‘আমি আর কাউকে কখনো তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে বলব না’

মেহেদী হাসান। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে চিকিৎসক-নার্সদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কেউই গণমাধ্যমকর্মীর সঙ্গে অন-রেকর্ড কথা বলতে চাইছেন না। যারা রেকর্ডের বাইরে কথা বলছেন তারাও শীতল কণ্ঠে, চাপাস্বরে এমনভাবে কথা বলছেন যেন কেউ তাদের দেখছে।

এই হাসপাতালের কেবিন নম্বর ২০৭/এ পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন আহত শিক্ষার্থীকে। হাসপাতাল কর্মীদের ওপর কঠোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, যেন তার সম্পর্কে কোনো তথ্য কাউকে না বলা হয়।

গত ১৯ জুলাই রাত ৯টা ৫০ মিনিটে মেহেদী হাসান জুম্মন (২৩) গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন।

চিকিত্সকরা বলছেন তার 'টিবিয়া-ফাইবুলা'তে ফ্রাকচার আছে। এর অর্থ তার পায়ের হাঁটুর নিচে একটি হাড়ে ফ্রাকচার হয়েছে।

অন্তত একটি গুলি তার ডান হাঁটুর কয়েক ইঞ্চি নিচে বিদ্ধ হয়েছে। অসহনীয় যন্ত্রণায় এখন হাসপাতালে কাতরাচ্ছেন তিনি।

পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মেহেদী স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষার্থী। সেদিন কোটা বিক্ষোভকে কেন্দ্র করে সহিংসতার সময় রামপুরা এলাকায় একটি ফুটপাথে দাঁড়িয়ে ছিলেন তিনি। বিকেল ৪টার দিকে বেটার লাইফ হাসপাতালের কাছে তাকে আঘাত করা হয়।

প্রথমে তাকে ওই এলাকার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল। পরে সেখান থেকে তাকে হলি ফ্যামিলিতে নিয়ে যাওয়া হয়।

গতকাল দুপুরে চারজন পুলিশ সদস্য মেহেদীর বিছানার চারপাশে পাহারায় থাকায় তার বিস্তারিত মেডিকেল রেকর্ড সংগ্রহ করা যায়নি।

তবে তার চিকিৎসার বিষয়ে পরিচিত হাসপাতালের পাঁচ চিকিৎসাকর্মী জানান, তিনি এখন বিপদমুক্ত। তবে ইনফেকশনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য ভারী ওষুধ দিতে হচ্ছে।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) উৎপল বড়ুয়া ডেইলি স্টারকে বলেন 'বিটিভি কেন্দ্রে হামলার ঘটনায় দায়ের করা একটি মামলাসহ দুটি মামলায় মেহেদীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।'

এ কারণে পুলিশ সদস্যরা তাকে সার্বক্ষণিক পাহারা দিচ্ছেন বলে জানান তিনি।

হাসপাতাল কর্মীরা জানান, মেহেদীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার পর থানায় নিয়ে যাওয়া হবে অথবা তাকে আদালতে হাজির করবে এমনটাই তারা পুলিশ সদস্যদের বলতে শুনেছেন।

আহত ছেলেকে নিয়ে এখনো ঘোরের মধ্যে আছেন মেহেদীর বাবা জামাল উদ্দিন।

তিনি ২৩ বছর ধরে একটি প্রাইভেট কোম্পানির অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করছেন।

জামাল উদ্দিন বলেন, ছেলের পড়াশোনার জন্য সারাজীবন ধরে কষ্ট করেছেন তিনি। বহু বছর ধরে, তার সহকর্মীরাও তাকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছিলেন।

নিজের পড়াশোনার খরচ জোগাতে এক বছর আগে এক বন্ধুর সঙ্গে মালিবাগে একটি জুতার দোকান খোলেন মেহেদী।

জামাল উদ্দিন বলেন, 'আমাকে গ্রেপ্তার করলে চাকরি চলে যাবে এই ভয়ে নিজের ছেলেকে দেখতে হাসপাতালে যেতে পারি না।'

নিজের সর্বস্ব দিয়ে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়েছেন এজন্য এখন নিজেকে দোষারোপ করছেন জামাল।

'আমি আর কাউকে কখনো বলব না তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে। কারণ সন্তান পড়াশোনা শিখে বড় হলে প্রতিবাদ করতে শেখে। আমার ছেলে যদি রিকশাচালক হতো, তাহলে সে কোটা আন্দোলনে যোগ দিত না। আজকে এই অবস্থায় হাসপাতালে থাকত না। আজ এই দুর্দশা দেখতে হত না,' কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

5G goes live, but with few phones to connect

Bangladesh’s long-awaited 5G rollout began this week, but a lack of compatible handsets means the next-generation network is unlikely to see mass adoption anytime soon.

3h ago