অবসরের ঘোষণা দিলেন সাকিব

বাংলাদেশের ইতিহাসের সফলতম ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান অবসরের ঘোষণা দিয়েছেন। গত জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই খেলেছেন নিজের শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগামী অক্টোবরে ঘরের মাঠে সিরিজ দিয়ে অবসর নিবেন টেস্ট থেকে। তবে ওয়ানডে খেলতে চান আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি-মার্চে অনুষ্ঠেয় চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত।

বৃহস্পতিবার কানপুর টেস্টের আগের দিন নিজের এই সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমে জানিয়েছেন সাকিব। সংবাদ সম্মেলনে সাকিব টেস্ট থেকে সরে যাওয়া নিয়ে বলেন, 'দেখুন, এখন পর্যন্ত আমি তো অ্যাভাইলেবল। দেশে যেহেতু অনেক পরিস্থিতি আছে, স্বাভাবিকভাবেই সবকিছু অবশ্যই আমার ওপরে না। আমি বিসিবির সঙ্গে এসব নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদেরকে বলা হয়েছে, আমার কী পরিকল্পনা টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে। এই সিরিজ আর ঘরের মাঠের সিরিজটা আমি অনুভব করেছি যে, আমার শেষ সিরিজ হবে টেস্ট ক্রিকেটে।'

৩৭ বছর বয়সী তারকা অলরাউন্ডার যোগ করেন, 'এভাবেই ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে ও বোর্ডের নির্বাচকদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। যদি সুযোগ থাকে, আমি যদি দেশে গিয়ে খেলতে পারি, তাহলে মিরপুর টেস্ট হবে আমার জন্য শেষ। সেই কথাটা বোর্ডের সবার সঙ্গে বলা হয়েছে। তারা এই বিষয়টা জানে। চেষ্টা করছেন কীভাবে সুন্দরভাবে এটা আয়োজন করা যায়, যাতে আমি খেলতেও পারি, নিরাপদও বোধ করি। যখন দেশের বাইরে আসার দরকার হবে, দেশের বাইরে আসতেও যেন আমার কোনো সমস্যা না হয়। বোর্ড খেয়াল করছে। বিষয়গুলোর সঙ্গে যারা জড়িত তারা দেখছেন। তারা হয়তো আমাকে একটা সিদ্ধান্ত দেবেন, যেটার ভিত্তিতে আমি দেশে গিয়ে খুব ভালোভাবে খেলে অন্তত টেস্ট ফরম্যাটটা ছাড়তে পারব।'

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলার সুযোগ না হলে কানপুর টেস্টই হবে তার শেষ, 'এটা আমার ইচ্ছা। যদি সেটা করা সম্ভব না হয় তাহলে এটাই (কানপুর টেস্ট) সম্ভবত হবে আমার শেষ টেস্ট।'

গত জুনে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সুপার এইটের ম্যাচটি হয়ে থাকছে সাকিবের শেষ টি-টোয়েন্টি, 'অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলে ফেলতে চাই, টি-টোয়েন্টি নিয়েও আমার কথা হয়েছে। বোর্ডের সবার সঙ্গে, নির্বাচকদের সঙ্গে, সভাপতির সঙ্গে, টি-টোয়েন্টি থেকেও আমি সরে যাব। আপাতত পরের যে সিরিজগুলো আছে, নতুন খেলোয়াড় আসুক, তাদেরকে সুযোগ দেওয়া হোক।'

তিনি আরও বলেন, 'আমার তো মনে হয়, শেষ (টি-টোয়েন্টি) ম্যাচ খেলে ফেলেছি বিশ্বকাপে।'

পরবর্তীতে দলের প্রয়োজনে টি-টোয়েন্টিতে ফেরার রাস্তা খোলা রাখলেও আপাতত এই সংস্করণে নিজেকে দেখছেন না তিনি, 'আমি ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগগুলো খেলতে থাকি। ছয় মাস-এক বছর পরে যদি বিসিবি মনে করে, আমার টি-টোয়েন্টিতে অবদান রাখার সুযোগ আছে, আমি পারফর্ম করছি এবং ফিট আছি, তখন আমরা নতুন সিদ্ধান্ত নিতে পারি। কিন্তু এই মুহূর্তে, নিজেকে টি-টোয়েন্টিতে দেখছি না। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আমার ইচ্ছা আছে, টেস্টে শেষ সিরিজ হওয়ার। মোটামুটি বলতে পারেন, আমি অন্তুত দুটি সংস্করণে আমি আমার শেষটা দেখছি।'

ওয়ানডে ক্রিকেট নিয়েও সাকিব তার পরিকল্পনা জানিয়েছেন। আগামী চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি খেলে ৫০ ওভারের ক্রিকেট ছাড়তে চান তিনি, 'আমি তা-ই আশা করি। তো আর হয়তো ৯টা ওয়ানডে।'

সম্প্রতি তার চোট ও পারফরম্যান্স নিয়ে নানামুখী প্রশ্ন উঠছিল। সেই সঙ্গে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনে কোণঠাসা অবস্থায় আছেন তিনি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত নির্বাচনে সংসদ সদস্য হওয়া সাকিবকে একটি হত্যা মামলাতেও আসামী করা হয়েছে। এছাড়া, শেয়ারবাজার কারসাজির অভিযোগে তাকে সম্প্রতি ৫০ লাখ টাকা জরিমানাও করা হয়েছে।

২০০৬ সালের ৬ অগাস্ট ওয়ানডে দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন সাকিব। এখন পর্যন্ত খেলেছেন ২৪৭ ম্যাচ। ৩৭.২৯ গড়ে দেশের পক্ষে তৃতীয় সর্বোচ্চ ৭৫৭০ রানের পাশাপাশি ২৯.৫২ গড়ে সর্বোচ্চ ৩১৭ উইকেট নিয়েছেন তিনি। নয়টি সেঞ্চুরি সঙ্গে ৫৬টি হাফসেঞ্চুরি আছে তার। ৫ উইকেট নিয়েছেন চারবার। ওই বছরের ২৮ নভেম্বর খুলনায় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে টি-টোয়েন্টিতে অভিষেক হয় তার। প্রায় ১৮ বছরের ক্যারিয়ারে তিনি ১২৯ ম্যাচ খেলেছেন এই সংস্করণে। বাংলাদেশের পক্ষে টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ রান (২৫৫১) ও উইকেটের (১৪৯) মালিক তিনি।

২০০৭ সালে ভারতের বিপক্ষে ১৮ মে টেস্ট অভিষেক হয় বাঁহাতি অলরাউন্ডার সাকিবের। এখন পর্যন্ত ৭০ টেস্ট খেলে ৩৮.৩৩ গড়ে তার রান ৪৬০০। সেঞ্চুরি আছে পাঁচটি, ফিফটি ৩১টি। বাংলাদেশের হয়ে টেস্টে তৃতীয় সর্বোচ্চ রান করা সাকিব বল হাতে নিয়েছেন সর্বোচ্চ ২৪২ উইকেট। ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন ১৯ বার। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির মতো টেস্টেও তিনি দেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি।

Comments

The Daily Star  | English

JnU protests called off

Students and teachers of Jagannath University called off their protest last night after receiving assurances from the government that their demands would be met.

4h ago