জাতিসংঘের প্রতিবেদন

নিরাপত্তা বাহিনী-আন্দোলনকারী উভয়েরই আক্রমণের শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা

জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময় আহত শিক্ষার্থীদের বহনকারী গাড়ি বাধা দিয়ে মারধরের ছবি তোলার সময় সাংবাদিককে পেটায় পুলিশ। ছবি: স্টার

জুলাই অভ্যুত্থান চলাকালে অন্তত ছয়জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এসময় আওয়ামী লীগ কর্মী ও সরকারি বাহিনী বিভিন্নভাবে সাংবাদিকদের হামলা ও ভীতি প্রদর্শন করেছে। আবার আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহের সময় অনেক সাংবাদিক বিক্ষোভকারীদের হামলারও শিকার হয়েছেন।

আজ বুধবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় থেকে প্রকাশিত জুলাই অভ্যুত্থান সম্পর্কিত মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতন সংক্রান্ত ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে ঢাকা, সিলেট ও সিরাজগঞ্জে বিক্ষোভের চলাকালে অন্তত ছয় সাংবাদিক নিহত হয়েছেন। এই সময়ে প্রায় ২০০ জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন।

মানবাধিকার কার্যালয় জানায়, কিছু ক্ষেত্রে বিক্ষোভকারীদের ওপর নিরাপত্তা বাহিনী নির্বিচারে গুলি চালানোয় অনেক সাংবাদিক হতাহত হয়েছেন। তবে কেবল পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্যও নিরাপত্তা বাহিনীর হামলার শিকার হয়েছেন সাংবাদিকরা। এমনকি কিছু ক্ষেত্রে বিক্ষোভকারীরাও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে।

প্রতিবেদনে অনুযায়ী, কিছু ক্ষেত্রে পুলিশ সরাসরি সাংবাদিকদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়েছে, সাংবাদিকদের পিটিয়েছে এবং আন্দোলনের ছবি তোলার জন্য ফটোসাংবাদিকদের হুমকি দিয়েছে।

৪ আগস্ট নিজেদের পরিচয় দেওয়ার পর এক দল সাংবাদিকের ওপর গুলি চালায় 'আওয়ামী লীগ সমর্থকরা'। একইদিনে, শাহবাগে দুই নারী সাংবাদিককে হামলার হুমকি দেয় আওয়ামী লীগ সমর্থকরা।

সেদিন ফার্মগেট এলাকায় এক ফটোসাংবাদিককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করে বিক্ষোভকারীরা।

'স্থানীয় গণমাধ্যম বিক্ষোভকারীদের হত্যার সংবাদ' ঠিকভাবে প্রচার করছে না, এই অভিযোগ এনে আরও কিছু সাংবাদিককে মারধর করেছে আন্দোলনকারীরা। ১৯ জুলাই আন্দোলনকারীদের হামলার মুখে এক সাংবাদিক 'বিদেশি গণমাধ্যমের হয়ে কাজ করছেন' বলে পরিচয় দিলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় বলে জানায় জাতিসংঘের সংস্থাটি।

গণমাধ্যমের ওপর ডিজিএফআই-এনএসআইয়ের হুমকি-ধমকি

প্রতিবেদনে বলা হয়, শেখ হাসিনা সরকার সাংবাদিকদের ভয়ভীতি প্রদর্শন ও গ্রেপ্তার করে মতপ্রকাশ ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করেছে। অনেক সাংবাদিক আওয়ামী লীগের ঘনিষ্ঠ গণমাধ্যম মালিকদের চাপেও স্বাধীনভাবে সাংবাদিকতা করতে পারেননি।

বিক্ষোভ ও সরকারের দমনপীড়ন নিয়ে কিছু গণমাধ্যম মিথ্যা তথ্য প্রকাশ করেছে, যা আসলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মাধ্যমে ছড়ানো হয়েছিল।

তথ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, ডিজিএফআই (প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর) ও এনএসআই (জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর) কর্মকর্তারা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের সম্পাদক ও সাংবাদিকদের অফিসে ও বাড়িতে গিয়ে হুমকি দিয়েছে এবং প্রতিবেদন পরিবর্তন করতে বাধ্য করেছে।

তথ্য মন্ত্রণালয় ও ডিজিএফআইয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও এই হুমকি-ধামকিতে ভূমিকা পালন করেছেন বলে জানায় মানবাধিকার কার্যালয়।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, র‍্যাব সদস্যরা একটি গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে সাংবাদিকদের লাঞ্ছিত করেছে। সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ সংবলিত তথ্য পেয়েছেন, এমন একজন সাংবাদিকের পরিচয় দিতে বাকিদের অস্ত্রের মুখে বাধ্য করার চেষ্টাও করেছে।

এনএসআই কর্মকর্তারাও এই তথ্য প্রকাশ না করতে সেই গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানকে হুমকি দিয়েছে।

Comments

The Daily Star  | English
govt employees punishment rule

Govt employees can now be punished for infractions within 14 working days

Law ministry issues ordinance amending the Public Service Act, 2018

1h ago