হাসপাতালে ‘অবরুদ্ধ’ নাহিদ ও আসিফ, কেবিনের সামনে ‘গোয়েন্দা পুলিশ’

নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর নজরদারিতে আছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ।

তাদের কেবিনে ঢুকে কাউকে দেখা পর্যন্ত করতে দেওয়া হচ্ছে না, এমনকি গণমাধ্যমের সঙ্গেও তাদের কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। 

কোটা সংস্কার আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা জানান, চার দিনের আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর বৃহস্পতিবার তাদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার কথা ছিল।

অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ হাসপাতালে ভর্তি থাকায় সেখান থেকেই তারা কর্মসূচি ঘোষণা করবেন বলে জানিয়েছিলেন।

কিন্তু, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কয়েকজন সদস্য বৃহস্পতিবার ওই হাসপাতালে যান এবং নাহিদ ও আসিফকে তাদের কেবিনে অবরুদ্ধ করে রাখেন এবং হাসপাতালের ওয়াই-ফাই ও টেলিফোন সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে ফেলেন বলে বলে অভিযোগ উঠেছে। 

সমন্বয়করা বলছেন, এ কারণে নিজেদের মধ্যে তারা সময়মতো যোগাযোগ করতে পারেননি।

রাতে সরেজমিনে ওই হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, নাহিদ ও আসিফের কক্ষের সামনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দুই সদস্য পাহারা দিচ্ছেন।

অথচ বিকেলে আসিফ মাহমুদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেছিলেন, তারা সমন্বয়কদের সঙ্গে বৈঠক করে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করবেন।

পরে সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে আসিফ দ্য ডেইলি স্টারের প্রতিবেদককে ফোন করে জানান, তিনি ও নাহিদ হাসপাতালে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী হাসপাতালের ওয়াই-ফাই ও টেলিফোন লাইন কেটে দিয়েছে।

এ কারণে তারা অপর সমন্বয়কদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি। আসিফ আরও বলেন, তারা হাসপাতালে রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে একটি প্রেস ব্রিফিং করবে। তিনি এই প্রতিবেদককে ওই সময়ে হাসপাতালে যেতে বলেন।

রাত ৮টার দিকে এই প্রতিবেদক হাসপাতালে যান। কিন্তু ঘণ্টাখানেক অপেক্ষা করেও কোনো প্রেস ব্রিফিংয়ের প্রস্তুতি দেখা যায়নি।

একপর্যায়ে এই প্রতিবেদক হাসপাতালের ভেতরে প্রবেশ করেন এবং পুলিশ সদস্যদের দেখতে পান।

হাসপাতালের সপ্তম তলায় নাহিদের কেবিনের সামনে তিনজন ও তৃতীয় তলায়  আসিফের কেবিনের সামনে চারজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে সাদা পোশাকে দেখা যায়। তারা নিজেদের গোয়েন্দা সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে এই প্রতিবেদককে কেবিনে প্রবেশ করতে দেননি।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই গোয়েন্দা সদস্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এই দুটি কেবিনে প্রবেশ নিষেধ। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কঠোর নির্দেশনা আছে।'

এরপর যোগাযোগ করা হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান মাসুদের সঙ্গে। তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা সংবাদ ব্রিফিং করতে হাসপাতালে গিয়েছিলাম। কিন্তু সাদা পোশাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আমাদের নাহিদ ও আসিফের সঙ্গে দেখা করতে দেয়নি। পরে আমরা হাসপাতাল থেকে চলে আসি।'

পরে টেলিফোনে নাহিদ ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'হাসপাতালের বাইরে অনেক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য অবস্থান করছেন। কাউকে ভেতরে ঢুকতে দিচ্ছেন না। কাউকে বের হতেও দিচ্ছেন না। আগে ইন্টারনেট সংযোগ পেলেও বিকেলের পর থেকে পাচ্ছি না। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।'

রাত পৌনে ১২টার দিকে ওই হাসপাতালের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সকাল থেকেই আমাদের হাসপাতালের ওয়েটিং রুমে কয়েকজন পুলিশের পোশাকে ও কয়েকজন সাদা পোশাকে অবস্থান করছেন। তারা হাসপাতালের স্বাভাবিক কার্যক্রমে কোনো সমস্যা করেননি। আমাদের কাছে কিছু জানতেও চাননি। হাসপাতালের ভেতরে রোগীরা যেখানে থাকেন, সেদিকেও ঢোকেননি। ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার কোনো ঘটনাও ঘটেনি। আমরা স্বাভাবিকভাবে হাসপাতাল পরিচালনা করছি।'

গত শনিবার ভোরে রাজধানীর সবুজবাগের একটি বাসা থেকে নাহিদ ইসলামকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ পাওয়া যায়। বাম উরু ও কাঁধে প্রচণ্ড ব্যথা ও গভীর ক্ষতসহ রোববার তাকে পাওয়া যায়।

এর আগে শুক্রবার আসিফ মাহমুদকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অপহরণ করে বলে অভিযোগ ওঠে। পাঁচ দিন পর তাকে পাওয়া যায়।

যোগাযোগ করা হলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের গোয়েন্দা শাখা অবশ্য এই দুজনকে গ্রেপ্তার বা বাসা থেকে তুলে নেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে।

এদিকে আজ রাত সোয়া ১২টার দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

নতুন কর্মসূচি অনুযায়ী, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের জন্য শুক্রবার সারাদেশে প্রার্থনা করা হবে।

এছাড়া, আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে সংঘর্ষে আহত প্রায় ১৫ হাজার আন্দোলনকারী ছাত্র-জনতার যথাযথ চিকিত্সা নিশ্চিত করতে সারা দেশে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

Comments

The Daily Star  | English

IMF sets new loan conditions

The International Monetary Fund has set new performance criteria tied to Bangladesh’s $5.5 billion loan programme, requiring the country to significantly reduce both domestic and external arrears in the power and fertiliser sectors before the next tranche can be released.

7h ago