মাদারীপুরে ছাত্রলীগ-পুলিশের ধাওয়ায় লেকে ঝাঁপ দিয়ে শিক্ষার্থী নিহত

মাদারীপুরে ছাত্রলীগ-পুলিশের ধাওয়ায় লেকে ঝাঁপ দিয়ে শিক্ষার্থী নিহত
দীপ্ত দে | ছবি: সংগৃহীত

মাদারীপুরে ছাত্রলীগ ও পুলিশের ধাওয়া খেয়ে লেকে ঝাঁপ দেওয়ার পরে ডুবে গিয়ে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন।

নিহত শিক্ষার্থী হলেন—মাদারীপুর সরকারি কলেজের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের স্নাতক দ্বিতীয়বর্ষের শিক্ষার্থী দীপ্ত দে (২২)। মাদারীপুর জেলা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল শকুনি লেক থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে।

আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মাদারীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত সুপার মো. মনিরুজ্জামান শকুনি লেক থেকে মরদেহ উদ্ধারের তথ্য দ্য ডেইলি স্টারকে নিশ্চিত করেছেন।

'শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ-বিজিবি-র‍্যাব ও সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে' এদিন কমপ্লিট শাটডাউন (সর্বাত্মক অবরোধ) পালন করছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।

হাসপাতাল, গণমাধ্যমসহ অন্যান্য জরুরি সেবা ছাড়া এই কর্মসূচি চলাকালে সব কিছু বন্ধ থাকবে—ঘোষণা দিয়েছেন তারা।

এর অংশ হিসেবে শকুনি লেকপাড়ে জড়ো হয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।

অতিরিক্ত সুপার মনিরুজ্জামান বলেন, 'আজ সকালে কোটা সংস্কার দাবিতে কিছু ছাত্র মাদারীপুর শকুনি লেকপাড় এলাকায় বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করে। সে সময় পুলিশ তাদের কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা না করার অনুরোধ জানায়। তবে ছাত্ররা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল, কাঁচের বোতল ছুড়ে মারে। তাদের হাতে হকিস্টিক ও বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র ছিল।'

তিনি বলেন, 'ছাত্ররা পুলিশের ওপর চড়াও হলে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। সে সময় ছাত্রদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। কীভাবে ওই শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে সেটা তদন্ত সাপেক্ষে জানাতে পারব।'

আন্দোলনকারী আহত আরেক শিক্ষার্থী নকিবুল ইসলাম বর্তমানে জেলা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ছাত্ররা শান্তিপূর্ণ অবস্থান করছিলাম, তখন শকুনি লেকপাড় এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মীরা আমাদের ওপর হামলা করে। পুলিশের কাছে আশ্রয় চেয়েও আমরা পাইনি। কিছুক্ষণ পর ছাত্রলীগের সঙ্গে পুলিশও আমাদের ওপর হামলা চালায়, রাবার বুলেট-টিয়ার শেল ছোড়ে।

'আমরা দিক-বিদিক দৌড়াতে থাকি। আমাদের কয়েকজন আন্দোলনকারী শকুনি লেকে ঝাঁপ দেন। হঠাৎ দেখি এক ভাই পানিতে ডুবে যাচ্ছেন। তাকে উদ্ধারের জন্য আমিও পানিতে ঝাঁপ দিই। ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা পানিতেও আমাদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল ছুড়তে থাকে। সেখানে পুলিশ উপস্থিত থাকলেও আমাদের সহযোগিতা করেনি,' অভিযোগ করেন তিনি।

নকিবুল আরও বলেন, 'আমরা যখন ওই ভাইকে পানি থেকে তুলে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছিলাম, তখন ছাত্রলীগ কর্মীরা হাসপাতালের সামনেও আমাদের ওপর হামলা চালায়। তখন আমিও আহত হই। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় আমরা হাসপাতালে ঢুকি এবং ডাক্তার-নার্স আমাদের রক্ষা করেন।'

সদর হাসপাতালের ফার্মাসিস্ট বিমল ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আজ সংঘর্ষের ঘটনায় আহত মাদারীপুর সদর হাসপাতালে অন্তত ৫০ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। ৩৩ জনকে হাসপাতালে ভর্তি নেওয়া হয়েছে। একজনকে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।'

আরেক শিক্ষার্থী মাদারীপুর উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী জান্নাতুল ইসলাম কবিতা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমাদের সঙ্গে থাকা তিন জন ছাত্র পানিতে ডুবে যায়। একজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে, এখনো দুজন নিখোঁজ রয়েছেন।'

মাদারীপুর ফায়ার সার্ভিসের পরিদর্শক আহাদুজ্জামান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা তথ্য পেয়েছিলাম, সকালে লেকের পানিতে একজন ছাত্র ডুবে গেছেন। আমাদের ডুবুরি দল তাকে উদ্ধার করে। তার মরদেহ বর্তমানে সদর হাসপাতাল মর্গে আছে।'

Comments

The Daily Star  | English
rohingya-migration

Myanmar solely responsible for creating favourable conditions for Rohingyas’ return: UN

11 Western countries stress lasting solution hinges on peace and stability in Myanmar

23m ago