সুগন্ধি চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে সরকার

ছবি: সংগৃহীত

রাজস্ব-রপ্তানি আয়ের পাশাপাশি বাণিজ্য বাড়াতে ও ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে সুগন্ধি চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার।

গত রোববার খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ব্যবসায়ীরা উল্লেখযোগ্য পরিমাণে সুগন্ধি চাল ভারতে পাচার হওয়ার কথা জানিয়েছেন।'

তিনি আরও বলেন, 'সুগন্ধি চালের বর্তমান উৎপাদন দেশের চাহিদার তুলনায় বেশি বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। ভারতীয় রপ্তানিকারকদের কেউ কেউ বাংলাদেশি চাল নিজের নামে অন্য দেশে রপ্তানি করছেন। ফলে বাংলাদেশ বাজার হারাচ্ছে।'

রপ্তানিকারকরা বলছেন, বিশ্বব্যাপী প্রবাসী বাংলাদেশি ও বাংলাদেশি বংশোদ্ভূতদের মধ্যে সুগন্ধি চালের চাহিদা অনেক।

সরকারি তথ্যে জানা গেছে, প্রায় ৭৫ লাখ বাংলাদেশি বিদেশে আছেন। অভিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করা হলে এ সংখ্যা হয় ৯০ লাখ থেকে এক কোটি।

এ ছাড়াও, দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্যপ্রাচ্যের মানুষ সুগন্ধি চালের প্রধান ক্রেতা।

২০২৩ সালের অক্টোবরে সরকার সুগন্ধি ও অন্যান্য চাল রপ্তানির ওপর অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা দেয়। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা রক্ষার লক্ষ্যে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়।

নিষেধাজ্ঞার আগে আরব আমিরাত, ইউরোপ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ব্রুনাই, দক্ষিণ কোরিয়া ও ইউরোপসহ প্রায় ১৩৬ দেশে সুগন্ধি চাল রপ্তানি করা হচ্ছিল।

২০০৯-২০১০ অর্থবছরে বাংলাদেশ সুগন্ধি চাল রপ্তানি শুরু করে। সেসময় ৬৬৩ টন চাল রপ্তানি হয়।

গত ২২ জানুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. মাসুদুল হাসান ডেইলি স্টারকে জানিয়েছিলেন, খাদ্য পরিকল্পনা ও পরিধারণ কমিটির সভায় সুগন্ধি চাল রপ্তানির বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।

তিনি জানান, সরকারি আদেশ জারি হয়নি। তবে তা যেকোনো সময় তা হতে হবে। কী পরিমাণ চাল রপ্তানি হবে এখনো চূড়ান্ত হয়নি। বিষয়গুলো এখনো আলোচনাধীন। কারিগরি কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। শিগগির সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

সচিব মো. মাসুদুল হাসান বলেন, সরকার বিপুল পরিমাণ সুগন্ধি চাল রপ্তানির অনুমতি দেবে না। দেশের খাদ্য নিরাপত্তা বিপন্ন হওয়ার পরিস্থিতি সরকার সতর্কতার সঙ্গে নিয়ন্ত্রণ করবে।

এ বিষয়ে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার ডেইলি স্টারকে বলেন, 'যদিও এফপিএমসির সভায় সুগন্ধি চাল রপ্তানির বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে চূড়ান্ত অনুমোদন এখনো দেওয়া হয়নি।'

'আরও কিছু দিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে সরকার চূড়ান্ত অনুমোদন দেবে।'

রপ্তানিকারকদের ভাষ্য

শীর্ষ খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকারী ও রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রাণ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ইলিয়াছ মৃধা ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্যের রপ্তানি বাড়বে।'

'এ জাতের ধান চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করা হবে। দেশে সুগন্ধি চালের উৎপাদন চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি। ফলে দাম অনেক কমে গেছে।'

২০২৩-২৪ সালের ফেব্রুয়ারি-মার্চে খুচরা পর্যায়ে সুগন্ধি চাল কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা। এখন প্রতি কেজি সুগন্ধি চালের দাম ১২০ থেকে ১২৫ টাকা।

তিনি মনে করেন, কৃষকরা যদি উপকৃত না হন তাহলে তারা সুগন্ধি ধান চাষ বন্ধ করে দেবেন। শেষ পর্যন্ত অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে এসিআই ফুডস অ্যান্ড কমোডিটি ব্র্যান্ডসের চিফ বিজনেস অফিসার ফারিয়া ইয়াসমিন ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি দেশের ব্র্যান্ড ইমেজকে শক্তিশালী করবে।'

'অনেক চাহিদা সত্ত্বেও গত দুই বছরের নিষেধাজ্ঞার কারণে আমরা আন্তর্জাতিক বাজার হারিয়েছি। বাজার এখন ভারত ও পাকিস্তানের দখলে।'

তিনি সতর্ক করে বলেন, 'যদি রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয় এবং হঠাৎ আবার বন্ধ করা হয় তবে এটি অর্থনৈতিক ক্ষতির দিকে নিয়ে যাবে। সরকারকে অনুরোধ করছি বিষয়টি সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা হোক। আমাদের মোট কৃষি প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রপ্তানির ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ আসে সুগন্ধি চাল থেকে।'

নাম প্রকাশ না করার শর্তে অপর রপ্তানিকারক বলেন, 'আশা করছি সরকার শিগগিরই রপ্তানির অনুমতি দেবে।'

তারা আশা করছেন যে রপ্তানির পরিমাণ আগের তুলনায় বাড়বে। তার বিশ্বাস, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞার কারণে হারানো বাজার দ্রুত ফিরিয়ে আনা যাবে।

সুগন্ধি চাল রপ্তানি

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য বলছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয় এক দশমিক ৪০ মিলিয়ন ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে তা দুই দশমিক ৮৮ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছায়।

২০২১-২২ অর্থবছরে সুগন্ধি চালের রপ্তানি আয় দুই দশমিক শূন্য ছয় মিলিয়ন ডলার হয়। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা হয় এক দশমিক শূন্য সাত মিলিয়ন ডলার।

২০২২-২৩ অর্থবছরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যায়।

তবে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে সুগন্ধি চাল রপ্তানি আয় হয় শূন্য দশমিক শূন্য ছয় মিলিয়ন ডলার।

ইপিবির তথ্যে দেখা গেছে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে গত ডিসেম্বর পর্যন্ত সুগন্ধি চাল রপ্তানি হয়নি।

বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য বলছে, দেশে প্রায় ৩৩ প্রজাতির সুগন্ধি ধানের চাষ হয়।

Comments

The Daily Star  | English

NBR officials call off shutdown after govt warning

Officials of the National Board of Revenue have withdrawn their shutdown, following a stern government warning and mounting pressure from the country’s top business leaders.

47m ago