ব্যারিকেড ভেঙে বঙ্গভবনে ঢোকার চেষ্টা বিক্ষোভকারীদের, উত্তেজনা

সেখানে উপস্থিত সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেয়।
ব্যারিকেড ঠেলে বঙ্গভবনে প্রবেশের চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। ছবি: স্টার

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবনের সামনের নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টারত বিক্ষোভকারীদের বাধা দিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আজ মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে একদল বিক্ষোভকারীকে বঙ্গভবনের সামনে পুলিশের ব্যারিকেড অতিক্রম করতে দেখা যায়।

সেখানে উপস্থিত সেনাবাহিনী ও পুলিশ সদস্যরা তাদের বাধা দেয়।

ব্যারিকেড ঠেলে বঙ্গভবনে প্রবেশের চেষ্টা করে বিক্ষোভকারীরা। ছবি: স্টার

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে এবং টিয়ারগ্যাস ছোড়ে। এতে অন্তত একজন বিক্ষোভকারী আহত হয়েছে।

একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা বঙ্গভবনের ভেতরে চলে যায় এবং বাইরে সেনাসদস্যরা বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে কথা বলেন।

রাত সাড়ে ৯টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভকারীরা সেখানে অবস্থান করছিল। একপর্যায়ে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনাও ঘটে।

রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বঙ্গভবন সংলগ্ন গুলিস্তানে দিনের বেলা সড়ক অবরোধ করে একদল বিক্ষোভকারী।

বিকেলে ইনকিলাব মঞ্চের ব্যানারে বিক্ষোভকারীরা প্রথমে শাহবাগ এলাকায় জড়ো হয়। পরে তারা মিছিল নিয়ে বঙ্গভবনের দিকে এগিয়ে যায়।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পদত্যাগপত্র নিয়ে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিনের দেওয়া বক্তব্য 'স্ববিরোধী' উল্লেখ করে তারা তার পদত্যাগ দাবি করেন।

এদিকে বঙ্গভবনের সামনে আহত পাঁচজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

তারা হলেন, শ্যামপুর বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী ফয়সাল আহমেদ বিশাল (২৪), কুমিল্লার ভিক্টরিয়া কলেজের শিক্ষার্থী আরিফ খান (২০), পেশায় হকার শফিকুল ইসলাম (৪৫), অনলাইন নিউজ পোর্টাল বার্তার স্টাফ রিপোর্টার রাজু আহমেদ (২৫) ও ভিডিও জার্নালিস্ট রিপন রেজা (২৮)।

রাজু আহমেদ বলেন, বঙ্গভবনের সামনে রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ দাবিতে বিক্ষোভ চলছিল। বিক্ষোভকারীরা ব্যারিকেড ভেঙে ভেতরে ঢোকার চেষ্টা করে। সে সময় একটি সাউন্ড গ্রেনেড বিস্ফোরিত হয়।

চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক জানান, বঙ্গভবনের সামনে থেকে পাঁচজন আহত হয়ে হাসপাতালে এসেছিল। তাদের মধ্যে তিনজনের পায়ে আঘাত রয়েছে। গ্রেনেডের শব্দে দুইজন কানে আঘাত পেয়েছেন। জরুরি বিভাগ থেকে তারা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ফিরে গেছেন।

ছবি: প্রবীর দাশ/স্টার

বঙ্গভবনের সামনে উপস্থিত হয়ে বিক্ষোভকারীদের ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম।

হাসনাত বলেন, 'বৃহস্পতিবারের মধ্যে সেনাপ্রধানকে সঙ্গে নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে সবার মতামতের ভিত্তিতে এমন একজন রাষ্ট্রপতি আমরা পছন্দ করব, যাকে নিয়ে কোনো বিতর্ক থাকবে না।'

রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ প্রসঙ্গে সারজিস আলম বলেন, 'রাষ্ট্রপতির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে কাউকে বসানোর জন্য আমাদের সবার সঙ্গে কথা বলতে হবে। এখানে কৌশলের কাছে না জিতে আমরা যদি আবেগের কাছে হেরে যাই, তাহলে দীর্ঘ মেয়াদের আমাদের এবং দেশের ক্ষতি হবে।'

তিনি বলেন, 'আমাদের মধ্যে হয়তো দুচারজন ফ্যাসিস্টের দোসর হিসেবে উসকানি দিতে পারে। তাদের উদ্দেশ্য হলো দেশকে অস্থিতিশীল দেখানো। এই সুযোগ নিয়ে ফ্যাসিস্টরা কিন্তু ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে উঁকি দিতে শুরু করে দিয়েছে। আমাদের চিন্তার পার্থক্য নিয়ে তারা কিন্তু রাজপথে এসেও উঁকি দিতে শুরু করতে পারে।'

'আমরা দুইদিন সময় নিয়েছি, আগামীকাল ও পরশু। সব কিছু ভেবেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে,' বলেন তিনি।

উপস্থিত বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে সারজিস বলেন, 'আমরা কথা দিচ্ছি, যৌক্তিক সিদ্ধান্ত যদি আমরা কাঙ্ক্ষিত দিনের মধ্যে না পাই, আপনাদের সামনে রেখে, আমরা পেছনে দাঁড়িয়ে আবার রাজপথে নামব।'

গণমাধ্যমকর্মীদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'যারা গুলি চালিয়ে আমার ভাইদের হত্যা করেছে, তাদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত নতুন সরকারের কথা আমাদের চিন্তা করা উচিত না। খুনের বিচার হতে হবে।'

সবাইকে শান্তিপূর্ণভাবে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কারও চিন্তা বা শব্দ চয়নে ফ্যাসিস্টদের দালালি বা দোসরের চিহ্ন পাওয়া যায়, মনে রাখবেন, এই বাংলাদেশ আপনার জন্য জাহান্নাম হয়ে যাবে।

Comments

The Daily Star  | English
protesters attempt to break Bangabhaban barricade

Protesters clash with law enforcers in front of Bangabhaban; 5 hurt as police detonate stun grenade

A group of protesters attempted to break through the security barricade in front of Bangabhaban around 8:30pm

5h ago