নখ ভেঙে যায় কেন, প্রতিরোধে কী করবেন

নখ ভাঙা
ছবি: সংগৃহীত

হাতের নখ যাদের বড় থাকে তাদের তো বটেই, যাদের ছোটও থাকে তাদের অনেকেও নখ ভেঙে যাওয়ার সমস্যায় ভোগেন। এই নখ ভাঙার কারণ এবং এটি প্রতিরোধের উপায় নিয়ে জানিয়েছেন নর্দান ইন্টারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান ডা. আসমা তাসনীম খান।

নখ ভেঙে যায় কেন

ডা. আসমা তাসনীম বলেন, নখের ময়েশ্চার বা আর্দ্রতা নখকে মজবুত ও নমনীয় রাখতে সাহায্য করে। নখের আর্দ্রতা বেশি হলে নখ নরম হয়ে ভেঙে যায় আবার নখের আর্দ্রতা কম হলে শক্ত হয়ে ভেঙে যায়। কোনো কারণে যদি নখের আর্দ্রতা বেশি হয়ে যায়, আবার কোনো কারণে যদি কম হয়ে যায় তাহলে তা নখ ভাঙার কারণ হতে পারে। এ ছাড়া পুষ্টির অভাব, বিভিন্ন রোগসহ নানা কারণে নখ ভাঙতে পারে। যেমন-

১. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকার জন্য বার বার হাত ধোয়ার অভ্যাস। পেশাগত কারণে অনেকের বারবার হাত ধোয়ার প্রয়োজন হয় এবং সাবান, ডিটারজেন্ট কিংবা স্যানিটাইজার ব্যবহারে নখের ময়েশ্চার কমে যায়। যে কারণে নখ ভেঙে যেতে পারে।

২.   শীতকালে আর্দ্রতা কম থাকে। শীতকালের শুষ্ক পরিবেশে নখের আর্দ্রতা কমে যায়। ফলে নখ ভেঙে যেতে পারে।

৩.  গরম আবহাওয়া এবং অতিরিক্ত তাপে যাদের কাজ করতে হয় তাদের নখ ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। রান্নাঘরে যারা দীর্ঘ সময় কাজ করেন, বিভিন্ন মেশিনে কাজ করতে হয় অর্থাৎ এসব ক্ষেত্রে দেখা যায় আর্দ্রতা কম থাকার কারণে নখ শক্ত হয়ে যায় ভঙ্গুর হয়ে যায়।

৪. যারা অতিমাত্রায় নখে নেইলপলিশ ব্যবহার করেন এবং তা তুলে ফেলার জন্য নেইলপলিশ রিমুভার ব্যবহার করেন সেই সময় নখে আর্দ্রতা বেশি হওয়ার কারণে নখ ভেঙে যেতে পারে।

৫. দীর্ঘ সময় যারা পানিতে কাজ করেন, কাপড় ধোয়া, বাসন ধোয়া এমনকি বাজারে মাছ, সবজি বিক্রেতাদের বারবার পানিতে হাত ভেজাতে হয়। তাদের নখে অনেক বেশি আর্দ্রতা থাকে। যে কারণে নখ ভেঙে যেতে পারে।

৬. নখের যত্নে অতিমাত্রায় ম্যানিকিউর, পেডিকিউর করেন তাদের ক্ষেত্রে নখের আদ্রর্তা বেশি হওয়ার কারণে নখ নরম হয়ে ভেঙে যায়।

৭. বয়স বাড়ার সাথে সাথে নখের বৃদ্ধি কমে যায় এবং নখ ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে।

৮. এ ছাড়া পুষ্টির ঘাটতির কারণে নখ ভেঙে যেতে পারে। আয়রনের অভাবে রক্তশূন্যতা হয় সে কারণে নখ ভাঙতে পারে। জিঙ্ক, বায়োটিন, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি কমপ্লেক্স, ফ্যাটি অ্যাসিড, প্রোটিনের ঘাটতি থাকলে নখ ভেঙে যেতে পারে। থাইরয়েড গ্রন্থির সমস্যা যদি থাকে, থাইরয়েড হরমোন কম কিংবা বেশি দুটোর কারণেই নখের উপর প্রভাব পড়ে, নখ ভেঙে যায়।

৯.  দাঁত দিয়ে নখ কামড়ানোর অভ্যাসও নখ ভাঙার কারণ।

 নখ ভেঙে যাওয়া রোধে করণীয়

১.পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং কাজের প্রয়োজনে যাদের বার বার হাত ধুতে হয়, স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে হয় তাদের নখের আর্দ্রতা স্বাভাবিক রাখতে প্রতিবার হাত পানিতে ভেজানোর পর ময়েশ্চারাইজার লাগাতে হবে।

২. যাদের নখ ভাঙছে তাদের জন্য নেইল কন্ডিশনার পাওয়া যায়। ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শে কিংবা প্রসাধনী দোকান থেকে কিনে নখের কন্ডিশনার ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে অবশ্যই তা অ্যালকোহল মুক্ত হতে হবে।

৩.  যাদের নখ ভাঙার প্রবণতা বেশি তাদের হাত ধোয়ার পর নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করতে হবে। বিশেষ করে রাতে পুরু বা থিক ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করবেন। ইউরিয়াযুক্ত ময়েশ্চারাইজার হাত ও নখের জন্য ভালো।

৪. নখ মজবুত করার নেইল জেল, নেইল ক্রিম, নেইল হার্ডনার পাওয়া যায় ডার্মাটোলজিস্টদের কাছে। এসব এসব পণ্য ব্যবহার করা যেতে পারে।

৫. নখে নেইলপলিশ ব্যবহারের প্রবণতা কমাতে হবে।

৬. ম্যানিকিউর ও পেডিকিউর করার সময় অতিরিক্ত ফাইলিং করা যাবে না। এতে নখ ভঙ্গুর হয়ে যায়। নখের কিউটিকল কেটে ফেলা যাবে না, এতে নখ ভেঙে যাওয়ার প্রবণতা বাড়ে।

৭. বিভিন্ন ভিটামিন যেমন- ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, জিঙ্ক, আয়রন, মিনারেলস, ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শে বায়োটিন সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে নখ মজবুত করার জন্য।

এ ছাড়া সোরিয়াসিস, লাইকেন প্ল্যানাস, ফাঙ্গাল সংক্রমণ থেকে অনাইকোমাইকোসিস সহ নখের কিছু রোগ আছে। যার ফলে নখের চারপাশ লাল হয়ে যায়, নখের রং পরিবর্তন হয়, ফুলে যায়, ব্যথা হয়, পুঁজ হয়, নখ আংশিক বা পুরোটা নেইল বেড থেকে আলাদা হয়ে যায়, নখে পিটিং বা ছোট ছোট গর্ত হয়। এসব সমস্যা হলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।

 

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

7h ago