কিন্ডল কেনার আগে যে তথ্যগুলো জানা প্রয়োজন

কিন্ডল
ছবি: অর্কিড চাকমা

কাজের প্রয়োজনে যখন আমার ঘন ঘন বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করতে হচ্ছিল, তখনই মূলত কিন্ডল কেনার কথা মাথায় আসে। সময়ের সঙ্গে কেনার আগ্রহ আরও পাকাপোক্ত হয় যখন আমি হিসাব করে দেখি যে ঠিক কত সময় যাতায়াতে পথে ব্যয় হয় আমার।

আবার বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়ার সময় যখন দীর্ঘক্ষণ বাসে বসে থাকতে হয়, তখন মনে হয় অকারণ যানজটে বসে সময়গুলো নষ্ট করছি। আমি জানি সময় কাটাতে বই পড়া যেতে পারে। কিন্তু আমার ব্যাগ সময় ক্লাসের বই-খাতায় ভর্তি থাকে, ফলে পড়ার জন্য অন্য বই নেওয়ার জায়গা আর সেখানে থাকে না।

আর সেখান থেকেই কিন্ডল কেনার ভাবনা আমার মাথায় ঢুকল। একটি গোটা লাইব্রেরিকে হালকা ওজনের এই ডিভাইসে ধারণ করার বিষয়টি কেবল সুবিধাজনকই নয়, প্রায় অপরিহার্য। কিন্ডল কেনার পর থেকেই আমার পড়ার পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে।

অন্যান্য ডিজিটাল ডিভাইসের সঙ্গে কিন্ডলকে তুলনা করবেন না। অন্যান্য ডিভাইস যেখানে আপনার মনোযোগ ক্রমাগত বিক্ষিপ্ত করে, সেখানে কিন্ডল আপনার মনোযোগ ধরে রাখে।

স্ট্যাটিসিয়ার একটি প্রতিবেদন অনুসারে, ২০২৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা প্রতিদিন অন্তত ছয় ঘণ্টা ৩৬ মিনিট অনলাইনে কাটিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে কেউ যদি গুরুত্বপূর্ণ কোনো বিষয় নিয়েও কাজ করতে চান তাহলে ক্রমাগত আসা নোটিফিকেশনসহ অন্যান্য বিষয় তার মনোযোগে বিঘ্ন ঘটায়। এখানেই ডিজিটাল ডিভাইসের চেয়ে কিন্ডল আলাদা। এটি আপনাকে ডিজিটাল ডিভাইসের সুবিধা দেবে, সেইসঙ্গে অন্যান্য ডিভাইসের মতো কোনও বিঘ্ন না ঘটিয়েই আপনাকে মনোযোগের সঙ্গে বই পড়ার সুযোগ দেবে। কিন্ডল হলো এমন ডিজিটাল ডিভাইস, যা ডিজিটাল জগতের সব কোলাহল থেকে মুক্ত।

কিন্ডল সাশ্রয়ী জিনিস নয়, বেশ দাম দিয়েই কিনতে হয়। তবে এর বেশ অনেকগুলো ধরন আছে, যেখান থেকে নিজের প্রয়োজন ও বাজেট অনুযায়ী আপনি কিনে নিতে পারেন। শুরুতেই আছে টেনথ জেনারেশনের কিন্ডল বেসিক। যা একেবারেই প্রাথমিক মডেল, এতে থাকে আট গিগাবাইট স্টোরেজ। ফাইলের আকার ও ফর্ম্যাটের ওপর নির্ভর করে পাঁচ হাজার ই-বুক এই কিন্ডলে জমা করা সম্ভব। এতে আছে ই-লিংক ডিসপ্লে যা পড়ার সময় চোখকে আরাম দেয়। পাশাপাশি এটি এমনভাবে নকশা করা হয়েছে যে আপনার মনে হবে বাস্তবের কাগজের বইই পড়ছেন। ঘরে-বাইরে এমনটি তীব্র সূর্যালোকের মধ্যে পড়ার জন্যও এটি যথাযথ।

তবে ব্যবহারের সময় এটা মনে রাখতে হবে যে সব কিন্ডল পানি প্রতিরোধী বা ওয়াটারপ্রুফ নয়।

কিন্ডল পেপারহোয়াইট সিরিজ বেসিক মডেল থেকে একধান এগিয়ে। পেপারহোয়াইট ফোর থেকে শুরু হয়ে এতে এসেছে পেপারহোয়াইট ফাইভ মডেল। সবশেষ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে পেপারহোয়াইট সিক্স সিগনেচার এডিশন। এই মডেলগুলোয় ৮ গিগাবাইট থেকে শুরু করে ৩২ গিগাবাইট পর্যন্ত স্টোরেজ রাখার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে রাতে পড়ার আরও আরামদায়ক অভিজ্ঞতার জন্য উষ্ণ আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।

পেপারহোয়াইট সিরিজের কিন্ডলগুলো আলাদা ব্যবহারকারীর কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে, পেপারহোয়াইট ফাইভ তুলনামূলক পাতলা কিন্তু এর ডিসপ্লের আকার বেশ বড়, ৬ দশমিক ৮ ইঞ্চির। অন্যদিকে সিগনেচার এডিশনের পেপারহোয়াইটে তারবিহীন চার্জিং ব্যবস্থা এবং ফ্রন্ট লাইট স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা যুক্ত হয়েছে।

