বিএসইসিতে বিশৃঙ্খলার উদ্দেশ্য দুর্নীতিবাজদের রক্ষা করা

বিএসইসি
ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশের দাবি-দাওয়া নিয়ে চলতি মাসের শুরুতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছিল মূলত তদন্তে প্রকাশিত শেয়ার কারসাজিকারীদের বাঁচাতে। এমনটাই মনে করছে কমিশন।

বিএসইসি এই বিক্ষোভকে বিশৃঙ্খলা হিসেবে আখ্যা দিয়েছে। এই বিক্ষোভের কারণে সংস্থাটি দুই দিন অচল ছিল। সেসময় বিএসইসির কর্মীরা শীর্ষ নেতৃত্বের ওপর চড়াও হয়।

আন্দোলনরত কর্মকর্তারা পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার শীর্ষ নেতৃত্বের পদত্যাগ দাবি করলেও বিএসইসির চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনার তাদের দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

গত সপ্তাহে আন্তঃমন্ত্রণালয় তদন্ত চেয়ে বিএসইসির প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে (এফআইডি) পাঠানো হয়েছে।

গত ৫ মার্চ দুর্নীতির অভিযোগে বরখাস্ত হওয়া এক কর্মকর্তার পুনর্বহালের দাবিতে চেয়ারম্যান ও তিন কমিশনারকে বৈঠক কক্ষে অবরুদ্ধ করে রাখেন বিএসইসির কর্মকর্তারা।

চিঠিতে বিএসইসি বলেছে—বিএসইসি চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কমিশন সভায় একদল উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা-কর্মচারী জোর করে সভাকক্ষে ঢোকেন। এটি পেশাগত শিষ্টাচারের সম্পূর্ণ পরিপন্থি।

'এরপর তারা বিদ্যুৎ, ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন (সিসিটিভি) ক্যামেরাসহ অন্যান্য ডিভাইস বন্ধ করে কমিশনকে প্রায় চার ঘণ্টা জিম্মি করে রেখে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন।'

'তারা চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অকথ্য ভাষায় গালি দেন। তাদের দিকে এসির রিমোট ছুড়ে মারেন।'

এ ছাড়াও, প্রাথমিক তদন্তে চেয়ারম্যানের একান্ত সচিবকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করার অভিযোগ আনা হয়েছে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে সেনা সদস্যরা হস্তক্ষেপ করেন। শীর্ষ নেতৃত্বকে উদ্ধারে লাঠিচার্জ করতে হয়েছিল। পরে বিএসইসি প্রাঙ্গণ থেকে তাদের বের করে দেওয়া হয়।

তদন্তে বলা হয়—ধারণা করা হচ্ছে, উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ ধরনের অবৈধ কাজে লিপ্ত হয়ে শেয়ার কেলেঙ্কারি ও লুটপাটে জড়িতদের পক্ষ নিয়েছেন। তারা অপরাধীদের আইনি জবাবদিহিতা থেকে আড়ালের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।

অস্থিরতার মূল কারণ হিসেবে বিএসইসি জানিয়েছে—বিগত সরকারের আমলে ঘটে যাওয়া দুর্নীতি ও অনিয়ম তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছিল।

এই কমিটির একাধিক প্রতিবেদনে বিএসইসির সাবেক চেয়ারম্যান, কমিশনার ও কর্মকর্তাসহ পুঁজিবাজার কারসাজির সঙ্গে জড়িত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে চিহ্নিত করা হয়।

এরপরই কারণ দর্শানোর নোটিশ ও জড়িতদের ব্যাখ্যা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কমিশন। তদন্তের ভিত্তিতে কয়েকজন কর্মকর্তাকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়।

গুরুতর অনিয়মের কারণে সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে অবসরে যেতে বাধ্য করা হয়েছে বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি।

এতে আরও বলা হয়, উচ্ছৃঙ্খল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সাবেক নির্বাহী পরিচালকের অবসরকালীন আদেশ বাতিলের জন্য কমিশনের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করেন।

তারা কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রত্যাহার ও তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাতিলের দাবিতে প্রতিবাদ করতে থাকেন।

চিঠিতে বলা হয়, বিএসইসির বিভাগীয় কর্মকাণ্ড বন্ধে এ ধরনের সহিংসতা পেশাগত নৈতিকতার পরিপন্থি, অগ্রহণযোগ্য ও নিন্দনীয়।

গত ৬ মার্চ বিএসইসির চেয়ারম্যানের নিরাপত্তাকর্মীরা ভাঙচুর ও বিশৃঙ্খলার অভিযোগে কয়েকজন কর্মকর্তাকে আসামি করে শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেন।

সংঘর্ষের সময় সংবাদ সম্মেলন করা বিএসইসির যেসব কর্মকর্তা-কর্মচারী দাবি তুলেছিলেন তাদের সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়। তবে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেছে যে এ বিষয়ে তারা অবগত ছিলেন না।

এদিকে বিএসইসিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে হলে এ ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্তের পর যথাযথ সুপারিশ দিতে হবে।

এ লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইন মন্ত্রণালয় ও অর্থ বিভাগের প্রতিনিধির সমন্বয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠনের অনুরোধ জানিয়েছে বিএসইসি।

বিএসইসি ক্রিটিক্যাল ইনফরমেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার (সিআইআই) শ্রেণিবদ্ধ হওয়ায় ভবিষ্যতে যে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে আনসারের মতো সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মী মোতায়েন করা হবে।

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ও নাশকতায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিএসইসির কাঠামোগত সংস্কারে ফিন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশনস ডিভিশনের সহযোগিতা প্রয়োজন।

বিএসইসির কর্মকর্তাদের ওপর পুরো নির্ভরশীলতা এড়াতে, কাজের মান উন্নয়ন, কাজের গতি বাড়ানো ও ক্ষেত্রবিশেষে গোপনীয়তা বজায় রাখতে ১৯ সরকারি কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছে কমিশন। এই কর্মকর্তাদের অর্থনীতি, বাণিজ্য, হিসাববিজ্ঞান, পরিসংখ্যান, গণিত, আইন বা তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ে ডিগ্রি থাকতে হবে।

এম মাশরুর রিয়াজকে বিএসইসির চেয়ারম্যান নিয়োগ দেওয়ার প্রতিবাদের পেছনে কারণ বের করতেও এফআইডির তদন্ত চেয়েছে বিএসইসি।

এতে আরও বলা হয়, পেশাদারিত্ব বাড়াতে বিএসইসির কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি জরুরি।

এ ছাড়াও, গত ৫ মার্চের ঘটনার পর চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের নিরাপত্তা চেয়েছে বিএসইসি।

Comments

The Daily Star  | English

Can't afford another lost decade for education

Whenever the issue of education surfaces in Bangladesh, policymakers across the political spectrum tend to strike a familiar chord. "Education is our top priority," they harp

3h ago