ডিবি কার্যালয় থেকে ভিডিও বার্তায় কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা ৬ সমন্বয়কের

ডিবি কার্যালয়ে ধারণ করা ভিডিওতে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ৬ সমন্বয়ক। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) কার্যালয়ে হেফাজতে থাকা অবস্থায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ক।

তবে, এ ঘোষণা প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন সমন্বয়ক।

রেকর্ড করা এক ভিডিও বার্তায় রোববার লিখিত বক্তব্য পড়ে কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম।

লিখিত বক্তব্যে নাহিদ ছাড়াও সারজিস আলম, হাসনাত আবদুল্লাহ, আবু বাকের মজুমদার, আসিফ মাহমুদ, নুসরাত তাবাসসুমের সই ছিল।

ভিডিওবার্তায় নাহিদ বলেন, 'কোটা সংস্কার আন্দোলন ও তার প্রেক্ষিতে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে অনেকেই অপ্রত্যাশিতভাবে আহত এবং নিহত হয়েছেন। তা ছাড়া রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় অগ্নিসংযোগসহ নানা সহিংস ঘটনা ঘটেছে। আমরা এ সকল অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই এবং সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। আমাদের প্রধান দাবি ছিল কোটার যৌক্তিক সংস্কার যা ইতোমধ্যে সরকার পূরণ করেছে। এখন শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দ্রুত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানাই। সার্বিক স্বার্থে আমরা এই মুহূর্ত থেকে আমাদের কর্মসূচি প্রত্যাহার করছি।'

এদিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে বলে দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন আরেক সমন্বয়ক আব্দুল কাদের।

জানতে চাইলে কাদের ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা ওই ভিডিওবার্তা প্রত্যাখ্যান করছি। নাহিদ ভাই আমাদের কিছু বিষয় বলে গেছেন। অন্যান্য সমন্বয়কদের সঙ্গে সেগুলো নিয়ে কথা বলে আমরা শিগগির একটি বিবৃতি দিচ্ছি।'

রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, 'সমন্বয়কদের জিম্মি করে নির্যাতনের মুখে যে স্টেটমেন্ট দেওয়া হয়েছে, সেটা কখনোই জাতির নিকট গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। আটককৃত সমন্বয়করা ভয়ভীতির মুখে গোয়েন্দা সংস্থার লিখে দেওয়া যে বক্তব্য কেবল রিডিং পড়ে গেছে, আমরা সেই বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি এবং একইসঙ্গে জোরপূর্বক বক্তব্য আদায় করার মতো সরকারের এমন জঘন্য কাজের তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি।'

তিনি আরও লিখেছেন, 'আমরা দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলতে চাই, পূর্বে উত্থাপিত ছাত্র হত্যার দায়ে প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমা প্রার্থনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর পদত্যাগসহ নয় দফা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। দেশবাসীর প্রতি আহ্বান, আপনারা কোনোপ্রকার বিভ্রান্ত হবেন না। যে কোটার জন্য সরকার এতগুলা মানুষকে হত্যা করেছিল, সেই হত্যার বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।'

কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণার আগে ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের সঙ্গে ওই ছয় সমন্বয়কের খাওয়া-দাওয়ার কিছু ছবি হারুন নিজেই তার ফেসবুকে শেয়ার করেন৷ এর পরপরই ভিডিওবার্তায় সমন্বয়করা কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা জানান।

আন্দোলনের দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম এবং আসিফ মাহমুদকে গত ১৯ জুলাই সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ উঠেছিল৷ নিখোঁজের একদিন পরে নাহিদ ইসলামকে পূর্বাচল এলাকায় পাওয়া যায়। এরপর নাহিদ অভিযোগ করেন যে, তিনি আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়ায় তাকে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন তুলে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করে। পরে হাসপাতালে ভর্তি থাকাবস্থায় নাহিদ ইসলাম ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন। সেখানে আন্দোলনের সমন্বয় সারজিস আলম এবং হাসনাত আবদুল্লাহ এবং সহ-সমম্বয়ক হাসিব আল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন। নাহিদ ইসলাম সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করে প্রজ্ঞাপন প্রকাশ হলে সেটি গ্রহণ না করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

এরপর ঢাকার একটি হাসপাতালে তিনি এবং আসিফ মাহমুদ ভর্তি ছিলেন। তাদের সংবাদ সম্মেলন করে পরবর্তী কর্মসূচি ঘোষণার কথা ছিল৷ কিন্তু গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন হাসপাতালে তাদের সঙ্গে কাউকে দেখা করতে দেয়নি। এমনকি সাংবাদিকদেরও প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি৷ এর একদিন পরে গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন গত ২৬ জুলাই নাহিদ এবং আসিফ এবং আবু বাকের মজুমদারকে তুলে নিয়ে ডিবির হেফাজতে রাখেন। সেখানে প্রায় দুদিন আটক থাকাবস্থায় নিজেদের আন্দোলন থেকে সরিয়ে নেওয়ার এই ঘোষণা তারা দিলেন।

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

4h ago