বিনামূল্যে প্রাথমিক চিকিৎসা, স্বাস্থ্যে বাজেটের ১৫ শতাংশ বরাদ্দসহ সংস্কার কমিশন যত সুপারিশ

প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হয়। ছবি: প্রেস উইং

স্বাস্থ্য খাতে জাতীয় বাজেটের ১৫ শতাংশ, জাতীয় আয়ের ৫ শতাংশ বরাদ্দের সুপারিশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশন।

একইসঙ্গে স্বাস্থ্য গবেষণার জন্য জাতীয় বাজেটের অন্তত এক শতাংশ বরাদ্দ নিশ্চিত করে তা ধীরে ধীরে আরও বাড়ানোর সুপারিশ করেছে কমিশন।

আজ সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কাছে জমা দেওয়া প্রতিবেদনে এ সুপারিশ করেছে কমিশন।

জাতীয় অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খানের নেতৃত্বে গত ১৮ নভেম্বর ১২ সদস্যের স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার।

কমিশন তাদের প্রতিবেদনে সংবিধান সংশোধন করে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবাকে অন্যতম মৌলিক অধিকার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলেছে এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা বিনামূল্যে দেওয়ার সুপারিশ করেছে।

রোগী সুরক্ষা, আর্থিক বরাদ্দ, জবাবদিহিতা ও জরুরি প্রস্তুতি নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট সব আইন পর্যালোচনা ও যুগোপযোগী করার সুপারিশ এনেছে কমিশন।

প্রতিবেদনে স্বাধীন ও স্থায়ী 'বাংলাদেশ স্বাস্থ্য কমিশন' গঠন করার কথা বলা হয়েছে, যা সরকার প্রধানের কাছে জবাবদিহি করবে এবং সংসদে বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করবে।

এছাড়া, পেশাদারিত্ব, দক্ষতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে বিদ্যমান স্বাস্থ্য ক্যাডার পুনর্গঠনের মাধ্যমে প্রশাসনিকভাবে স্বায়ত্তশাসিত বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস গঠনের সুপারিশ করেছে কমিশন, যার নেতৃত্বে থাকবে একটি স্বতন্ত্র সচিবালয় ও একজন মুখ্য সচিব মর্যাদাসম্পন্ন চিকিৎসক।

স্বাস্থ্যসেবা সবার জন্য সাশ্রয়ী, মানসম্মত এবং সহজলভ্য করতে সব ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি খাতের সমন্বয় এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে বলেছে কমিশন।

অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে আছে:

  • স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালকের (বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিকস) অধীনে বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সেবার মূল্য নির্ধারণ এবং তাদের তদারকি ও মান নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করা।
  • দেশীয় এপিআই, ভ্যাকসিন ও মেডিকেল ডিভাইস উৎপাদনে স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে প্রয়োজন অনুযায়ী বিদেশি বিনিয়োগ ও প্রণোদনা।
  • অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ প্রাথমিক পর্যায়ে বিনামূল্যে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে ভর্তুকিমূল্যে সরবরাহ নিশ্চিত করা এবং তালিকা প্রতি দুই বছর পর হালনাগাদ করা।
  • শুরুতে ২৫ শতাংশ ওষুধ জেনেরিক নামে প্রেসক্রিপশন করতে হবে। ৫ বছরের মধ্যে ১০০ শতাংশ ওষুধ জেনেরিক নামে লিখতে হবে।
  • সরকারি ওষুধ কারখানার আধুনিকায়ন ও বেসরকারি খাত থেকে মানসম্মত ওষুধ সংগ্রহে কৌশলগত ক্রয় জোরদার করা।
  • জাতীয় ফার্মেসি নেটওয়ার্কের আওতায় ২৪ ঘণ্টা ফার্মেসি চালু করা।
  • ক্যানসার, ডায়াবেটিস, উচ্চরক্তচাপ ও তালিকাভুক্ত অ্যান্টিবায়োটিকের শূন্য ভ্যাট-কর।
  • ওষুধের নমুনা বা উপহার দিয়ে কোনো ধরনের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা।
  • ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলো শুধু ডাক্তারদের ই-মেইল বা ডাকযোগের মাধ্যমে তাদের পণ্য সম্পর্কিত তথ্য পাঠাতে পারবে। প্রতিনিধিরা সরাসরি সাক্ষাতের মাধ্যমে দৈনন্দিন প্রোডাক্ট প্রমোশন করতে পারবে না।
  • স্বাস্থ্যসেবা গ্রহীতার অভিযোগ নিষ্পত্তির জন্য একটি আধুনিক ডিজিটাল অভিযোগ নিষ্পত্তি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তোলা।
  • হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সহিংসতা রোধে 'মেডিকেল পুলিশ' নামে প্রশিক্ষিত একটি বিশেষ ইউনিট গঠন করা, যারা চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
  • চিকিৎসক, নার্স, টেকনোলজিস্টসহ সব স্বাস্থ্যকর্মীর জন্য মেডিকেল প্রফেশনাল ইন্স্যুরেন্স চালু করা।
  • এমবিবিএস বা বিডিএস ছাড়া কেউ 'চিকিৎসক' পরিচয়ে রোগী দেখলে বিএমডিসি শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে।
  • সব নাগরিকের জন্য ইউনিক স্বাস্থ্য আইডি ও স্মার্ট স্বাস্থ্য কার্ড চালু করা, যা রোগীদের ও অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণকারীদের সেবা গ্রহণ ও প্রদানের মান ও পরিমাণ ট্র্যাকিং করবে।
  • সেবার ধারাবাহিকতা ও তথ্য সংরক্ষণের জন্য ইলেকট্রনিক হেলথ রেকর্ড সিস্টেম চালু করা।

Comments

The Daily Star  | English

Khaleda leaves London for Dhaka in air ambulance

Fakhrul urges BNP supporters to keep roads free, ensure SSC students can reach exam centres

7h ago