আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাপি ঋণ বেড়ে ২৬১৬৩ কোটি টাকা

খেলাপি ঋণ, ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংক,
স্টার অনলাইন গ্রাফিক্স

গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশের ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের (এনবিএফআই) বিতরণ করা ঋণের ৩৬ শতাংশ খেলাপিতে পরিণত হয়েছে। এই পরিসংখ্যান গত সাত-আট বছর আগের 'ব্যাপক অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির' ফল বলে উল্লেখ করেছেন খাত সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩৫টি এনবিএফআইয়ের মন্দ ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২৬ হাজার ১৬৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যা তাদের বিতরণ করা ঋণের ৩৫ দশমিক ৫২ শতাংশ। উল্লেখিত সময়ে ৩৫টি এনবিএফআইয়ের বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল ৭৩ হাজার ৬৬২ কোটি ৭৭ লাখ টাকা।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, 'গত সাত-আট বছর আগে এই খাতে ঘটে যাওয়া ব্যাপক অনিয়ম ও কেলেঙ্কারির' প্রতিফলন এ খেলাপি ঋণ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্ত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তারা জানান, এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের (বর্তমান নাম গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক পি কে হালদার চারটি এনবিএফআই থেকে অন্তত তিন হাজার ৫০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

এই আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো হলো-পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং, এফএএস ফাইন্যান্স ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি)।

ফলে, এই চারটি এনবিএফআই দুর্বল প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে এবং তাদের ৯০ শতাংশের বেশি ঋণ মন্দ ঋণে পরিণত হয়েছে।

খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বর্তমান অবস্থার জন্য দায়ী কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কারণ বাংলাদেশের ব্যাংকের তদারকিতে ঘাটতি ছিল।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এই খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২১ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা, যা তাদের বিতরণ করা ঋণের ২৯ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তা ২১ শতাংশ বা চার হাজার ৫০৫ কোটি চার লাখ টাকা বেড়ে ২৬ হাজার ১৬৩ কোটি ১৯ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।

অ্যালায়েন্স ফাইন্যান্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কান্তি কুমার সাহা বলেন, 'খেলাপি ঋণের বেশিরভাগই লিগ্যাসি ঋণ, যা পর্যাপ্ত জামানত ছাড়াই বিতরণ করা হয়।'

তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মন্দ ঋণ তেমন না বাড়লেও কিছু নতুন ঋণ খেলাপি হয়েছে। কারণ দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীরা অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।

'সমাধানের উপায় নিয়ে আলোচনা করতে আমরা গত বছরের অক্টোবরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছিলাম। ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক সংস্থা আমাদের আশ্বস্ত করেছিল, গ্রাউন্ডওয়ার্কের পর শিগগিরই তারা এ খাতের লোকজনের সঙ্গে বসবেন,' যোগ করেন তিনি।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মোট ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের খেলাটি ঋণের প্রায় ৭৩ দশমিক ৫ শতাংশ  মধ্যে ১২টি প্রতিষ্ঠানের।

সাতটি প্রতিষ্ঠানের মন্দ ঋণ বিতরণ করা ঋণের ৯০ শতাংশের বেশি।

যেমন- এফএএস ফাইন্যান্সের মন্দ ঋণ বিতরণ করা ঋণের ৯৯ শতাংশ, ফারইস্ট ফাইন্যান্সের ৯৮ শতাংশ, আভিভা ফাইন্যান্সের ৯০ শতাংশ, বিআইএফসির ৯৭ শতাংশ, ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের ৯৬ শতাংশ, পিপলস লিজিংয়ের ৯৭ শতাংশ এবং ইউনিয়ন ক্যাপিটালের ৯৫ শতাংশ।

ব্যাংকগুলোর প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান আনিস এ খান সম্প্রতি বলেছেন, কিছু ব্যাংক ও এনবিএফআই 'মন্দ যোগসাজশের শিকার' হয়েছে, যা সামগ্রিক আর্থিক ব্যবস্থার জন্য 'গুরুতর হুমকি'।

'এছাড়া কিছু এনবিএফআইয়ে অসাধু বিনিয়োগকারীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, যারা ব্যক্তিগত লাভের জন্য চেয়ারপারসন ও পরিচালক পদের অপব্যবহার করেছেন। তারা প্রতিষ্ঠানগুলো 'পতনের দ্বারপ্রান্তে' ঠেলে দিয়েছেন,' বলেন তিনি।

আনিস এ খান এই কর্মকাণ্ডকে 'সরাসরি চুরির' সঙ্গে তুলনা করেন।

Comments

The Daily Star  | English
Unhealthy election controversy must be resolved

Unhealthy election controversy must be resolved

Just as the fundamental reforms are necessary for the country, so is an elected government.

14h ago