কোথায় আছেন শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনা। ছবি: রয়টার্স

গণঅভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে ভারতে যাওয়া শেখ হাসিনা ঠিক কোথায় অবস্থান করছেন, সেটা প্রায় সবারই আলোচনার বিষয়।

বুধবার ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসে জন রিডের মতামতে উঠে এসেছে এ বিষয়টি।

গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশের একটি সামরিক উড়োজাহাজে করে ভারতের গাজিয়াবাদের কাছে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি ঘাঁটিতে যান হাসিনা।

নরেন্দ্র মোদির সরকার এরপর থেকেই নিশ্চিত করে আসছে যে হাসিনা ভারতেই আছেন। তবে, ভারতের ঠিক কোন জায়গায় আছেন এমন কোনো তথ্য জানাতে তারা অস্বীকৃতি জানিয়ে আসছে।

নানা আলোচনায় উঠে এসেছে, হাসিনা ভারত সরকারের একটি নিরাপদ আবাসে আছেন; গত ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দিল্লিভিত্তিক আঞ্চলিক পরিচালকের দায়িত্ব নেওয়া মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের সঙ্গে আছেন; তাকে ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লির পার্ক লোধি গার্ডেনে দেখা গেছে।

মতামতে রিড আরও লিখেছেন, হাসিনার দল আওয়ামী লীগ যখন বাংলাদেশের ক্ষমতায়, তখন তার প্রধান বিদেশি সমর্থক ছিল মোদি সরকার। তার অবস্থানের বিষয়ে মোদি সরকার নীরবতা বজায় রেখে চলছে। দিল্লির দেশি-বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলোর বেশির ভাগই এমনটা ভাবা বন্ধ করে দিয়েছে যে তারা হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার প্রথম সাক্ষাৎকারটি পাবে।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর আন্দোলনকালে শত শত হত্যার জন্য হাসিনাকে দায়ী করেছে। ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি প্রত্যর্পণ চুক্তি রয়েছে—২০১৩ সালে হাসিনার সরকার যে চুক্তিটি করে—বাংলাদেশের নতুন সরকার তাকে গ্রেপ্তার করতে চাইলে এই চুক্তি ব্যবহার করতে পারে।

সম্প্রতি হাসিনার উদ্ধৃতি হিসেবে উল্লেখ করা বিতর্কিত মন্তব্যের ভিত্তিতে গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনের পর ড. ইউনূস নিজেই বলেছেন, 'বাংলাদেশ ফেরত না চাওয়া পর্যন্ত ভারত যদি তাকে রাখতে চায়, তাহলে তাকে চুপ থাকতে হবে।'

রিড বলেছেন, নিজ দেশ থেকে পালানো আঞ্চলিক নেতাদের আশ্রয় দেওয়ার ইতিহাস রয়েছে ভারতের।

তিনি উল্লেখ করেছেন, চীনা অভিযানের মুখে ১৯৫৯ সালে পালিয়ে ভারতে এসে থাকতে শুরু করেন তিব্বতের আধ্যাত্মিক নেতা দালাই লামা। আফগান নেতা মোহাম্মদ নাজিবুল্লাহর পরিবার ১৯৯২ সালে ভারতে পালিয়ে যায়। সেখানে তার স্ত্রী ফাতানা নাজিব ও সন্তানেরা এখনো বেশির ভাগ সময় কাটান বলে জানা যায়। ১৯৭৫ সালে শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যকে হত্যা করার পর হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানা বেশ কয়েক বছর ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

মতামতে রিড লিখেছেন, ভারতের রাজনৈতিক অঙ্গনে হাসিনার ব্যাপক সমর্থন রয়েছে, কেননা সেখানে তাকে ইসলামপন্থী চরমপন্থার বিরুদ্ধে একটি প্রাচীর হিসেবে দেখা হয় এবং ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে তার প্রয়াত পিতার অগ্রণী ভূমিকাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হয়।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভারতে হাসিনার অবস্থানের যে সংবেদনশীলতা, তার অর্থ হলো, আপাতত তাকে সতর্কতা ও নিরাপত্তার চাদরে ঘিরে রাখা হবে এবং সেটা নয়াদিল্লির পরিকল্পনাতেই।

ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব শিবশঙ্কর মেনন যেমনটা বলেছেন, 'এগুলো ঘনিষ্ঠতার সমস্যা। আর যখন আমাদের প্রতিবেশীদের প্রসঙ্গ আসে, তখন বিষয়গুলো সংবেদনশীল হয়। আমরা বিশ্বের অন্য প্রান্তের দেশগুলোর সঙ্গে যেভাবে কাজ করি, এটা তেমন নয়।'

 

Comments

The Daily Star  | English

7 colleges to continue operating under UGC until new university formed

Prof AKM Elias, principal of Dhaka College, to be appointed as the administrator

4h ago