‘ডিসেম্বরের মধ্যে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজন সম্ভব নয়’

নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্ভবপর হবে না বলে মনে করছেন। মূলত দীর্ঘ প্রক্রিয়া এবং বিপুল কর্মযজ্ঞের কারণে এটি সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন তারা।

এমন এক সময়ে এই মন্তব্য এলো, যখন কোন নির্বাচন আগে হবে তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিয়েছে।

কমিশন জানিয়েছে তারা ডিসেম্বরে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিচ্ছে এবং কর্মকর্তারা বলছেন যে ভোটার তালিকা হালনাগাদ-- নতুন ভোটার নিবন্ধন ও মৃত ব্যক্তির নাম বাদ দেওয়ার কাজ জুনের আগে সম্পন্ন করা কঠিন হবে।

নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান- সিটি করপোরেশন, উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা কাউন্সিল এবং ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে প্রায় এক বছর সময় লাগে।

ভোটার নিবন্ধন এবং মৃত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়ার কাজ জুন পর্যন্ত চলবে বলে জানান তিনি।

এর অর্থ নির্বাচন কমিশন যদি এখন থেকেই স্থানীয় নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করে, তাহলেও ডিসেম্বর মাসে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য পর্যাপ্ত সময় থাকবে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নির্বাচন কমিশনার বলেন, 'আমরাও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিও পর্যবেক্ষণ করছি। আমরা সবাই জানি ৫ আগস্টের পর থেকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মনোবল তলানিতে। পুলিশের মনোবল কম থাকা অবস্থায় স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা বুদ্ধিমানের কাজ হবে না।'

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এর আগে বলেছিলেন এই বছরের শেষের দিকে সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে।

গত বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাসুদ বলেন, 'আমরা এই মুহূর্তে স্থানীয় নির্বাচন নিয়ে ভাবছি না। স্থানীয় নির্বাচন সাধারণত পর্যায়ক্রমে অনুষ্ঠিত হয়। যদি আমরা এই মুহূর্তে স্থানীয় নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু করি, তাহলে ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মধ্যে সংসদ নির্বাচন করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়বে।'

ঢাকার ধামরাইয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন কমিশনের মূল লক্ষ্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

তিনি আরও জানান, 'স্থানীয় নির্বাচনের বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে আমরা কোনো অনুরোধ পাইনি।'

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ

বিএনপি ও তার মিত্ররা স্থানীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন চায়, যেখানে জামায়াত এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির অবস্থান এর বিপরীতে।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার শুক্রবার এক সমাবেশে বলেন, জনদুর্ভোগ কমাতে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন হওয়া উচিত।

এর এক দিন আগে, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, 'সরকার যখন নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে বা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ হচ্ছে, তখন কেন পরিস্থিতি আরও জটিল করার চেষ্টা করছে...? মানুষ এটা বুঝতে পারছে না।'

তিনি আরও বলেন, গণতন্ত্রপ্রেমী নাগরিকরা বিশ্বাস করেন যে জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলে, 'পলাতক স্বৈরাচারের দোসরদের.. এবং গণহত্যা, অর্থপাচার এবং মাফিয়া কর্মকাণ্ডের জন্য দায়ীদের' পুনর্বাসনের পথ খুলে দেবে।

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেন, তার ব্যক্তিগত মতামত জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন করাটা ভালো হবে, কারণ সুষ্ঠু জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

তবে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করেই সরকারের পক্ষ থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত আসবে বলে জানান তিনি।

এদিকে গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশনের প্রাথমিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের জুনের মধ্যে স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব হতে পারে। এতে আরও বলা হয়, সময় এবং খরচ বাঁচাতে সকল স্থানীয় সরকার নির্বাচন একক তফসিলের অধীনে পরিচালনা করা যেতে পারে।

এ বিষয়ে ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সে সময় বলেছিলেন কমিশন আনুষ্ঠানিকভাবে সুপারিশগুলো সম্পর্কে অবগত নয়।

ফেব্রুয়ারির শেষ ১৫ দিন ধরে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, বাম গণতান্ত্রিক জোটসহ আরও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল আলাদাভাবে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করেছে। বিএনপি এবং এলডিএ স্থানীয় নির্বাচনের আগে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিরোধিতা করে এবং জামায়াত সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচনের পক্ষে ছিল।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রথম সভায় কমপক্ষে আটজন রাজনৈতিক নেতা জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিরুদ্ধে মত দিয়েছিলেন। কেউ কেউ সতর্ক করেছিলেন যে এই ধরনের নির্বাচন 'রক্তপাত এবং বিশৃঙ্খলা' সৃষ্টি করতে পারে।

ইসি কর্মকর্তারা আরও উল্লেখ করেন যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ইউনিয়ন পরিষদ ছাড়া সব স্থানীয় সরকার সংস্থার প্রতিনিধিদের অপসারণ করে মেয়র ও চেয়ারম্যানদের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশাসক নিয়োগ করেছে।

ফলে ১১টি সিটি করপোরেশন, ৬১টি জেলা পরিষদ, ৪৯৪টি উপজেলা পরিষদ এবং ৩৩১টি পৌরসভায় নির্বাচনের প্রয়োজন হবে।

সর্বশেষ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০২১ সালের ২১ জুন ২০২২ সালের থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। ৪ হাজার ৫৭৫ জন ইউনিয়ন পরিষদ প্রতিনিধির মধ্যে অনেকেই বর্তমানে পলাতক।

১৯৯০, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে অন্তর্বর্তীকালীন বা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কোনো স্থানীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি।

একইভাবে, ২০০৭ সাল ২০০৯ সালের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে কোনো ইউনিয়ন, উপজেলা বা পৌরসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে, সিলেট, খুলনা, বরিশাল এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০০৮ সালের ৪ আগস্ট।

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে অনুষ্ঠিত ১৯৯০ সালের নির্বাচনের প্রায় ১৯ বছর পর ২০০৯ সালে তৃতীয় উপজেলা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

Comments

The Daily Star  | English

Distressed loans surge to Tk 7.56 lakh cr

Distressed loans at banks soared 59 percent to a record Tk 756,526 crore in 2024, laying bare the fragile state of the country’s financial sector.

6h ago