সিরাজগঞ্জের মুলিবাড়ি

অকেজো পড়ে আছে ১০ কোটি ৭৯ লাখ টাকার ট্রমা সেন্টার

সিরাজগঞ্জের মুলিবাড়িতে নির্মিত ২০ শয্যার ট্রমা সেন্টারটি চার বছরেও চালু হয়নি। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

দুর্ঘটনাকবলিতদের জরুরি চিকিৎসাসেবা দিতে প্রায় ১১ কোটি টাকা ব্যয়ে যমুনা সেতুর পশ্চিম মহাসড়কে সিরাজগঞ্জের মুলিবাড়িতে নির্মিত ২০ শয্যার ট্রমা সেন্টারটি চার বছরেও চালু হয়নি।

২০২০ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করে ২০২১ সালে নবনির্মিত হাসপাতাল স্থাপনাটি হস্তান্তর করা হয়। তবে তারপর চার বছর পেরিয়ে গেলেও হাসপাতালটির সেবা দেওয়া শুরু হয়নি। ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হাসপাতাল ভবনের অনেক কিছুই ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে, ব্যবহার শুরুর আগেই নবনির্মিত হাসপাতাল ভবনটি সংস্কারে আবারও অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

স্বাস্থ্য বিভাগ জানিয়েছে, নির্মাণ কাজ শেষ হলেও নবনির্মিত হাসপাতালে লোকবল পদায়ন করা হয়নি। এছাড়া হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় শয্যা ও যন্ত্রপাতি বরাদ্দ করা হয়নি। তাই ২০ শয্যার ট্রমা সেন্টারটি চালু করা যাচ্ছে না।

জানতে চাইলে সিরাজগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. নুরুল আমিন দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০ শয্যার এ হাসপাতালটি চালু করতে ইতোমধ্যে চার জন চিকিৎসকসহ ২০ জনের জনবল অনুমোদন করেছে। তবে পদ অনুমোদন হলেও এখনো সংশ্লিষ্ট পদে লোকবল পদায়ন করা হয়নি।

তিনি জানান, এছাড়া হাসপাতালের জন্য প্রয়োজনীয় শয্যা ও যন্ত্রপাতি এখনো বরাদ্দ করা হয়নি। লোকবল ও যন্ত্রপাতির অভাবে ২০ শয্যার নবনির্মিত হাসপাতালটি নির্মাণের চার বছর পরেও চালু করা যায়নি।

এদিকে হাসপাতালটি পরিপূর্ণভাবে চালু করতে নবনির্মিত ভবনে আরও অনেক সংস্কারের প্রয়োজন আছে বলেও জানান তিনি।

ব্যবহার শুরুর আগেই নবনির্মিত হাসপাতাল ভবনটি সংস্কারে আবারও অর্থ বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

সিভিল সার্জন বলেন, জনগুরুত্বপূর্ণ এ হাসপাতালটি দ্রুত চালু করতে ইতোমধ্যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, দ্রুতই এ হাসপাতালটি চালু করা হবে।

সিরাজগঞ্জ স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ (এইচইডি) সূত্রে জানা গেছে, যমুনা সেতুর পশ্চিম মহাসড়কের পাশে মুলিবারি এলাকায় রেলের জায়গা অধিগ্রহণ করে ২০১৯ সালে ট্রমা সেন্টার নির্মাণ শুরু হয়।

সিরাজগঞ্জ স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী মো. শাহিনুর ইসলাম দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ২০২০ সালে প্রায় ১০ কোটি লাখ টাকা ব্যয়ে ২০ শয্যার হাসপাতালের নির্মাণ কাজ শেষ হয়।

তিনতলা বিশিষ্ট হাসপাতাল ভবনসহ চিকিৎসক ও কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ কাজ শেষ করে ২০২১ সালের জুন মাসে প্রকল্পটি স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে হস্তান্তর করা হয় বলে জানান প্রকৌশলী শাহিনুর ইসলাম।

নবনির্মিত ট্রমা সেন্টরটি পরিদর্শন করে দেখা গেছে, ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে প্রায় ১১ কোটি টাকার প্রকল্পটি পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। ব্যবহার শুরুর আগেই হাসপাতালের জন্য নির্মিত বিদ্যুতের ট্রান্সফরমারটিও চুরি হয়ে গেছে।

জানা গেছে, সম্প্রতি স্বাস্থ্য বিভাগ হাসপাতালটির নিরাপত্তার জন্য নিরাপত্তা কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে হাসপাতালের প্রধান ফটক সবসময় বন্ধ রাখা হয়।

স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী শাহিনুর ইসলাম বলেন, ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নবনির্মিত স্থাপনার বিভিন্ন স্থানে সংস্কারের প্রয়োজন। ইতোমধ্যে সংস্কারের জন্য ২৫ লাখ টাকার বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

২০২০ সালে নির্মাণ কাজ শেষ করে ২০২১ সালে নবনির্মিত হাসপাতাল স্থাপনাটি হস্তান্তর করা হয়। ছবি: আহমেদ হুমায়ুন কবির তপু/স্টার

তার ভাষ্য, 'বরাদ্দ পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষ করে হাসপাতালটি চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হবে।'

উল্লেখ্য ১৯৯৮ সালে যমুনা সেতু চালু হওয়ার পর উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলাসহ ২২ জেলার যানবাহন এই সেতুর মহাসড়ক দিয়ে যাতায়াত করে। শুরুতে প্রতিদিন দুই থেকে তিন হাজার যানবাহন চলাচল করলেও এখন প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০ থেকে ২২ হাজার যানবাহন চলাচল করে।

বিপুল পরিমাণ যানবাহন চলাচলের কারণে প্রায় প্রতিদিন যমুনা সেতু মহাসড়কের কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটে। দুর্ঘটনা কবলিতদের স্থানীয় হাসপাতালে নেওয়া হলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা, রাজশাহী, বগুড়াসহ বিভিন্ন মেডিকেলে পাঠানো হয়।

হাটিকুমরুল হাইওয়ে পুলিশ স্টেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুর রউফ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, প্রতি বছর মহাসড়কে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রায় শতাধিক প্রাণহানি ঘটে, আহত হয় আরও কয়েক শত মানুষ।

দুর্ঘটনা কবলিতরা দ্রুত প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পেলে ক্ষয়ক্ষতি অনেক কমবে বলে জানান তিনি। দুর্ঘটনার ক্ষয়ক্ষতি কমাতে দ্রুত মহাসড়কের ট্রমা সেন্টারটি চালু করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এ পুলিশ কর্মকর্তা।

Comments

The Daily Star  | English

Tax-free income limit may rise to Tk 3.75 lakh

The government is planning a series of measures in the upcoming national budget to alleviate the tax pressure on individuals and businesses, including raising the tax-free income threshold and relaxing certain compliance requirements.

12h ago