টি-টোয়েন্টি দল: যেসব প্রশ্নে নির্বাচকদের স্পষ্টতা নেই

এমনিতে বাংলাদেশের টি-টোয়েন্টি দল ঘোষণা নিয়ে বড় কোন চমকের আভাস ছিলো না। লিটন দাসের এই সংস্করণে স্থায়ী অধিনায়ক হওয়া ছিলো অনুমিত। দলের একটা আদলও আঁচ করা যাচ্ছিলো। যদিও কিছু চমক থাকলো। সহ-অধিনায়ক হিসেবে শেখ মেহেদীর নাম ঘোষণা করতেই যেমন সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত সবাই এ-ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করলেন। কেউই মনে করতে পারলেন না ঘরোয়া ক্রিকেটে মেহেদী কোথাও অধিনায়কত্ব করেছেন কিনা! এটা অবশ্য বিসিবির সিদ্ধান্ত, নির্বাচকদের আওতার বাইরে। নির্বাচকদের আওতার মধ্যে যা সেসব ব্যাখ্যাতেও যখন মিশে থাকল অস্পষ্টতা তাতে বোঝা গেল দল নির্বাচন আসলে ঘুরপাক খাচ্ছে পুরনো চক্রেই।
টি-টোয়েন্টিতে এমন পারফরম্যান্সের পরও শান্ত কেন দলে?
নাজমুল হোসেন শান্ত নিজেই টি-টোয়েন্টির বাজে ছন্দ টানতে পারছিলেন না, টানা রান খরায় অধিনায়কত্ব ছেড়ে দেন। মনে হচ্ছিলো বাকি দুই সংস্করণে ফোকাস বাড়াতে কুড়ি ওভারের ক্রিকেট থেকে আপাতত নিষ্কৃতি পেতে চান তিনি। তার পরিসংখ্যানও টি-টোয়েন্টি দলে জায়গা পাওয়ার মতন না। সর্বশেষ ১৮ ইনিংসে তার গড় ১৫.৮৩, স্ট্রাইকরেট ৯৮.৬১। ২৯ ইনিংসে ফিফটি স্রেফ একটি। ৪৯ টি-টোয়েন্টি খেলেও মাত্র ১০৮.৩৫ স্ট্রাইকরেটে খেলেছেন তিনি, গড়টাও কেবল ২২.৮৫।
গত বিপিএলে বেশিরভাগ ম্যাচে একাদশে জায়গা পাননি। পাঁচ ইনিংসে ব্যাট করে করতে পারেন মোটে ৫৬ রান। কোন হিসেবেই শান্ত এই সংস্করণে এর বিবেচনায় আসেন না। তাকে দলে রাখার ব্যাখ্যায় প্রধান নির্বাচক গাজী আশরাফ হোসেন লিপু বললেন, 'শান্ত আমাদের সাবেক অধিনায়ক ছিলেন। এছাড়া দলটার দিকে তাকিয়ে দেখুন, অভিজ্ঞতাও দরকার আছে। ওপরের দিকে সৌম্য আছেন, নব্বইয়ের কাছাকাছি ম্যাচ খেলেছেন। লিটন দাস আছেন। এরপর যদি আপনি তাকান, দেখবেন যে বিস্তর ফারাক আছে।'
এখানে ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা বিচার করলে নাঈম শেখ পিছিয়ে থাকেন না খুব একটা। ঘরোয়া ক্রিকেটে সাম্প্রতিক ছন্দ বিচার করলে তো তিনি শান্তর চেয়ে ঢের এগিয়ে। ৩৪টি আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি খেলা নাঈমেরও বদনাম ছিলো স্ট্রাইকরেট নিয়ে। তবে গত বিপিএলে তিনি ১৪৩ স্ট্রাইকরেটে পাঁচশোর বেশি রান করেছেন। অভিজ্ঞতার কথা ভাবলে তো নাঈমকেই নেওয়া যেত।
