বাংলাদেশের বিগত সরকার মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত: জাতিসংঘ

বিক্ষোভ দমনে রামপুরায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অ্যাকশন। ছবি: ইব্রাহিম খলিল ইবু/স্টার

গত বছর ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টায় বিক্ষোভকারীদের ওপর নিয়মতান্ত্রিক হামলা ও হত্যার পেছনে বাংলাদেশের আগের সরকারের হাত রয়েছে জানিয়ে জাতিসংঘ বলেছে, এই নির্যাতন 'মানবতাবিরোধী অপরাধের' সমতুল্য।

আগস্টে শিক্ষার্থীদের নেতৃত্বে সংঘটিত অভ্যুত্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের আগে তার সরকার 'শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড'সহ বিক্ষোভকারী ও অন্যদের ওপর নিয়মতান্ত্রিক অভিযান পরিচালনা করেছে বলেও জানিয়েছে জাতিসংঘ।

গত বছরের ১ জুলাই থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া ঘটনাবলি নিয়ে গঠিত তদন্তের ফলাফল প্রকাশ করে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর বলেছে, 'এটি বিশ্বাস করার মতো যৌক্তিক কারণ রয়েছে যে, হত্যা, নির্যাতন, কারাবাস ও অন্যান্য অমানবিক কর্মকাণ্ডের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হয়েছে।'

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ এবং বাংলাদেশের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সহিংস উপাদানগুলোর সঙ্গে সরকার কর্তৃক সংঘটিত এই অপরাধসমূহ 'বিক্ষোভকারী এবং অন্যান্য বেসামরিক নাগরিকদের বিরুদ্ধে একটি বিস্তৃত ও পদ্ধতিগত আক্রমণের অংশ ছিল।'

নিহত ১,৪০০

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মোহাম্মদ ইউনূসের অনুরোধে জাতিসংঘ একজন তদন্তকারী, একজন ফরেনসিক চিকিৎসক এবং একজন অস্ত্র বিশেষজ্ঞসহ একটি দল পাঠিয়ে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন শুরু করে।

বুধবারের প্রতিবেদনটি মূলত ভুক্তভোগী, প্রত্যক্ষদর্শী, বিক্ষোভকারী নেতা ও মানবাধিকার কর্মীদের ২৩০টির বেশি সাক্ষাৎকার, মেডিকেল কেস ফাইল পর্যালোচনা, ছবি, ভিডিও ও অন্যান্য নথিপত্রের ওপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে।

দলটি নিশ্চিত হয়েছে যে নিরাপত্তা বাহিনী বিক্ষোভের সময় হাসিনার সরকারকে সমর্থন করেছিল, যা সরকারি চাকরির চাকরির কোটার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসাবে শুরু হয়েছিল। এবং এরপর তার পদত্যাগের বৃহত্তর দাবিতে ওই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে।

মানবাধিকার দপ্তর বলছে, আগের সরকার ক্রমবর্ধমান সহিংস উপায়ে বিক্ষোভ দমনের চেষ্টা করেছিল। তাদের ধারণা, ওই ৪৫ দিনের সময়কালে 'প্রায় ১৪০০ মানুষ নিহত হয়ে থাকতে পারে' এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছে।

নিহতদের অধিকাংশই 'বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে নিহত হয়েছে' উল্লেখ করে মানবাধিকার দপ্তর জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে ১২ থেকে ১৩ শতাংশই শিশু।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বিক্ষোভে ৮৩৪ জন নিহত হওয়ার যে হিসাব দিয়েছে, প্রকৃত সংখ্যা তার চেয়ে অনেক বেশি।

প্রতিবেদনে এমন ঘটনাও নথিভুক্ত করা হয়েছে যেখানে নিরাপত্তা বাহিনী আহত বিক্ষোভকারীদের জরুরি চিকিৎসা সেবা দিতে অস্বীকার করেছে বা বাধা দিয়েছে, রোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ করেছে, চিকিৎসা কর্মীদের ভয় দেখিয়েছে এবং যথাযথ প্রক্রিয়া ছাড়াই হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ জব্দ করেছে।

'ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা'

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ভলকার তুর্ক এক বিবৃতিতে বলেন, 'ব্যাপক বিরোধিতার মুখে ক্ষমতা ধরে রাখতে আগের সরকারের পরিকল্পিত ও সুসমন্বিত কৌশল ছিল এই নৃশংস প্রতিক্রিয়া।

'বিক্ষোভ দমনে রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা কর্মকর্তাদের সমন্বয় ও নির্দেশনায় শত শত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, নির্বিচারে গ্রেপ্তার এবং আটক ও নির্যাতন চালানো হয়েছে বলে বিশ্বাস করার যৌক্তিক কারণ রয়েছে।'

তুর্ক বলেন, তার কার্যালয় থেকে সংগৃহীত সাক্ষ্য ও প্রমাণাদি 'ব্যাপক রাষ্ট্রীয় সহিংসতা ও টার্গেট কিলিংয়ের একটি বিরক্তিকর চিত্র তুলে ধরে।'

প্রতিবেদনে বলা হয়, কিছু নথিভুক্ত ঘটনায় নিরাপত্তা বাহিনী ইচ্ছাকৃতভাবে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি চালিয়ে অরক্ষিত বিক্ষোভকারীদের হত্যা করেছে বা পঙ্গু করেছে।

এটি লিঙ্গ-ভিত্তিক সহিংসতাও নথিভুক্ত করেছে, যার মধ্যে ধর্ষণের হুমকি রয়েছে, যার লক্ষ্য ছিল নারীদের বিক্ষোভে অংশ নেওয়া থেকে বিরত রাখা।

মানবাধিকার দপ্তর বলছে, তাদের দল নিশ্চিত হয়েছে যে, 'পুলিশ ও অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনী শিশুদের হত্যা ও পঙ্গু করেছে এবং তাদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার, অমানবিক পরিস্থিতিতে আটকে রেখে নির্যাতন করেছে।'

প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে যে, বিক্ষোভ চলাকালীন জনতার কিছু অংশ পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ নেতা বা সমর্থকদের বিরুদ্ধে 'গণপিটুনি এবং অন্যান্য গুরুতর প্রতিশোধমূলক সহিংসতা' চালিয়েছিল।

তুর্ক বলেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য এর জবাবদিহিতা এবং ন্যায়বিচার অপরিহার্য।

Comments

The Daily Star  | English

Failure in state formation leads to the rise of fascist rule: Prof Ali Riaz

He made the remarks at the beginning of a discussion between the commission and the Amjanata Party.

31m ago