সাঙ্গু নদীর পাড়ে পাহাড় ধস, পাথরের কারণে নৌ-চলাচলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি

সাঙ্গু নদীর পাশের পাহাড় ধসে পাথর ভেঙে পড়ায় নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ছবি: স্টার

বান্দরবানের দুর্গম থানচি উপজেলায় সাঙ্গু নদীর পাড়ের পাহাড় ধসে নদীর গতিপথে বাধা তৈরি হয়েছে। এতে নদীতে স্বাভাবিক নৌ-চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। 

প্রবল স্রোতে পাথরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে নৌকা ভেঙে গিয়ে যাতায়াতে দুর্ভোগে পড়ছেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বান্দরবানে থানচি উপজেলার তিন্দু ও রেমাক্রি ইউনিয়নের প্রায় ৯০ ভাগ বাসিন্দা যোগাযোগের ক্ষেত্রে সাঙ্গু নদীর ওপর নির্ভরশীল।

এলাকায় আগের মতো জুমে ধান ও ফসল ভালো না হওয়ায় সেখানকার মানুষের জীবন-জীবিকা থেকে শুরু করে সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য নির্ভর করে এই নদীর ওপর। এ কারণে সাঙ্গু নদী ও পর্যটনের ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়া মানে সেখানকার অধিকাংশ মানুষের জীবন-জীবিকা হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়ে।

সাঙ্গু নদীর পাশের পাহাড় ধসে পাথর ভেঙে পড়ায় নৌ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ছবি: স্টার

এ বছর আগস্টের শেষে ভারী বর্ষণের কারণে সাঙ্গু নদীর উপরের অংশে রেমাক্রি ইউনিয়নে ছোট মোদক ও বড় মোদকের মাঝখানে (তুরগুয়া স্রং) জলস্রোতের পাশে পাহাড় ধসে বড় বড় পাথর নদীতে এসে পড়ে।  এতে নদীতে নৌ চলাচলে বাধা তৈরি হয়।

সম্প্রতি সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সাঙ্গু নদীর উজানের বড় মোদক কিংবা আরও ভেতর থেকে আসা যাত্রীবাহী ও মালবাহী নৌকাগুলো পাহাড়ধসের অংশের কাছাকাছি এসে এসে থেমে যাচ্ছে। সেখানে যাত্রীদের নামিয়ে দিয়ে মালামাল কাঁধে নিয়ে নদীর ওই অংশ পার করা হচ্ছে।

বড় মোদক বাজারের ব্যবসায়ী অংশৈম্যা মারমা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন,  'এ বছর আগস্টের মাঝামাঝি টানা কয়েকদিন ভারী বৃষ্টি হয়। তখন পাহাড় থেকে বড় বড় পাথর ধসে নদীতে পড়ে।  বৃষ্টি কমে যাওয়ার পর নদীতে পানিও কমে যায়। পানি কমে যাওয়ার পর দেখা যায়, নদীতে অনেক বড় বড় পাথরের স্তূপ। পাহাড় ধসে পাথরগুলো ভেঙে এসে নদীর মূল স্রোতে আটকা পড়েছে। পাথরের কারণে স্রোতও বেড়ে গেছে। এতে নৌ চলাচলে বিপত্তি তৈরি হয়েছে।'

'পাথর পড়ার প্রথম কয়েকদিন নদীর গতিপথ না বোঝার কাড়নে পাথরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে অনেক নৌকা দুর্ঘটনায় পড়েছে। নৌকা ভেঙে অনেক নৌকা ও ইঞ্জিন পানিতে ডুবে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে,' বলেন তিনি।

'এর পর থেকে সতর্কতা জারি করা হয়' উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'পড়ে নদীর উজান থেকে আসা নৌকাগুলো পাহাড় ধসের এলাকায় দূরত্ব রেখে যাত্রী ও মালামাল খালি করে। শুধু খালি নৌকার ইঞ্জিন বন্ধ করে ৪-৫ জনের সাহায্য নিয়ে স্রোতের ওই অংশ পার করাতে হয়। বিপরীত দিক থেকে অর্থাৎ থানচি বা রেমাক্রি বাজার থেকে আসা প্রতিটি নৌকা ও যাত্রীদের এভাবেই চলাচল করতে হয়।'

ম্রগংপাড়ার নৌকাচালক চ প্রুঅং মারমা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'জন্মের পর থেকেই এই নদীর সঙ্গে আমাদের সখ্যতা। গত ছয় বছর ধরে নদীতে নৌকা চালাচ্ছি। এই বর্ষায় পাহাড় ধসের পর স্রোত বিপদজনক হয়ে গেছে।'

'পানি কমে গেলে সরকার যদি পাথরগুলো সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করে, তাহলে নৌকার ওপর নির্ভরশীল মাঝি ও স্থানীয় এলাকাবাসীর উপকার হবে,' বলেন তিনি।

আরেক নৌকাচালক শৈ হ্লামং মারমা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা প্রায় ৩০-৪০টি পরিবার নৌকা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করি। সাঙ্গু নদীই আমাদের একমাত্র পথ। এবারের বন্যায় পাহাড় ধসে বড় বড় পাথর নদীতে পড়ে যায়। এরপর তীব্র স্রোতের কারণে আমাদের অনেকের নৌকা ভেঙে গেছে। আমারও ইঞ্জিনের ৬টি পাখা ভেঙেছে। প্রতিটি পাখার দাম ৭০০-৮০০ টাকা।'

তিনি জানান, নতুন ইঞ্জিন ও একটা নৌকার দাম ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। নৌকা ভেঙে যাওয়ায় অনেকের আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে গেছে।

যোগাযোগ করা হলে বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'আমরা নদীর ভাঙনরোধে কাজ করছি। সাঙ্গু ও মাতামুহুরী নদীর নাব্যতা দূর করতে নদী দুটির বিশেষ বিশেষ এলাকায় খননের প্রকল্প হাতে নিয়েছি এবং ভাঙনরোধে বাঁধ নির্মাণের কাজও নিয়েছি। কিন্তু থানচিতে আমাদের কোনো অফিস  নেই। তাই ওই এলাকায় কোনো প্রকল্প নেই। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করব।'

সাঙ্গু নদীর উজানে দুর্গম এলাকায় নদীতে পাথর ধসের কারণে নৌ চলাচল বিঘ্নের বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক শাহ্ মুজাহিদ উদ্দিন বলেন, 'এমন ঘটনার কথা শুনিনি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। যা বুঝলাম, সেখানকার মানুষরা কঠিন পরিস্থিতিতে আছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'সবার সুবিধার কথা মাথায় রেখে সবার মতামতের ভিত্তিতে পাথরগুলোকে না ভেঙে সরানো যেতে পারে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।'


                                       
 

Comments

The Daily Star  | English
UN funding crisis

UN eyes major overhaul amid funding crisis, internal memo shows

It terms "suggestions" that would consolidate dozens of UN agencies into four primary departments: peace and security, humanitarian affairs, sustainable development, and human rights.

3h ago