টপ অর্ডারে যেখানে বাঁহাতিদের জটলা বাড়িয়ে অভিজ্ঞতার জোরে টিকেছেন শান্ত। অথচ বিকল্প ছিলো আরও। মাহিদুল ইসলাম অঙ্কন হতে পারতেন তেমন একজন বিপিএলে ১৭৪ স্ট্রাইকরেটে তিনশোর বেশি রান করেছেন অঙ্কন। বিভিন্ন পজিশনে ব্যাট করতে পারেন তিনি, দলের সমন্বয়ের জন্য যা বেশ কজের। তাকে বিবেচনায় না নিয়ে শান্তর 'অভিজ্ঞতা' বেছে নেওয়া হয়েছে। সংযুক্ত আরব আমিরাত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে পর পর দুই সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। এসব সিরিজে দল থিতু করার পরিকল্পনা থাকা উচিত। কম অভিজ্ঞদের বরং এরকম সিরিজ খেলিয়ে পোক্ত হওয়ার সুযোগ দেয়া হতো আদর্শ। কিন্তু শান্তকে দলে রেখে নির্বাচকরা হাঁটলেন পেছনের পায়ে। এমন সিদ্ধান্তে নিজেদের ব্যাখায় তাদের নিজেদেরই সন্তুষ্ট হওয়ার কথা না।
না খেলিয়েই বাদ কেন
না খেলিয়ে স্কোয়াড থেকে বাদ দেওয়া বাংলাদেশের ক্রিকেটে পুরনো সংস্কৃতি। আগের নির্বাচক কমিটিও এমন সিদ্ধান্ত নিত নিয়মিত, যেসব কারণ তারা বলতেন তা কারো কাছেই ঠিক গ্রহণযোগ্য হতো না। দুঃখজনকভাবে এই ধারাবাহিকতা আছে চলমান।
সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি স্কোয়াডে থাকা দুজনকে এবার না খেলিয়ে বাদ দেওয়া হয়েছে। যার একজন নাসুম আহমেদ, আরেকজন রিপন মন্ডল।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজে একমাত্র বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে স্কোয়াডে ছিলেন নাসুম। কোন ম্যাচ খেলার সুযোগ হয়নি তার, না খেলেই এবার বাদ পড়েছেন। তিনি কেন বাদ এবং তার বদলে তানভির ইসকামকে নেওয়া হয়েছে এই ব্যাখ্যাতে স্পষ্ট কোন ধারণা পাওয়া গেল না। নির্বাচকরা বলতে চাইলেন, তানভির যেহেতু ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজের সময় চোটে ছিলেন, এখন সেরে উঠায় তিনি তাই প্রথম পছন্দে এসেছেন। তানভির বাংলাদেশের হয়ে চারটা টি-টোয়ন্টি খেলেছেন, এমন কিছু করেননি যাতে তাকে অটো চয়েস ভাবা যায়। ৪ ম্যাচে তানভিরের আছে ২ উইকেট। নাসুমের পরিসংখ্যান বরং সমৃদ্ধ। নির্বাচকরা যেহেতু অভিজ্ঞতাকে আলাদা মূল্য দেন সেখানেও নাসুম এগিয়ে। কোন বোলিং স্কিলের দিক থেকে নাসুম থেকে তানভির এগিয়ে সেটা স্পষ্ট করা দরকার ছিলো তাদের।
রিপনকে না রাখাতে এবার সমস্যার কিছু নেই। কিন্তু তাকে না রাখা নিয়ে যে ব্যাখ্যা দেওয়া হলো সেটা বেশ বিস্ময়কর। নির্বাচক আব্দুর রাজ্জাক বললেন, 'তারাও জানেন আসলে, বুঝেন (থাকবেন না দলে)। আসলে তাকে খেলানোর জন্য নেওয়া হয়নি। দলের সঙ্গে আবহ বুঝতে রাখা হয়েছিলো।'
আপনি যখন কাউকে স্কোয়াডে অফিসিয়ালি রাখবেন, তখন একাদশের কথা বিবেচনা করেই রাখবেন। একাদশে থাকেন কিনা সেটা কোচ ও অধিনায়কের বিষয়। কিন্তু নির্বাচকদের চিন্তা নিশ্চয়ই একাদশের কথা মাথায় রেখেই হয়। রিপন তরুণ, সামনে তার অনেক সুযোগ হয়ত আসবে। তবে দলে আসা ও বাদ পড়া নিয়ে তার কাছে স্পষ্ট বার্তা গেল কিনা তা নিয়ে সংশয় মিটল না।
Comments