ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়: ৩ দিনে কত টাকা উঠল, বন্যাদুর্গত কয়টি এলাকায় বিতরণ চলছে

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মানুষের দেওয়া ত্রাণসামগ্রীর একাংশ। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এখন যেন শহরের 'ত্রাণকেন্দ্র'। বন্যার্তদের সহায়তায় শনিবার টানা তৃতীয় দিনের মতো গণত্রাণ সংগ্রহ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

শনিবার সকাল ৮টা থেকেই ত্রাণের সামগ্রী ও নগদ অর্থ দিতে সেখানে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আবু বাকের মজুমদার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পাঁচটি জেলায় প্রথম দিনই ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, আখাউড়া—এর সঙ্গে কসবাতেও ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়েছি আমরা। প্রতি ট্রাকে ২০ টনের মতো জিনিস পাঠানো হচ্ছে।'

বিভিন্ন জেলায় পাঠানোর জন্য নানান সামগ্রী দিয়ে প্যাকেট প্রস্তুত করছেন স্বেচ্ছাসেবকরা। ছবি: স্টার

তিনি বলেন, 'খাগড়াছড়িতে যেহেতু মহাসড়ক পার হয়ে ট্রাক যেতে পারছে না, তাই সেখানে আমরা টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। মূলত চট্টগ্রামে যে কমিটি কাজ করছে তাদেরকে আমরা টাকা পাঠিয়ে দিচ্ছি। চট্টগ্রাম থেকে ওরা প্রয়োজনীয় সামগ্রী কিনে দিয়ে দিচ্ছে। ফটিকছড়ির জন্যও আমরা টাকা পাঠিয়ে দিয়েছি, যাতে তারা নিজেদের মতো চট্টগ্রাম থেকে কিনে সেখানে নিয়ে যেতে পারে।'

সাধারণ মানুষ ও স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এই গণত্রাণ কর্মসূচিতে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে কাজ করছে বলে জানান তিনি।

বাকের বলেন, 'ত্রাণ সামগ্রী যেগুলো পাচ্ছি সেখানে দেখা যাচ্ছে কয়েকটা আইটেম বেশি, কয়েকটা আইটেম কম। যেটা কম সেটা আমরা কিনে নিচ্ছি। উদ্ধারকাজে আমাদের যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু সেনাবাহিনী জানিয়েছে যেহেতু আমাদের ভলান্টিয়াররা প্রশিক্ষিত নয়, তাই উদ্ধারকাজ তারা করতে পারবেন না। সে কারণে আমরা ত্রাণ সংগ্রহেই ফোকাস করেছি।'

প্রথমদিন ২৯ লাখ ৭৩ হাজার ১৭৩ টাকা, দ্বিতীয়দিন ১ কোটি ৪২ লাখ ৫০ হাজার ১৯৬ টাকা সংগ্রহ করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

শনিবার তৃতীয়দিনের মতো সকাল থেকে নগদ অর্থ সংগ্রহ হয়েছে। সমন্বয়ক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আশরেফা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'শনিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত নগদ অর্থ সংগ্রহ হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ৪৮ হাজার। এই অর্থ টিএসসিতে এসে মানুষ দিয়ে গেছে। এখনো গণনা চলছে। বিকাশ, নগদ, রকেটেও অনেকে অর্থ পাঠাচ্ছেন।'

এই অর্থ ত্রাণসামগ্রী পাঠানোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্তদের পুর্নবাসনের জন্যও ব্যয় করা হবে বলে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আশরেফা ও আবু বাকের মজুমদার।

তারা আরও জানান, সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণে রোববার থেকে বন্যা কবলিত এলাকায় গণ-রান্না কর্মসূচির পরিকল্পনা চলছে। শুকনা খাবারের পাশাপাশি চাল, ডাল, তেল, আলু, পেয়াজ, মরিচ, লবণসহ প্রয়োজনীয় মসলা ত্রাণ হিসেবে দেওয়ার জন্য সাধারণ জনগণের প্রতি আহ্বান জানান তারা। জেলা প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয় করে ত্রাণ কার্যক্রম ও গণ-রান্না কর্মসূচি চলবে বলে জানিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।

একজন স্বেচ্ছাসেবক লুৎফর রহমান জানান, তিন দিনে সারা দেশে প্রায় ৫০টি ট্রাকে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে। ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী ছাড়াও ত্রাণের ট্রাক পাঠানো হয়েছে হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজারেও।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই উদ্যোগের পাশাপাশি বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য 'ক্রাউড ফান্ডিং' করতে গতকাল রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে৷ 'ভারতের পানি আগ্রাসনে আক্রান্তদের জন্য জরুরি সংযোগ' শীর্ষক এই কনসার্টে বন্যায় আক্রান্তদের জন্য গণঅর্থ, পানি বিশুদ্ধকারী ট্যাবলেট, প্রয়োজনীয় ওষুধ, শুকনা খাবারসহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী জোগাড় করা হয়৷

ত্রাণসামগ্রী রাখা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ ভবনের নিচতলায়৷

জানতে চাইলে অ্যাক্টিভিস্ট মার্জিয়া প্রভা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মূলত বামপন্থী ছাত্র সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও শিল্পীরা মিলে এটা আয়োজন করে। কনসার্টে শিরোনামহীন, সায়ানসহ ৩০টির মতো ব্যান্ড ও শিল্পী গান পরিবেশন করেন। আয়োজনে র‍্যাপ সংগীত, ব্যান্ড সংগীত ও কাওয়ালি গানের সংমিশ্রণ ছিল। আমাদের পূর্ব পরিকল্পনা ছিল, যেসব কালাকানুন ও নিবর্তনমূলক আইন রয়েছে সেগুলো যেন হাসিনা সরকারের পতনের পর এই আমলে আর না থাকে এই দাবিতে গণসংযোগ করা। পরে বন্যা পরিস্থিতির মধ্যে আমরা ভারতের পানি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে কনসার্ট করলাম।'

শুক্রবার 'জরুরি সংযোগ' কনসার্ট থেকে অর্থ সংগ্রহ হয়েছে ২১ লাখ ৪১ হাজার ২০০ টাকা। পাশাপাশি বন্যা কবলিত এলাকার জন্য প্রায় ২০ ট্রাক পরিমাণ ত্রাণ সংগ্রহ করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

মার্জিয়া আরও বলেন, 'আমরা প্রচুর ত্রাণসামগ্রী পাচ্ছি। বিকেল পর্যন্ত ২৭ হাজার ৩০০ টাকা নগদ টাকা আমদের এখানে দিয়ে গেছে। ভলান্টরিয়াররা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে ঘুরে টাকা তুলছেন।'

'রাতের মধ্যে পাঁচ জায়গায় ত্রাণ নিয়ে ট্রাক রওনা হবে। পাহাড়ে আমাদের যারা বন্ধু আছে তাদেরকে আমরা টাকা পাচ্ছি। তারা সেখানে কাজ করছে,' বলেন তিনি।

এই দুই উদ্যোগের বাইরেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ ও হলের শিক্ষার্থীরা নিজেদের মতো করে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে ত্রাণ ও অর্থ সংগ্রহে নেমেছেন৷

Comments

The Daily Star  | English
July Declaration: Where is the roadmap for our future journey?

July Declaration: Where is the roadmap for our future journey?

Denigration of our Liberation War will never be acceptable

10h ago