‘ট্রাম্প-ট্যারিফে’ টালমাটাল হবে বিশ্ববাণিজ্য?

ডোনাল্ড ট্রাম্প
ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্স ফাইল ফটো

'আমার দৃষ্টিতে, অভিধানে সবচেয়ে সুন্দর শব্দ হচ্ছে ট্যারিফ'—দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউসে আসতে যাওয়া রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের এমন বাণী বিশ্ববাসীর জন্য কী বার্তা বহন করে?

সম্প্রতি, শিকাগোর ইকনোমিক ক্লাবে নির্বাচনী প্রচারণায় ভক্তদের উদ্দেশে এমন বাণী ছুড়েছিলেন বিজয়ী হতে চলা সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প।

সেসময় নিউইয়র্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম এবিসি নিউজের এক বিশ্লেষণের শিরোনাম করা হয়—ট্রাম্পের শুল্কনীতি কি বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধ উসকে দেবে?

এতে বলা হয়, অর্থনীতিবিদরা জানিয়েছেন যে ট্রাম্পের ট্যারিফ প্রস্তাবনা নিশ্চিতভাবে বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যযুদ্ধ ডেকে আনবে। যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিকারকদের পণ্যবিক্রি কমিয়ে দেবে।

এসব কারণে বিশ্বের পয়লা নম্বর অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্রে শুরু হতে পারে চাকরি ছাঁটাই। অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মুখে পড়তে পারে নানান বিধিনিষেধের লাগাম।

মার্কিন বাণিজ্যনীতি বিশেষজ্ঞ ও নিউ হ্যাম্পশায়ারের ডার্টমাউথ কলেজের অর্থনীতির অধ্যাপক ডগলাস ইরভিন এবিসি নিউজকে বলেন, 'আপনি যদি অন্য দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেন তাহলে তারাও আপনার দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করবে।'

একে 'ইটের বদলে পাটকেল' হিসেবে উল্লেখ করেন ইরভিন। তিনি আরও বলেন, 'শুল্ক আরোপ করা খুবই সহজ। কিন্তু, তা তুলে নেওয়া ভীষণ কঠিন।'

গত ১৫ অক্টোবর শিকাগোর ইকনোমিক ক্লাবে ট্রাম্প বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্কের হার তিনি ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারেন।

অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, অন্য দেশগুলোও যদি মার্কিন পণ্যের ওপর পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ শুরু করে তাহলে বিশ্ববাসীকে বাণিজ্যযুদ্ধের দ্বিতীয় ধাক্কা মোকাবিলা করতে হবে।

ওয়াশিংটন ডিসির আমেরিকান ইউনিভার্সিটির অর্থনীতিবিদ কারা রেইনল্ডস গণমাধ্যমটিকে বলেন, 'হতো দেখবেন যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য রপ্তানি কমে গেছে। এটি তখন কর্মসংস্থানে বিরূপ প্রভাব ফেলবে।'

বৈশ্বিক বাণিজ্যযুদ্ধে পণ্য উৎপাদন ও কৃষি খাত ব্যাপকভাবে ঝুঁকিতে পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি।

প্রথমবার ক্ষমতায় এসে ট্রাম্প যখন আমদানি করা পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছিলেন তখন চীন, কানাডা ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেই দেশটির বিরুদ্ধেও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছিল।

আজ বুধবার ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান বিশেষজ্ঞদের বরাত দিয়ে জানায়, ট্রাম্পের ট্যারিফ ব্রিটেনের প্রবৃদ্ধি অর্ধেক কমিয়ে দেবে। বাড়িয়ে দেবে পণ্যের দামও।

প্রতিবেদনে বলা হয়, দ্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল রিসার্চ (এনআইইএসআর) জানিয়েছে—রিপাবলিকান প্রার্থীর রক্ষণশীল নীতি মূল্যস্ফীতির পাশাপাশি ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের সুদের হার আরও বাড়িয়ে দেবে।

এনআইইএসআর বিশ্লেষক আহমাদ কায়া গণমাধ্যমটিকে বলেন, 'ব্রিটেন ছোট ও উদার অর্থনীতির দেশ। অন্যান্য দেশের মতো এই দেশটিও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।'

গত সোমবার বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন যে ট্রাম্পের সবচেয়ে আলোচিত শুল্কনীতি যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি বাণিজ্যকে ১৯৩০ এর দশকে ঠেলে দিতে পারে। সেসময় দেশটিতে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গিয়েছিল। ওয়াশিংটন-বেইজিং বাণিজ্য ধসে পড়েছিল।

সবাই জানেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে যে প্রতিষ্ঠান পণ্য আমদানি করবে তাকে শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। সেই প্রতিষ্ঠান হয় মুনাফা কমাবে নয়তো শুল্কের বোঝা চাপিয়ে দেবে ক্রেতার ওপর।

একই দিনে অপর ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজের এক প্রতিবেদনে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, চীন ও অন্যান্য দেশের ওপর শুল্কের প্রভাব তুলে ধরা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, শুল্ক আরোপের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হলে এর খারাপ প্রভাব অন্য সবার ওপরই পড়বে। চীন সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও মন্তব্য করা হয়েছে।

ট্রাম্প-ট্যারিফ যুক্তরাষ্ট্রের জন্যও 'হিতে বিপরীত' হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

Comments

The Daily Star  | English

What are we building after dismantling the AL regime?

Democracy does not seem to be our focus today. Because if it were, then shouldn’t we have been talking about elections more?

8h ago