রুমমেটের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হলে

রুমমেটের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে হলে
ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষা বা পেশাগত প্রয়োজনে বিভিন্ন সময় মানুষকে হল বা হোস্টেল জীবন বেছে নিতে হয়। নিজের বাড়ির আরাম-আয়েশ ছেড়ে, মায়ের আদর-বাবার ভালোবাসা কিংবা ভাইবোনদের সঙ্গে খুনসুটিকে পেছনে ফেলে শুরু করতে হয় নতুন জীবন।

এই জীবন পুরোটাই নিজের, এখানে সব কাজ নিজেকে করতে হয়, রাতে ফিরতে দেরি হলে ভাত বেড়ে কেউ বসে থাকবে না, পোশাক নোংরা হলে নিজেকেই তা পরিষ্কারের ব্যবস্থা করতে হয়, পরীক্ষার দিন সকালে মুখে তুলে খাইয়ে দেওয়ারও কেউ থাকে না। এমনকি তীব্র মন খারাপের রাতও একা একাই পার করতে হয়।

আগের জীবনের সঙ্গে হল বা হোস্টেল জীবনের যে পার্থক্য, তা বেশিরভাগের জন্যই প্রকট হয়ে ধরা দেয়। ফলে নতুন জীবনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে, নতুন পরিবেশে খাপ খাইয়ে নিতে অনেকেরই কষ্ট হয়।

সেই কষ্টের মধ্যে নতুন যন্ত্রণা তৈরি হয় যদি রুমমেটের সঙ্গে বনিবনা না হয়। দেখা যায়, সবসময় রুম বদলানোর সুযোগ থাকে না, অনেক সময় নিয়মও থাকে না। বিশেষ করে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর হলে রেজাল্ট, শিক্ষাবর্ষ, বিভাগ ইত্যাদির ভিত্তিতে অফিশিয়ালি সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়, যা চাইলেই পরিবর্তন করা যায় না।

হলে বা হোস্টেলে একটি কক্ষে দুই থেকে ছয় জন মানুষ থাকেন। যারা একটা সময় পর্যন্ত থাকেন অপরিচিত, তারপর জীবনের প্রয়োজনেই একে অন্যের সঙ্গে কক্ষ ভাগ করে নেন। তাদের মধ্যে যদি সদ্ভাব না থাকে, বনিবনা না হয়, তাহলে হল বা হোস্টেল জীবন ভীষণ কষ্টের হয়ে উঠতে পারে।

এক্ষেত্রে কী করা উচিত, জানতে চেয়েছিলাম মেন্টাল হেলথ ফার্স্ট এইডের মাস্টার ট্রেইনার ডাক্তার নাজিয়া হকের কাছে।

তিনি বলেন, 'হলে বা হোস্টেলে রুমমেটের সঙ্গে বনিবনা না হলে তা সামাল দেওয়া মুশকিল হলেও অসম্ভব নয়। এক্ষেত্রে পারস্পরিক সমঝোতা প্রয়োজন। অন্য রুমমেট বা বন্ধু যারা আছেন তারাও সাহায্য করতে পারেন। মোটকথা, সম্পর্কটা পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে চালিয়ে নিতে হবে। যেহেতু সেখানে থাকতেই হবে তাই দুই পক্ষকেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে ছাড় দিয়ে চলতে হবে।'

হলে ওঠার আগে মানসিক প্রস্তুতি

হল বা হোস্টেলে ওঠার আগে কিছু বিষয়ে মানসিক প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন বলে মনে করেন ডা. নাজিয়া।

তিনি বলেন, একটা হল বা হোস্টেলে বিভিন্ন পরিবারের, বিভিন্ন শ্রেণির, বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক পরিবেশের মানুষ থাকতে আসেন। সেখানে থাকতে গিয়ে সবার সব ব্যাপারে মতের মিল নাও হতে পারে। এ ব্যাপারটি শুরু থেকেই মাথায় রাখতে হবে। তাহলে কোনো ধরনের নেতিবাচক পরিস্থিতি সামনে এলে তা সামাল দেওয়া সহজ হবে।

পাশাপাশি, হল বা হোস্টেলে বাস করার ক্ষেত্রে একে অন্যের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, সহনশীল মনোভাব রাখতে হবে। কারো বিপদে সহায়তার মানসিকতাও রাখতে হবে।

কারো কোনোকিছু হারিয়ে গেলে সেটা খুঁজে পেতে সাহায্য করা কিংবা হুট করে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে তার পাশে থাকা কিংবা পানির মতো দিনের জরুরি প্রয়োজনীয় সামগ্রী ভাগ করে নেওয়ার মতো মানসিকতা নিয়েই হলে উঠতে হবে। তাহলে রুমমেটের সঙ্গে বনিবনা না হওয়ার শঙ্কা কমে যাবে, হল বা হোস্টেল জীবনও সুন্দর হবে।

হল বা হোস্টেল জীবন সুন্দর করতে কিছু পরামর্শ দিয়েছে ক্যারিয়ার গাইড ডট কম।

সেখানে বলা হয়, হল বা হোস্টেল জীবনে এসে হঠাৎ করেই একজন মানুষ ভীষণ স্বাধীনতা পেয়ে যায়। পরিবারের নিয়মনীতি বা শৃঙ্খল তখন থাকে না। এই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় প্রয়োজন। কিছু বিষয় মাথায় রাখলে নতুন এই জীবনও হতে পারে আনন্দময়, স্মৃতিময়।

  • রুমমেটদের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখুন। নিজের ইগো দূরে রাখুন এবং তাদের সঙ্গে খুব বেশি রূঢ় হবে না।
  • অযথা কোনো বিষয়ে ঝামেলায় জড়াবেন না। যতটুকু সম্ভব ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে চলুন।
  • হল বা হোস্টেলে সিরিয়র-জুনিয়র ইস্যু থেকে অনেক সমস্যা তৈরি হয়। এক্ষেত্রে যারা আপনার বড় তাদের সম্মান করুন। ছোট বা সহপাঠীদের সঙ্গে রাখুন বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। মনে রাখবেন, সম্মান দিলে আপনিও তা ফেরত পাবেন।
  • যেহেতু নিজের কাজ নিজেকেই করতে হবে তাই জীবনধারনের মূল কাজগুলো শিখে নিন। যেন অন্য কারো মুখাপেক্ষী হয়ে না থাকতে হয় আবার আপনার জন্য কারো অসুবিধাও না হয়।
  • পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখুন। যেহেতু একটি কক্ষই কয়েকজনের সঙ্গে ভাগ করে নিতে হবে। তাই এমন কিছু করবেন না যা অন্যদের বিরক্তির কারণ হয়।

     

Comments

The Daily Star  | English

Bangladesh continues to perform poorly in budget transparency

Bangladesh has continued to showcase a weak performance in the open budget rankings among its South Asian peers, reflecting a lack of transparency and accountability in the formulation and implementation of fiscal measures.

15h ago