কিন্ডল ডিভাইসগুলো তাদের ব্যাটারি লাইফের জন্য বিখ্যাত। যা একবার চার্জ দিলে এক মাস বা তার বেশি সময় ধরে চলতে সক্ষম। এই বৈশিষ্ট্যের কারণে কিন্ডলগুলো ভ্রমণবান্ধব এবং ঝামেলামুক্ত। যা পাঠককে বারবার চার্জ দেওয়ার চিন্তা থেকে দূরে রাখে এবং নিরবচ্ছিন্নভাবে পড়তে সাহায্য করে। আমার মতো পাঠকের জন্য কিন্ডলের দীর্ঘ ব্যাটারি লাইফ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বহনযোগ্য হওয়ার পাশপাশি কিন্ডলে থাকে ব্লুটুথের মাধ্যমে কোনও একটি লিসেনিং ডিভাইস যুক্ত করার সুবিধা। এটি তাদের জন্য খুব ভালো যারা অ্যামাজনের অডিবল সার্ভিসের মাধ্যমে অডিওবুক শুনতে পছন্দ করেন। এক জোড়া ব্লুটুথ হেডফোন বা স্পিকারের মাধ্যমে যে কেউ চাইলে নির্বিঘ্নে পড়া এবং বই শোনার কাজ চালিয়ে যেতে পারেন।

অন্যান্য ই-রিডিং সার্ভিস যেমন কোবো বা নুকের সঙ্গে তুলনা করলে কিন্ডল মূলত অ্যামাজনের ইকোসিস্টেমের জন্য আলাদা হয়ে ওঠে। কিন্ডল স্টোরে রয়েছে বইয়ের বিপুল সংগ্রহ, যার মধ্যে এমন কিছু বইও রয়েছে যেগুলো আর অন্য কোনো প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যায় না।

কিন্ডল ব্যবহারকারীরা কিন্ডল আনলিমিটেডের সুবিধা নিতে পারেন। এই পরিষেবাটি সাবস্ক্রাইব করলে ব্যবহারকারীর সামনে চলে আসে ২০ লাখের বেশি ই-বুক, অডিওবুক এবং ম্যাগাজিন। যেখান থেকে যা খুশি তারা বেছে নিয়ে পড়তে পারেন। আবার অ্যামাজনের প্রাইম মেম্বারদের জন্যও থাকে বিশেষ সুবিধা, যেখানে তারা বাড়তি খরচ ছাড়াই বিশেষায়িত বই ও ম্যাগাজিনের সংগ্রহে প্রবেশের সুবিধা পান।

কিন্ডলে ওভারড্রাইভ ও লিব্বির মতো পরিষেবা থেকে লাইব্রেরির সুবিধা উপভোগ করা যায়। যার ফলে ব্যবহারকারীরা সহজেই ই-বুক ধার করতে পারেন এবং নিজের ডিভাইসেই পড়ে শেষ করতে পারেন। কোবোর মতো প্রতিযোগীর তুলনায় কিন্ডল ব্যবহার অনেক বেশি সহজ এবং বইয়ের সংগ্রহের দিক থেকে বিশালতার কারণেই বেশিরভাগ পাঠক ই-রিডার হিসেবে কিন্ডলকেই বেছে নেন।

তবে যারা আরও কাস্টমাইজেশন ও উন্নত বৈশিষ্ট্যের খোঁজ করেন তারা কোবো লিবরা বা কোবো এলিপসা কিনতে পারেন। এতে পিডিএফ ফাইল আরও সহজে ব্যবহার করা যায়, নোট নেওয়ার জন্য বেশ ভালো সুবিধা রয়েছে এবং সাইড লোডেড কনটেন্টকেও এগুলো সমর্থন করে। অন্যদিকে নুক এ মুহূর্তে কিন্ডলের ফিচার আর ইকোসিস্টেমের সঙ্গে মিল রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যদিও এতে পাঠকদের জন্য বার্নেস অ্যান্ড নোবেল এর ইকোসিস্টেম যুক্ত করা হয়েছে।

সব শেষ কথা হলো, কিন্ডলকে যা অন্যদের থেকে আলাদা করে তা হলো আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে কাগজের বইয়ের চমৎকার মেলবন্ধন। এর বিস্তৃত কন্টেন্টসমৃদ্ধ লাইব্রেরি, সাবস্ক্রিপশন সুবিধা, বহনযোগ্যতা এবং দীর্ঘ ব্যাটারি লাইফ কিন্ডলকে বিশেষ করে তোলে। আপনি যেখানে, যে পরিস্থিতিতেই থাকুন না কেন, আপনি যেন আনন্দের সঙ্গে পড়তে পারেন, সে বিষয়টির ওপরই মনোনিবেশ করে কিন্ডল। আর সে কারণেই ই-বইয়ের পাঠকদের কাছে এর এত জনপ্রিয়তা।

অনুবাদ করেছেন শেখ সিরাজুম রশীদ

 

Comments

The Daily Star  | English
Prof Yunus in Time magazine's 100 list 2025

Prof Yunus named among Time’s 100 Most Influential People of 2025

A tribute article on Prof Yunus was written by Hillary Clinton for the magazine

2h ago