বার্সেলোনার মাঠ থেকে ড্র করে ফিরল ইন্টার

ছয় বছর পর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালে ফিরেছে বার্সেলোনা। প্রতিপক্ষ এমন একটি দল, যারা শেষ তিন ম্যাচে হেরে কিছুটা কোণঠাসা। কিন্তু তারপরও ম্যাচটি হলো ড্র, জয় আসেনি। দারুণ দৃঢ়তা দেখিয়ে বার্সেলোনার মাঠ থেকে সমতা নিয়ে মাঠ ছেড়েছে ইন্টার মিলান।
বুধবার রাতে মন্তুজুইকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমি-ফাইনালের প্রথম লেগের ম্যাচে ইন্টার মিলানের সঙ্গে ৩-৩ গোলে ড্র করেছে বার্সেলোনা। ইন্টারের হয়ে জোড়া গোল করেছেন ডেঞ্জাল ডামফ্রিস, অপর গোলটি করেন মার্কাস থুরাম। বার্সেলোনার হয়ে একটি করে গোল করেছেন লামিন ইয়ামাল ও ফেরান তোরেস। অপর গোলটি আসে আত্মঘাতীর সুবাদে।
এদিন ম্যাচ শুরু হওয়ার ৩০ সেকেন্ড যেতেই পিছিয়ে পড়ে বার্সেলোনা। ২০ মিনিট যেতে হজম করে আরও একটি গোল। তবে প্রথমার্ধেই দুটি গোল শোধ করে কাতালান দলটি। দ্বিতীয়ার্ধে ফের পিছিয়ে পড়লেও মিনিট খানেকের মাথায় সমতায় ফেরে পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়নরা। ফলে জমজমাট লড়াই শেষে জেতেনি কেউ।
অথচ মাঠে নামার আগে বেশ ঠিক উল্টো অবস্থানে ছিল দুই দল। সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে শেষ তিনটি ম্যাচে হেরেছিল ইন্টার। তাতে কোপা ইতালিয়া থেকে বাদ পরার সঙ্গে সঙ্গে স্কুদেত্তোর লড়াইয়েও পিছিয়ে পড়ে দলটি। অন্যদিকে ঠিক উল্টো অবস্থানে বার্সেলোনা। শেষ তিন ম্যাচে জয় তো বটেই, এরমধ্যে রিয়াল মাদ্রিদকে হারিয়ে জিতেছে কোপা দেল রে'র শিরোপাও।
চলতি মৌসুমে এবার অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে কোপা দেল রে'র সেমি-ফাইনালে দুই গোলে পিছিয়ে থেকে ড্র করেছিল। পরে প্রতিপক্ষের মাঠে জিতে ফাইনালে ওঠে দলটি। সেই হিসেবে আবারও ড্র করে মিলানে যাচ্ছে তারা। সেই স্মৃতি থেকে আশাবাদী হতে পারে দলটি। যদিও ইতালির মাঠে খুব বেশি সুখস্মৃতি নেই তাদের।
তবে উত্তেজনাপূর্ণ সেমি-ফাইনালের বার্সা ছিল ছন্দে। যদিও শুরুতেই গোল হজম করে। কোপার ফাইনালের অপরিবর্তিত একাদশ প্রথমার্ধে বেশ দাপট দেখায়, কিন্তু একইসঙ্গে অনেক সুযোগও নষ্ট করে। লামিন ডান প্রান্ত দিয়ে দুর্দান্ত খেলে দুই অর্ধে দুটি শট পোস্টে মারেন।
অন্যদিকে ইন্টারের প্রথম তিনটি সুযোগই গোলে পরিণত হয়, যার দুটি ছিল কর্নার থেকে—যা এখন ফ্লিকের দলের এক বড় দুর্বলতা। যদিও দুই গোলে পিছিয়েও প্রথমার্ধে খেলা নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল বার্সা। সমতাও ফিরিয়েছিল, কিন্তু পরে যখন তারা জয় পেতে ঝাঁপাচ্ছিল, তখন ইন্টার সুযোগ কাজে লাগায়। যেখানে দুর্দান্ত খেলেছেন ডামফ্রিস।
ম্যাচের মাত্র ৩১ সেকেন্ডেই বার্সার জন্য ম্যাচ কঠিন করে তোলে ইন্টার। বার্সার প্রেসিং কাটিয়ে ডান প্রান্ত থেকে ডামফ্রিসের ক্রস, এরপর থুরামের অসাধারণ ব্যাকহিলে বল জালে জড়ায়। আকস্মিক গোল হজমের পর বার্সা শক্তভাবে ঘুরে দাঁড়ায়। ইন্টার তখন অনেকটাই রক্ষণাত্মক। ফেরানের দুটি প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। এরমধ্যেই ধারার বিপরীতে ইন্টারের দ্বিতীয় গোল আসে এক কর্নার থেকে। দিমারকোর পাস, আকেরবির ডাউন, আর ডামফ্রিসের শট—সব মিলিয়ে গোল।
দুই গোল হজম করে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে বার্সা। তখনই লামিন বল নিয়ে এমখিতারিয়ানকে কাটিয়ে বাম পায়ে দুর্দান্ত এক গোল করেন। এরপর আবারও পোস্টে শট মারেন দিমারকোকে কাটিয়ে। আর ওলমোর শট ঠেকান সোমার। এরপর তৃতীয়বারের চেষ্টায় গোল করেন ফেরান তোরেস। পেদ্রির কাছ থেকে বল পেয়ে ফেরানকে পাস দেন রাফিনিয়া। এবার নিখুঁতভাবে লক্ষ্যভেদ করেন এই স্প্যানিশ ফরোয়ার্ড।
তবে কুন্দের ইনজুরি ফ্লিকের পরিকল্পনায় বড় ধাক্কা— চলতি মৌসুমে এই ফরাসি ডিফেন্ডার দারুণ খেলছিলেন। তার জায়গায় নামেন এরিক গার্সিয়া। আর দ্বিতীয়ার্ধ শুরুতে আরাহো নামেন জেরার্ড মার্টিনের জায়গায়। ফলে চার সেন্টার ব্যাক নিয়ে খেলা বার্সার জন্য অস্বাভাবিক হলেও এতে কিছুটা রক্ষণে দৃঢ়তা আসে।
কিন্তু কর্নার থেকেই আবার গোল হজম করে বার্সা। চালহানোগ্লুর কর্নার থেকে দূর পোস্টে থাকা ডামফ্রিস দারুণ হেডে লক্ষ্যভেদ করেন। বার্সাও দ্রুত জবাব দেয়—তাদের গোলও আসে কর্নার থেকে। ওলমোর আকস্মিক পাসে রাফিনহা দুর্দান্ত শট মারেন। বল ক্রসবারে লেগে নিচে পড়ে সোমারের গায়ে লেগে জালে প্রবেশ করে। পরে ইয়ামাল আবারও একটি ক্রসবারে শট মারেন। তবে ইন্টার শেষ পর্যন্ত সমতা ধরে রাখে।
Comments