‘চারদিন ধরে এক কাপড়ে আছি’

রোকেয়া বেগম। ছবি: স্টার

'চোখের সামনে দ্রুত পানি ঢোকা শুরু করল। ভাবলাম থাকতে পারব। কিন্তু পানির তোড়ে সব ফেলে আসতে হয়েছে। কিছুই আনতে পারিনি। আজকে চারদিন এক কাপড়ে আছি। বাড়িঘর সব পানির নিচে এখনো। জানি না আবার কীভাবে কী শুরু করব।'

দ্য ডেইলি স্টারকে কথাগুলো বলছিলেন ১০০ বছর বয়সী রোকেয়া বেগম।

চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার তিন নম্বর জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের তাজপুর অলি আহমদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি। সঙ্গে তার মেয়েও আছেন। তার মতো আশেপাশের গ্রামগুলো থেকে জীবন বাঁচাতে এখানে এসেছেন প্রায় ৪০০ জন।

রোকেয়া বলেন, 'আমার ছেলে আর মেয়ে মিলে নৌকা করে এখানে নিয়ে এসেছে। চোখের সামনে দেখলাম, পুরো গ্রামে শুধু পানি আর পানি।'

আরেক ভুক্তভোগী মনা ধর বলেন, 'আমার নাতি রবিউল আর ছেলে মিলে আমাকে এখানে এনেছে নৌকায় করে। বাড়িতে কী অবস্থা জানি না। বাড়ির জন্য মন কাঁদছে। এত পানি আমি এখানে এর আগে দেখেছি কবে, তা জানি না।'

৯০ বছর বয়সী জিরা ধন বসে ছিলেন বেঞ্চের ওপর। জানান, তার বাড়ি তিন নম্বর ওয়ার্ডে। সেখানে আছেন তার ছেলে ফজলুল করিম। আর তিনি আশ্রয়কেন্দ্রে। তাদের গ্রামে এখনো অনেকে পানিবন্দি অবস্থায় আছেন।

চারদিন পর রোববার ফেনী সংলগ্ন মিরসরাই উপজেলা থেকে বন্যার পানি নামা শুরু করেছে। চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলা এবং ফেনীকে আলাদা করেছে ফেনী নদী। মিরসরাইয়ের অধিকাংশ এলাকাই পানির নিচে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক এবং কীভাবে ঘুরে দাঁড়াবে, সেই চিন্তায় দিন পার করছেন সেখানকার মানুষ। অনেকের শেষ সম্বলটুকুও এই বন্যায় হারিয়ে গেছে।

করেরহাট ইউনিয়নের পশ্চিম জোয়ার গ্রামের বাসিন্দা ওমর ফারুক ইমন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'গ্রাম থেকে পানি কমা শুরু হয়েছে। তবে বাড়িঘরে ফেরত যাওয়ার মতো অবস্থা এখনো হয়নি। উঠানে এখনো পানি আছে। আশপাশের কাঁচা ও আধাকাঁচাঘর ভেঙে পড়েছে। গ্রামের ভেতরে সুপেয় পানি ও টয়লেটের সমস্যা। সব থেকে বেশি সমস্যায় আছেন রোগী, নারী ও শিশুরা।'

মিরসরাইতে স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে ত্রাণ নিয়ে গিয়েছিলেন বোয়ালখালীর বাসিন্দা ও বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের এম্পেয়ার সাদ্দাম হোসেন। তিনি বলেন, 'এখনো নৌকার সমস্যার কারণে বেশি ভেতরে ত্রাণ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। অনেকে ত্রাণ নিয়ে এলেও নৌকা যেতে না চাওয়ায় ঝামেলা হচ্ছে। সেনাবাহিনী ও পুলিশ আমাদের মতো স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে কাজ করছেন।'

'অনেকে রান্না করা ও শুকনো খাবার দিচ্ছেন। তবে বন্যার পানি নেমে গেলে কীভাবে-কোথায় থাকবেন, সেই দুশ্চিন্তায় আছেন অনেকে', বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, 'আমরা পশ্চিম জোয়ার ক্রীড়া সংস্থার সাহায্যে এখন পর্যন্ত ২৫০ জনের অধিককে রান্না করা ও শুকনো খাবার দিয়েছি। বন্যার শুরুতে আমরা রান্না করা খাবার সরবরাহ করেছি।'

মিরসরাইয়ের মিঠানালা, হিংগুলী, সদর, বারইয়ার হাটসহ আশপাশের এলাকা ডুবেছে বন্যার পানিতে। উপজেলা প্রশাসনের তথ্যমতে উপজেলার বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ১২ হাজারের মতো মানুষ।

Comments

The Daily Star  | English

Anatomy of BGB shootings in Rampura

It was 6:14pm on Friday, July 19, 2024. Two Border Guard Bangladesh (BGB) personnel were advancing into Banasree G Block in Dhaka.

1d ago