র চা নাকি দুধ চা খাবেন

চলুন জেনে নেওয়া যাক মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হসপিটাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের পুষ্টিবিদ তাসরিয়ার রহমানের কাছ থেকে।
ছবি: সংগৃহীত

চা বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত জনপ্রিয় পানীয়। গরম চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে দিন শুরু হয় অনেকেরই। আমাদের দেশে র চা এবং দুধ চা তুমুল জনপ্রিয়। তবে স্বাস্থ্যের জন্য এ দুটির কোনটি বেশি উপকারী জানেন কি?

চলুন জেনে নেওয়া যাক মিরপুর ইসলামী ব্যাংক হসপিটাল অ্যান্ড কার্ডিয়াক সেন্টারের পুষ্টিবিদ তাসরিয়ার রহমানের কাছ থেকে।

তাসরিয়ার রহমান জানান, আমাদের দেশের বেশিরভাগ মানুষ দুধ চা খেতে পছন্দ করলেও এটি শরীরের জন্য উপকারী নয়। বরং র চা থেকে বেশকিছু উপকার পাওয়া যায়।

শরীরের ওপর দুধ চা ও র চায়ের প্রভাব কেমন হয় এটা জানার জন্য জার্মানির বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক একটি পরীক্ষা করেছিলেন। পরিক্ষাটিতে ১৬ জন নারীকে একবার র চা আরেকবার দুধ চা পান করতে দেওয়া হয়। প্রতিবার চা পানের পর আল্ট্রাসাউন্ড পদ্ধতিতে তাদের রক্তনালীর প্রসারণ মাপা হয়। পরীক্ষাটিতে দেখা যায়, র চা রক্তনালীর প্রসারণ ঘটায়। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ও হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে রক্তনালীর প্রসারণ অত্যন্ত জরুরি।

আর দুধ চায়ের ক্ষেত্রে দেখা যায়, এটি রক্তনালীর প্রসারণ ঘটায় না। কারণ দুধের মধ্যে থাকা ক্যাসেইন চায়ের মধ্যে বিদ্যমান ক্যাটেচিনকে বাধাগ্রস্ত করে। 

আবার ইউএস ডিপার্টমেন্ট অফ এগ্রিকালচারের গবেষকরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, ডায়াবেটিস রোগের জন্য র চা অনেক বেশি উপকারী। এ পরীক্ষায় দেখা যায়, র চা খেলে শরীরের কোষ থেকে ১৫ গুণ বেশি ইনসুলিন নির্গত হয়। ইনসুলিন পর্যাপ্ত পরিমাণে নির্গত হলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। কিন্তু চায়ের সঙ্গে দুধ মেশানো হলে ইনসুলিন নির্গমনের হার কমতে থাকে।

দৈনন্দিন পানের জন্য চা পাতা জ্বাল না দিয়ে টি ব্যাগ দিয়ে র চা বানিয়ে পান করা ভালো। অথবা পানি ফুটিয়ে অল্প চা পাতা দিয়ে চা বানানো হলে শরীরের বেশ কিছু উপকার হয়।

তাসরিয়ার রহমান আরও জানান, র চা খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে, দেহের কোষের ক্ষয় রোধ হয়। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, ওজন নিয়ন্ত্রণের ভূমিকা রাখে র চা।

এ ছাড়া, রং চায়ের মধ্যে পটাশিয়াম, প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, যা শরীর ও মন প্রফুল্ল রাখতে সাহায্য করে। র চায়ের মধ্যে লেবু, আদা, লবঙ্গ ইত্যাদি মিশিয়ে পান করলে ঠান্ডা, কাশি, গলা ব্যথা উপশম হয়।

তবে র চায়ে অতিরিক্ত চিনি দেওয়া হলে চায়ের ঔষধি গুণ নষ্ট হয়। চিনি ছাড়া চা পান করলে শরীরের উপকার হবে।

অন্যদিকে চায়ের সাথে দুধ মেশানো হলে চায়ের ঔষধি গুণাগুণ নষ্ট হয়। দুধে থাকা প্রোটিনের সঙ্গে চায়ের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলো মিশে প্রতিক্রিয়া করে হজমের সমস্যা সৃষ্টি করে।

অনেক বেশি দুধ চা উদ্বেগের সমস্যা বাড়ায়। এটি মস্তিষ্কের কোষগুলোকে সক্রিয় করে এবং মস্তিষ্কে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। দুধ চায়ে চা পাতার পরিমাণ বেশি থাকায় প্রচুর পরিমাণে ক্যাফেইন থাকে, যা ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়।

এ ছাড়া, নিয়মিত দুধ চা পান করলে ত্বকের ওপর প্রভাব পড়ে। যারা বেশি দুধ চা পান করেন তাদের ব্রন বা ফুসকুড়ির মতো বিভিন্ন চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।

 

Comments