কর-নিবন্ধন খরচ বেশি, বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি কম

ছবি: স্টার ফাইল ফটো

পরিবেশ দূষণ কমাতে ও পরিবেশবান্ধব গাড়ি ব্যবহারে প্রচেষ্টা সত্ত্বেও, কর ও নিবন্ধন খরচ বেশি হওয়াসহ অন্যান্য কারণে দেশে বৈদ্যুতিক গাড়ি (ইভি) বিক্রি এখনো বাড়েনি।

আমদানিকারকরা দ্য ডেইলি স্টারকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) ১৫০ কিলোওয়াটের বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন মিতসুবিশি পাজেরো বা টয়োটা ল্যান্ড ক্রুজারের মতো বিলাসবহুল তেলের গাড়ির সমান।

যাদের একটি গাড়ি আছে, তাদেরকেও বৈদ্যুতিক গাড়ির জন্য বার্ষিক এক লাখ টাকা সারচার্জ দিতে হচ্ছে।

এসব কারণে প্রত্যাশার তুলনায় কম সংখ্যক বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হচ্ছে। কারণ কিলোওয়াট বিদ্যুতের ওপর ভিত্তি করে নিবন্ধন খরচ ধরায় গাড়ির দাম বেড়েছে।

জার্মানির বিলাসবহুল গাড়ি নির্মাতা অডির এ দেশে একমাত্র পরিবেশক অডি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাদ খান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৈদ্যুতিক গাড়ি অত্যন্ত সাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হলেও বিআরটিএ নিবন্ধন খরচ সংক্রান্ত অবাস্তব সিদ্ধান্তের কারণে বৈদ্যুতিক গাড়ির বিক্রি কমেছে।'

২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে বিআরটিএ বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন নীতিমালা চালু করে। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে দেশে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি শুরু করে অডি বাংলাদেশ।

সাদ খান জানিয়েছেন, তারা গত দুই বছরে ৪৮টি বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি করেছে। অডি বাংলাদেশ বর্তমানে এক কোটি ৬৯ লাখ টাকা থেকে দুই কোটি ২৫ লাখ টাকার মধ্যে তিন মডেলের গাড়ি বাজারে এনেছে।

বিএমডব্লিউ, মার্সিডিজ-বেঞ্জ, অডি, বিওয়াইডি, চেরি ও এমজিসহ অন্তত সাত গাড়ি তৈরি প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের বাজারে বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে এসেছে।

অডি বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরও বলেন, 'বিআরটিএ বৈদ্যুতিক গাড়ির কিলোওয়াটের ওপর ভিত্তি করে নিবন্ধন খরচ হিসাব করে। প্রতি কিলোওয়াট ২০ সিসি ইঞ্জিন ক্ষমতার সমান করে। এই হিসাব নিবন্ধনের খরচ বাড়িয়ে দিয়েছে।'

'দাম কমাতে ও বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারকে চাঙ্গা করতে সম্প্রতি ডিলাররা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) সম্পূর্ণ বিল্ট-আপ (সিবিইউ) বৈদ্যুতিক গাড়ির আমদানি শুল্ক কমানোর অনুরোধ করেছে।'

'সিবিইউ ইভির আমদানি শুল্ক বর্তমান ৮৯ দশমিক এক শতাংশ থেকে কমিয়ে ৩৭ শতাংশ করার পরামর্শ দিচ্ছি।'

প্রতিবেশী দেশগুলোর উদাহরণ দিয়ে তিনি আরও বলেন, 'ইভিতে চার্জ না নেওয়ার জন্য ২৫ শতাংশেরও কম আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।'

রাজস্ব বোর্ডকে দেওয়া চিঠিতে তিনি বলেন, 'শুল্ক কম হলে গাড়ি বিক্রি বাড়বে। সরকারের রাজস্ব বাড়বে।'

বৈদ্যুতিক গাড়ির ডিলাররা জানান, ডলার সংকটের কারণে ২০২২ সালের জুলাইয়ে গাড়ি আমদানিতে এলসি মার্জিন ১০-২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০০ শতাংশ করা হয়েছে।

এখন রিজার্ভ স্থিতিশীল হওয়ায় আমদানি বাড়াতে বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর থেকে এলসি মার্জিন বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার সুপারিশ করেছে তারা।

দেশে মার্সিডিজ-বেঞ্জ বৈদ্যুতিক গাড়ির পরিবেশক র‌্যানকন মোটরসের হেড অব মার্কেটিং চৌধুরী মোহাম্মদ নাবিল হাসান ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বৈদ্যুতিক গাড়ির নিবন্ধন খরচ কমপক্ষে তিন থেকে চার লাখ টাকা। এককালীন অগ্রিম আয়কর কমপক্ষে দেড় লাখ টাকা। এটি ক্রেতাদের ওপর বিশাল বোঝা।'

তার মতে, 'বৈদ্যুতিক গাড়ি সাশ্রয়ী। মোটরসাইকেল একবার চার্জ করলে ৪০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে।'

'আমরা যদি প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের বর্তমান দাম হিসাব করি, তাহলে প্রতি কিলোমিটারে খরচ মাত্র দুই টাকা। জীবাশ্ম জ্বালানিচালিত গাড়ির তুলনায় অনেক কম।'

চার্জিং স্টেশনের সংখ্যা বাড়ানো ও বৈদ্যুতিক গাড়ি সম্পর্কে ক্রেতাদের সচেতনতা বাড়লে বিক্রি বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, 'চার্জ ইজি ব্র্যান্ডের আওতায় ঢাকা, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও কক্সবাজারে ১৮ স্টেশন করা হয়েছে।'

মার্সিডিজ-বেঞ্জ বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় সাত মডেলের বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি করছে।

বিআরটিএর উপ-পরিচালক (প্রকৌশল-১) তৌহিদুল ইসলাম তুষার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'পরিবেশের বিবেচনায় নিবন্ধন খরচ কমাতে মন্ত্রণালয়ে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ৫০ শতাংশ কমানোর সুপারিশ করা হয়েছে।'

তিনি আরও বলেন, 'বিআরটিএ বৈদ্যুতিক গাড়ির ওপর সারচার্জ কমানোর সুপারিশ করেছে। আশা করছি, এনবিআর এই চার্জ মওকুফ করবে।'

গত ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিআরটিএতে ২৮১ বৈদ্যুতিক গাড়ি নিবন্ধিত হয়েছে। বছর শেষে তা ৩০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

গাড়ির ব্যবহার বাড়লেও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে মাথাপিছু গাড়ির ব্যবহার অনেক কম।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের এক গবেষণা পত্রে দেখা গেছে, দেশে প্রতি এক হাজার মানুষের জন্য তিনটি গাড়ি আছে। মালয়েশিয়ায় প্রতি হাজারে ৮৯৭, ভিয়েতনামে ৩৪, ভারতে ২২ ও পাকিস্তানে ১৬টি গাড়ি আছে।

Comments

The Daily Star  | English

Can't afford another lost decade for education

Whenever the issue of education surfaces in Bangladesh, policymakers across the political spectrum tend to strike a familiar chord. "Education is our top priority," they harp

3h ago