কেন যাবেন গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে

বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্ক
বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্ক।

স্যুট-কোটের আভিজাত্যে গুলশানের এলাকা সবসময়ই থাকে লোকারণ্যে ভরপুর। পাঁচিলঘেরা শহরটিতে চলতে ফিরতে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়লে ফুরসত নেওয়ার ইচ্ছে যদিও বা হয় বহুবার, কাজের বোঝা কাঁধে নিয়ে বেরুনোর উপায় পাওয়া মুশকিল। হয়তো এজন্যই গুলশানের আশেপাশে একটু আধটু সবুজ পরশের দেখা পাওয়া যায়। এমনই এক স্নিগ্ধ পরিবেশের খোঁজ মেলে গুলশান ২ এর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কের ভেতরে গেলে।

ব্যস্ত রাস্তা পেরিয়ে পার্কে পা রাখতেই মনে হয় অন্য এক শহরে ঢুকলাম বোধহয়। কোলাহল যত ছিল, সব যেন নিমিষে মিলিয়ে গেল। মনটাও হঠাৎ শান্ত হয়ে যায় নিরবতার আলিঙ্গনে। চলুন তাহলে ঘুরে আসি পার্কের রাস্তা ধরে।

শুরুতেই চোখে পড়বে ইট-সুরকির খানিকটা প্রশস্ত রাস্তা। যার দুপাশে রয়েছে নানা আয়োজনের ব্যবস্থা। ডানে রয়েছে বইপ্রেমীদের প্রিয় জায়গা 'বুকওর্ম', আর বায়ে রয়েছে বাস্কেটবল খেলার জায়গা। কোথায় যাবেন আগে? চলুন বইয়ের রাজ্য থেকে ঘুরে আসি প্রথমে।

বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্ক

বুকওর্ম নিয়ে নতুন কিছু বলার নেই। যারা বই পড়তে ভালোবাসেন, তাদের কাছে বুকওর্ম চিরচেনা। আগের জায়গা বদলে বুকওর্মের নতুন ঠিকানা হয়েছে বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কে। নতুনভাবে সেজেছে বুকওর্ম এখানে। বেশ খানিকটা জায়গাজুড়ে থাকা বুকওর্ম সবাইকে আহবান জানায় মাটির টবে ঝুলন্ত হরেক পাতাবাহারের সজ্জায়। মাঝখানেও রয়েছে গাছের মালিকানা। দুপাশে দুটি সুন্দর পেঙ্গুইন বুকওর্মে  জানাবে আমন্ত্রণ বার্তা। বুকওর্মে গেলে নানা ধরনের বইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ সেরে আসতে পারেন চাইলে। আর হ্যাঁ, এদিক সেদিক তাকালে বিড়ালের পাইচারি উপভোগ করতে পারেন মনের আনন্দে।

বন্ধুদের সঙ্গে গেলে সাথে করে বল নিয়ে আসতে পারেন ইচ্ছে হলে। শহরের আশেপাশে খেলার মাঠের টিকিটি আর পাওয়া যায় না যেহেতু ইদানীং, পার্কের বাস্কেটবল কোর্টে সেই আনন্দ ফিরে পেতে পারবেন সহজে৷

এই পার্কে বাচ্চাদের নিয়ে ঘুরতে আসেন অনেকে। এখানে এলে চোখে পড়ে কেউ ঝুলছে দড়ি ধরে, কেউ দুলছে দোলনায় করে, কেউ টায়ারের উপর বসে দোল খাচ্ছে, কেউ রঙের বল মেলাচ্ছে, কেউ কেউ বন্ধুর সঙ্গে চক্কর কেটে গল্পে মেতে আছে। এখানে এলে ছোটবেলার দিনগুলোর কথা মনে পড়ে যায়। চারপাশে বাচ্চাদের হাসতে খেলতে দেখে মন ভালো না হয়ে যাবে কোথায়!

বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্ক

পার্কটিতে রয়েছে হাঁটাপথের সঙ্গে সাইকেল চালানোর রাস্তা। সকাল-বিকাল অনেকে হাঁটাহাঁটি করেন এখানে, কেউ আবার জগিং করেন সময় পেলে। এ ছাড়া হালকা ব্যায়াম করার সুযোগও রয়েছে এ পার্কে।

এখানে বিশাল জায়গাজুড়ে রয়েছে জলাধার। যার চারপাশে রাখা হয়েছে হাঁটার রাস্তা। রয়েছেন বসার জায়গা। যেখানে বসে একসাথে অনেকে গল্প করতে পারে। নাম রাখা হয়েছে উন্মুক্ত মঞ্চ। যার ছবি দেখলেই চেনা যায় এটিই সেই বিচারপতি শাহাবুদ্দিন আহমদ পার্ক। পার্কটির সবচেয়ে নজরকাড়া সৌন্দর্য হলো চারপাশে ঘেরা গাছের মধ্যে দিয়ে বানানো রাস্তা। যার নামকরণ করা হয়েছে 'কিয়স্ক'। এখানে রয়েছে পানি পানের ব্যবস্থা, কিছু জায়গা পরপর বসার স্থান।

পার্কে হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত হয়ে গেলে গলা ভেজানোর রয়েছে 'গ্রামচা''। এখানে পাওয়া যাবে হরেক রকমের চা ও হালকা খাবার৷ দুধ চায়ের মধ্যে পাওয়া যাবে দুধ চা ৬০ টাকা, গুড়ের দুধ চা ৭০ টাকা, মসলা চা ৭৫ টাকা, মসলা তান্দুরি চা ২০০ টাকা, হট টিহ তারিক ২৫০ টাকা, ভিলেজ চা ৬০ টাকা, দুধ মালাই চা ৭৫ টাকা, মটকা চা ১০০ টাকা। বরফ চায়ের মধ্যে পাওয়া যাবে মাসালা আইসড চা ২০০ টাকা, সিনামন আইসড চা ১৫০ টাকা, মাল্টা আইসড চা ২০০ টাকা, লেমন আইসড চা ১৫০ টাকা, মিন্ট আইসড চা ১৮০ টাকা, আইসড টিহ তারিক ২৫০ টাকা। মৌসুম হলে স্ট্রবেরি, ড্রাগন ফ্রুট, ম্যাঙ্গো আইসড চাপ পেতে পারেন ২০০ টাকা করে। আরও পেতে পারেন মসলা লাল চা ৮০ টাকা, লেবু চা ৩৫ টাকা, পুদিনা চা ৩৫ টাকা, আদা চা ৩৫ টাকা, কালোজিরা চা ৩৫ টাকা, মাল্টা চা ৬০ টাকা, স্পেশাল আদা চা ৪০ টাকা, দারুচিনি চা ৩৫ টাকা, র চা ২০ টাকায়। গ্রামচার কাছাকাছি আছে নর্থ এন্ড ক্যাফে। কফিপ্রেমী হলে যেতে পারেন তাদের ঠিকানায়।

ছবি: আসরিফা সুলতানা রিয়া

 

Comments