‘চা শিল্পের বিকাশে প্রয়োজন জলবায়ুসহিঞ্চু জাত’

চা
মৌলভীবাজারের সাতগাঁও চা-বাগান। ছবি: শেখ নাসির/স্টার ফাইল ফটো

জলবায়ু পরিবর্তন দেশের চা শিল্পে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এটি মোকাবেলায় বাংলাদেশ চা গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিটিআরআই) ও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে উন্নত বৈজ্ঞানিক গবেষণার মাধ্যমে জলবায়ুসহিঞ্চু, মানসম্পন্ন ও উচ্চ ফলনশীল চায়ের জাত উদ্ভাবনে উদ্যোগ নিতে হবে বলে মত দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

গতকাল বুধবার কমনওয়েলথ জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের আয়োজনে সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে 'বাংলাদেশে চা শিল্পের অবস্থা: চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা' শীর্ষক সেমিনারের এ বিষয়ে গুরুত্বারোপ করা হয়।

সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফসল উদ্ভিদবিদ্যা ও চা উৎপাদন প্রযুক্তি বিভাগের অধ্যাপক এএফএম সাইফুল ইসলাম তার প্রবন্ধে বলেন, 'বাংলাদেশে প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে এক হাজার ৭৪০ কিলোগ্রাম চা উৎপাদিত হয়। ভারতে হয় আড়াই হাজার কেজি ও শ্রীলঙ্কায় তিন হাজার ৩০০ কেজি।'

তিনি আরও বলেন, 'বাংলাদেশের চা বাগানে গাছের তিন-চতুর্থাংশই কয়েক দশক এমনকি শত বছর পুরোনো জাতের। এর গুণগত মান কম ও উৎপাদন অপ্রতুল। এ ছাড়াও, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে খরার কারণে চা উৎপাদন বছরে ২১ থেকে ৩১ শতাংশ কমে যাচ্ছে। কীটের প্রাদুর্ভাবে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম হচ্ছে।'

তিনি জানান, ১৯৯০ সালে দেশে ৪৫ দশমিক শূন্য তিন মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়েছিল। তখন স্থানীয় চাহিদা ছিল ১৯ দশমিক ২১ মিলিয়ন কেজি। বাকি ২৫ দশমিক ৪০ মিলিয়ন কেজি চা রপ্তানি করা হয়েছিল। তিনি বলেন, 'গত বছর দেশে ১০২ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদিত হয়। তখন অভ্যন্তরীণ চাহিদা ছিল ৯৫ মিলিয়ন কেজি। মাত্র এক দশমিক শূন্য চার মিলিয়ন কেজি চা রপ্তানি হয়েছে।'

'সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চায়ের জন্য জার্মপ্লাজম সেন্টার প্রতিষ্ঠা করেছে। চারটি টেকসই চা গাছের জাত উদ্ভাবন করেছে। দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় চা গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিটিআরআই এখন পর্যন্ত ২৩ জাত উদ্ভাবন করলেও বিটি২ ছাড়া অন্য জাতগুলো তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি।'

তিনি জলবায়ুসহিঞ্চু গুণগত মানসম্পন্ন উচ্চ ফলনশীল চায়ের জাত উদ্ভাবনের জন্য বিটিআরআইয়ের বৈজ্ঞানিক গবেষণার জন্য লোকবল ও সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে দেওয়া ছাড়াও বিশেষায়িত বিভাগ যেমন চায়ের জেনেটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ও বায়োটেকনোলজি বিভাগ খোলার দাবি জানান।

বাংলাদেশ চা বোর্ডের প্রকল্প উন্নয়ন ইউনিটের পরিচালক একেএম রফিকুল হক তার প্রবন্ধে বলেন, 'জলবায়ু পরিবর্তন চা উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা চা চাষের জন্য উপযোগী হলেও জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অনেক অঞ্চলে বেশি তাপমাত্রা দেখা যাচ্ছে। খরার পাশাপাশি বাড়ছে কীটপতঙ্গের উপদ্রব। তা কমছে চা উৎপাদন।'

তিনি বলেন, 'সারের দাম, শ্রমিক সংকট, জমি নিয়ে বিরোধ, বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহে সমস্যা, ব্যাংক ঋণের প্রাপ্যতা না থাকা, পুরোনো যন্ত্রপাতি ও নিলাম নিয়ে বিরোধও এই শিল্পকে প্রভাবিত করছে।'

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় কৃত্রিম সেচ ও নতুন জলবায়ু পরিবর্তন-অনুযোজিত জাত এবং চাষিদের প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করার জন্য বৃহত্তর পরিসরে উদ্যোগ গ্রহণের আহবান জানান তিনি।

সেমিনারের প্রধান অতিথি সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. আলিমুল ইসলাম বলেন, 'চা শিল্পের সব অংশীদারদের সহযোগিতায় সিলেটে প্রযুক্তিগত হাব প্রতিষ্ঠা করা উচিত। এই জায়গায় বিজ্ঞানী-গবেষকরা তাদের উদ্ভাবনগুলো দেখাতে পারেন। চাষিরা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।'

বাংলাদেশ চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বলেন, 'চা শিল্পের অনেক অংশীদার অনৈতিক চর্চায় লিপ্ত যা রপ্তানি বাড়াতে মানসম্মত উৎপাদন নিশ্চিতের জন্য বন্ধ করা দরকার। চায়ের ভালো দাম নিশ্চিতের জন্য আমাদের নিলাম পদ্ধতির বিকল্প ভাবতে হবে। অন্যদিকে উৎপাদকদেরও গুণগত মানের তুলনায় পরিমাণকে অগ্রাধিকার দেওয়ার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।'

তিনি চা গবেষণা উন্নয়নে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিয়ে ভবিষ্যৎ কর্মপন্থা নির্ধারণের বিষয়ে আশ্বস্ত করেন।

অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি পারভীন এফ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক ওসমান গণি মনসুর ও ধন্যবাদ বক্তব্য দেন সদস্য জুলহাস আলম।

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Time’s List: Yunus among 100 most influential people

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus has been named among TIME magazine’s 100 Most Influential People of 2025.

6h ago