‘ওয়াকফ’ আইনে ভারতে মুসলিমদের অধিকার খর্বের ও বৈষম্যের চেষ্টা করা হয়েছে: বিএনপি

বিএনপি

ভারতের লোকসভায় পাস হওয়া বিতর্কিত ওয়াকফ সংশোধনী আইনটি আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে পুনর্বিবেচনা করা হবে এমন আশা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি।

আজ রোববার বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ এমন আশা প্রকাশ করেন।

তিনি বলেন, 'অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মতো সংগঠনগুলোর মতে এই আইন ইসলামি ওয়াকফ ব্যবস্থার মূল চেতনার পরিপন্থি। তাদের মতে ওয়াকফ বোর্ডের পরিচালনায় মুসলমানদের দ্বারাই হওয়া উচিত। তারা একে মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল বলে অভিমত দিয়েছেন।'

সালাহউদ্দিন বলেন, 'ভারতের মতো একটি বৃহৎ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সকল ধর্মাবলম্বী নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকার রক্ষায় রাষ্ট্রের অভিভাবকত্বের ভূমিকাকে সমুন্নত রেখে এই আইনটি ভারত সরকার পুনর্বিবেচনা করবে, আমরা এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।'

'আঞ্চলিক সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে এই পদক্ষেপ একটি ঐতিহাসিক ভূমিকা পালন করবে বলে আমরা মনে করি,' বলেন তিনি।

গত বুধবার লোকসভায় বিলটি ২৮৮-২৩২ ভোটে পাস হয়। নিম্নকক্ষে পাস হওয়ায় এটি এখন রাজ্যসভায় যাবে। সেখানে পাস হলে যাবে ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর কাছে। তিনি সই করলে সেটি আইনে পরিণত হবে।

ভারতের সংখ্যালঘু মুসলিমদের ইসলামি দানের প্রাচীন ব্যবস্থা 'ওয়াকফ' জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, 'আইনটির বিভিন্ন ধারা বিশ্লেষণ করে আমরা দেখেছি যে, ভারতের সংখ্যালঘু মুসলমানদের অধিকার খর্ব করা এবং বৈষম্যমূলক আচরণের চেষ্টা করা হয়েছে এই আইনে। ভারতের মুসলমানরা এবং বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন "মুসলিম ওয়াকফ (সংশোধন) বিল-২০২৪" অসাংবিধানিক ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।'

বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, 'ভারতের জনসংখ্যার ১৪ শতাংশ অর্থাৎ প্রায় ২০ কোটি মুসলমানদের ধর্মীয় ঐতিহ্য, অধিকার, সংস্কৃতি ও স্বার্থবিরোধী এই আইনকে অপব্যবহারের যথেষ্ট সুযোগ রয়েছে, যা ইসলামী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনার ক্ষেত্রে ব্যাপক বিপর্যয়কর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে।'

'ভারতে ওয়াকফ বোর্ডগুলোর অধীনে প্রায় ১০ লাখ একর সম্পত্তির মধ্যে অধিকাংশই ব্যবহৃত হয় মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থান ও এতিমখানার মতো জনকল্যাণমূলক কাজে। নতুন আইনে পরিচালনা বোর্ডে অমুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভূক্তির বিষয়টি বিতর্কের সৃষ্টি করেছে, যার ফলে মুসলিম নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হতে পারে,' যোগ করেন তিনি।

সালাহউদ্দিন আরও বলেন, 'মুসলমানদের ধর্মীয় অধিকারে হস্তক্ষেপের কারণে এবং বৈষম্যমূলক আচরণের ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের আশঙ্কা দেখা দিতে পারে, এ রকম কোনো পদক্ষেপ রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে গ্রহণ করা সমিচীন নয় বলে আমরা (বিএনপি) মনে করি।'

পাস হওয়া ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিম সদস্যের অন্তর্ভুক্তির বিষয়টি তুলে ধরে সালাহউদ্দিন বলেন, 'ভারতে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের এই জাতীয় বোর্ডে অথবা কোনো আইনি সংগঠনে ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের কোনো অন্তর্ভুক্তি দেখা যায় না। সেক্ষেত্রে, এই আইনটি একটি বৈষম্যমূলক আইন হিসেবে বিবেচিত হবে।'

'নতুন আইনে পরিবর্তনগুলো শত শত বছর আগে প্রতিষ্ঠিত ওয়াকফ জমির ওপর গড়া মসজিদ এবং অন্যান্য ইসলামী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত করে তুলতে পারে,' বলেন তিনি।

বিএনপির এই নেতা বলেন, 'নতুন আইনে অমুসলিম সদস্যদের এই সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ও প্রশাসনিক দায়িত্ব পালনে যে এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে, তা মুসলিম নাগরিকদের ধর্মীয় অধিকারে সরাসরি হস্তক্ষেপের শামিল।'

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউল্লাহ ও আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন।

Comments

The Daily Star  | English
new industrial gas price hike

New industrial, captive gas users to pay 33% more

From now on, new industrial connections will be charged Tk 40 per cubic metre

2h ago