শেখ হাসিনার হলফনামায় ‘মিথ্যা তথ্য’, আইনি ব্যবস্থা চেয়ে ইসিতে চিঠি

২০০৮ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে জমা দেওয়া হলফনামায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিথ্যা তথ্য দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছে দুদক।
এ অভিযোগে আইনি ব্যবস্থা নিতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আব্দুল মোমেন এ কথা জানান।
তিনি বলেন, 'ইসিতে জমা দেওয়া হাসিনার হলফনামায় উল্লেখ করা সম্পদ এবং দুদকের যাচাই করা প্রকৃত সম্পদের তথ্যের মধ্যে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে।'
'বিষয়টির দুটি অংশ রয়েছে। প্রথমত, ইসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, তার হলফনামা ও দুদকে জমা দেওয়া সম্পদের তথ্যের মধ্যে অসঙ্গতির বিষয়টি আমরা যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করে পৃথকভাবে মোকাবিলা করব। এতে কিছুটা সময় লাগবে,' বলেন দুদক চেয়ারম্যান।
দুদক জানিয়েছে, ২০০৭ সালে একটি তদন্তের সময় শেখ হাসিনা দুদকে একটি সম্পদ বিবরণী জমা দিয়েছিলেন। সেই বিবরণী ও নবম জাতীয় নির্বাচনের আগে ২০০৮ সালের ১৯ নভেম্বর ইসির কাছে জমা দেওয়া হলফনামা পর্যালোচনা করা হয়।
পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ইসিতে দেওয়া হলফনামায় শেখ হাসিনা ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের সাড়ে ৬ একর কৃষিজমির কথা জানিয়েছিলেন।
কিন্তু দুদক দেখেছে যে, সে সময় তার মালিকানায় প্রকৃতপক্ষে ছিল ২৮ দশমিক ৪১১ একর জমি, যার মূল্য ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকা।
অর্থাৎ, শেখ হাসিনা হলফনামায় ২১ দশমিক ৯১ একর জমি বা ৩১ লাখ টাকার বেশি সম্পদের তথ্য গোপন করেছিলেন।
দুদক চেয়ারম্যান আরও জানান, শেখ হাসিনা তৎকালীন মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য ড. মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানি কোটা ব্যবহার করে ২ লাখ ৩০ হাজার ইউরো মূল্যের একটি মার্সিডিজ-বেঞ্জ গাড়ি আমদানি করেছিলেন।
গাড়িটি তার সুধাসদনের বাসভবনের ঠিকানায় নিবন্ধিত ছিল এবং তিনি গাড়িটি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করেন।
চেয়ারম্যান আব্দুল মোমেনের দাবি, সাবেক এমপি সিরাজুল আকবর ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে তার আয়কর রিটার্নে বা ইসির হলফনামায় গাড়িটির কথা উল্লেখ করেননি এবং কখনো গাড়িটি ব্যবহার করেছেন বলে জানা যায়নি।
দুদক চেয়ারম্যান বলেন, 'হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দেওয়ার জন্য কমিশন আরপিও অনুযায়ী আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইসির কাছে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠিও পাঠানো হয়েছে।'
বিষয়টি কোনোভাবেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ন্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'এখানে কোনো রাজনৈতিক এজেন্ডা নেই। ইসির কাছে জমা দেওয়া হলফনামা এবং দুদকের কাছে দেওয়া তথ্যের মধ্যে মিল নেই। আমি গত ছয় মাস ধরে এই পদে আছি এবং এখন পর্যন্ত কোনো রাজনৈতিক চাপের সম্মুখীন হইনি।'
গত ১৮ মে দুদক হাসিনার অবৈধ সম্পদের বিষয়ে নতুন করে তদন্ত শুরু করে। দুদক উপপরিচালক মাসুদুর রহমানের নেতৃত্বে একটি দল এ তদন্ত পরিচালনা করছে।
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে প্লট জালিয়াতি, অর্থপাচার ও প্রকল্পের তহবিল আত্মসাৎ সম্পর্কিত একাধিক অভিযোগে দুদকের চলমান তদন্তের মধ্যে নতুন এ তথ্য এলো।
উল্লেখ্য, পূর্বাচলে প্লট জালিয়াতির মামলায় দুদক ইতোমধ্যে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে এবং আদালত হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাও জারি করেছে।
Comments