাড়াও, ঋণ ব্যবস্থাপনা সংস্থার সক্ষমতা বাড়ানো হলে তা ঋণের নীতিমালা আরও কার্যকর করার পাশাপাশি টেকসই কাজে সরকারি ঋণ বজায় রাখতে সহায়তা করবে।

সরকারের ঋণ ব্যবস্থাপনা নীতির প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো অর্থের জোগান ও ঋণের ঝুঁকি কমানো।

প্রাথমিকভাবে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) শতকরা হিসাবে মোট ঋণের হার নিম্নমুখী। এটি ২০০৬-০৭ অর্থবছরে ৩৫ দশমিক নয় শতাংশ থেকে কমে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ২৬ দশমিক দুই শতাংশ হয়েছে।

তবে এরপর তা ঊর্ধ্বমুখী হতে দেখা যায়। ২০২২-২৩ অর্থবছরে মোট ঋণ ৩৬ শতাংশে পৌঁছেছে।

সরকারি ঋণের মধ্যে আছে অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণ।

২০২৩-২৪ অর্থবছর শেষে অভ্যন্তরীণ ঋণ মোট ঋণের ৫৬ শতাংশ। বাকি ৪৪ শতাংশ বৈদেশিক ঋণ।

দেশীয় ঋণে আছে স্বল্পমেয়াদি ট্রেজারি বিল, বন্ড, সুকুক, ডিমান্ড প্রমিসরি নোট ও বিশেষ বন্ড।

জাতীয় সঞ্চয়পত্র ও টি-বন্ড অভ্যন্তরীণ ঋণের মূল উৎস।

অভ্যন্তরীণ উত্স থেকে ঋণ নেওয়া বছরের পর বছর ধরে বেড়েই চলেছে। মোট অভ্যন্তরীণ ঋণের ৬৫ দশমিক ৮৫ শতাংশ দেশীয় বাজারের ঋণ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

অতি প্রয়োজনীয় সরকারি বিনিয়োগ চলমান রাখতে সরকার অভ্যন্তরীণ বাজারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।

কিন্তু জাতীয় সঞ্চয়পত্র, বিল ও বন্ডে সুদের হার বেশি হওয়ায় অভ্যন্তরীণ ঋণের খরচ বেশি।

এটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে রাখার পরিকল্পনা থাকা উচিত ছিল।

যেহেতু বাংলাদেশ এখনো সার্বভৌম বন্ড ইস্যু করতে পারেনি সেহেতু উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাগুলোর দ্বিপক্ষীয় ও বহুপাক্ষিক ঋণ বিদেশি ঋণের একমাত্র উৎস।

তবে সম্প্রতি বিদেশি ঋণের শর্তগুলো পুরোপুরি ছাড় থেকে অর্ধেক বা ছাড় না দেওয়ার দিকে সরে যাচ্ছে।

বেশিরভাগ ঋণ টাকায় মূল্যায়িত ও বিদেশি ঋণের মেয়াদ দীর্ঘ হওয়ায় বিদ্যমান ঋণের ঝুঁকি মাঝারি মানের।

অভ্যন্তরীণ ঋণ বিদেশি ঋণের তুলনায় বেশি ব্যয়বহুল।

তবে বিদেশি ঋণের ওপর বেশি নির্ভরশীলতার কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ডলারের বিনিময় হারের ঝুঁকি বেড়েছে।

সামষ্টিক অর্থনৈতিক ঝুঁকি ও ঋণ ব্যবস্থাপনায় এর প্রভাব সম্পর্কে সরকার বলেছে, ক্রমবর্ধমান মূল্যস্ফীতি সুদের খরচকে বাড়িয়ে তোলার পাশাপাশি অর্থনীতির ওপর চাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। ডলারের বিনিময় হারের ওঠানামা অব্যাহত থাকলে টাকার হিসাবে বিদেশি ঋণ ব্যয়বহুল হয়ে উঠতে পারে।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) বাংলাদেশের সরকারি ঋণ নিয়ে এক বিশ্লেষণে বলেছে, বাংলাদেশের বিদেশি ও সামগ্রিক ঋণ সংকটের ঝুঁকি কম।

গত মাসে প্রকাশিত এই বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, অভ্যন্তরীণ ও বিদেশি ঋণের উচ্চ সুদের হার আগামীতেও সংকট হয়ে থাকবে যদিও ঋণের চাপ এখনো কম।

অর্থের জোগান মেটাতে দেশে রাজস্ব সংগ্রহ জরুরিভাবে বাড়ানোর প্রয়োজনীয়তার কথাও বিশ্লেষণে বলা হয়েছে।

সরকার আইএমএফকে নিশ্চিত করেছে যে ইউরোবন্ড ইস্যু করার পরিকল্পনা তাদের নেই।

Comments

The Daily Star  | English
economic challenges for interim government

The steep economic challenges that the interim government faces

It is crucial for the interim government to focus on setting a strong foundation for future changes.

9h ago