ঢাকাই সিনেমার ‘মিয়াভাই’

অভিনেতা ফারুক। ছবি: শেখ মেহেদী মোর্শেদ

সোনালি দিনের সিনেমার নায়কদের মধ্যে অন্যতম ফারুক। পুরো নাম আকবর হোসেন পাঠান ফারুক। ঢাকাই চলচ্চিত্রে তিনি 'মিয়াভাই' হিসেবে পরিচিত। তার অভিনীত সাদাকালো সিনেমা আজও টিভি চ্যানেলগুলোয় প্রচারিত হয়। অনেক সাড়া জাগানো সিনেমায় অভিনয় করেছেন তিনি। সামাজিক সিনেমা দিয়ে তিনি নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন।

এদেশে সামাজিক সিনেমার নায়ক অনেকেই হয়েছেন। কিন্তু, ফারুকের মতো খ্যাতি কম নায়কই পেয়েছেন। আবার প্রেমের সিনেমার নায়কও হয়েছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা করেছেন। কিন্তু তাকে বেশি জনপ্রিয়তা দিয়েছেন গ্রামীণ গল্পের সামাজিক সিনেমা।

আজ ১৫ মে তার চলে যাওয়ার দিন। সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে দীর্ঘ চিকিৎসার পর ২০২৩ সালের এই দিনে তিনি মারা যান।

নায়ক ফারুক অভিনীত 'লাঠিয়াল' একটি সাড়া জাগানো চলচ্চিত্র। গ্রামের মাতব্বরদের একসময় লাঠিয়াল বাহিনী ছিল। জমি ও প্রভাব বাড়ানোর জন্য তারা লাঠিয়াল রাখত। সেসব লাঠিয়ালদের নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রটি বেশ নাম করে। আনোয়ারের হোসেনের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অভিনয় করেন ফারুক। পর্দায় দুই ভাইয়ের লাঠিয়ালগিরি উপভোগ করেন দর্শকরা।

লাঠিয়াল ফারুককে বড় স্বীকৃতি দিয়েছে। প্রথমবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান এই সিনেমা দিয়ে।

'সারেং বউ' কালজয়ী একটি চলচ্চিত্র। আবদুল্লাহ আল মামুন পরিচালিত 'সারেং বউ' সিনেমায় ফারুক অভিনয় করেন সারেং কদমের চরিত্রে। এই সিনেমার একটি গান আজও মানুষের মুখে মুখে ফেরে—ওরে নীল দরিয়া, আমায় দেরে দে ছাড়িয়া...

'সারেং বউ' সিনেমায় তার বিপরীতে ছিলেন 'মিষ্টি মেয়ে' কবরী। আজও এই সিনেমার আবেদন ফুরোয়নি।

ফারুক অভিনীত এদেশের সাড়া জাগানো ও ব্যবসাসফল আরেকটি চলচ্চিত্র 'সুজন সখী'। নায়িকা ছিলেন কবরী। এই সিনেমার গানও মানুষ এখনো শোনে। বিশেষ করে—সব সখীরে পার করিতে নেব আনা আনা...গানটি। সুজন চরিত্রে অভিনয় করে দীর্ঘ দিন দর্শকদের কাছে এই নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। গ্রামীণ গল্পের 'সুজন সখী' চলচ্চিত্রটি ঢাকাই সিনেমার ইতিহাসে উজ্জ্বল হয়ে থাকবে আরও অনেক দিন।

'সুজন সখী' সিনেমাটি পরিচালনা করেন বিখ্যাত চলচ্চিত্রকার খান আতাউর রহমান।

'নয়নমনি' নায়ক ফারুকের ক্যারিয়ারে আরও একটি সফল সিনেমা। তার ক্যারিয়ারে মাইলফলক হয়েছিল এটি। এই সিনেমা তাকে দিয়েছে কোটি মানুষের ভালোবাসা। ববিতার সঙ্গে জুটি গড়েন 'নয়নমনি' সিনেমায়। নয়ন চরিত্রে ফারুক আর মনি চরিত্রে ববিতা দুর্দান্ত মানিয়েছিলেন। দর্শকরা এই জুটিকে সাদরে বরণ করে নিয়েছিলেন। এই সিনেমার গান—চুল ধইরো না খোপা খুলে যাবে হে নাগর এবং নানিগো নানি... এই দুটি গান তুমুল জনপ্রিয়তা পায়।

'নয়নমনি' আমজাদ হোসেন পরিচালিত একটি সিনেমা।

আমজাদ হোসেন পরিচালিত 'গোলাপি এখনো ট্রেনে' সিনেমাতেও অভিনয় করেন ফারুক। তার অভিনীত চরিত্রের নাম মিলন। ববিতার সঙ্গে জুটি গড়েন। গোলাপি চরিত্রে অভিনয় করেন ববিতা। গ্রামীণ গল্পের সিনেমা 'গোলাপি এখন ট্রেনে' দেশে ও বিদেশে প্রশংসা কুড়ায়। ফারুক অভিনীত এই সিনেমার একটি গান—হায়রে কপাল মন্দ চোখ থাকিতে অন্ধ। আরেকটি গান—আছেন আমার মুক্তার, আছেন আমার বারিস্টার। গান দুটি আজও মনে রেখেছেন অনেকেই।

সামাজিক গল্পের সিনেমা 'তাসের ঘর' সেই সময়ে বেশ আলোচিত হয়েছিল। ফারুক এই সিনেমায় জুটি বেধেছিলেন রোজিনার সঙ্গে। আরও বেশ কয়েকটি সামাজিক সিনেমায় দুজনে জুটি হয়েছিলেন।

কবরী, ববিতা ও রোজিনা ছাড়া আরও অনেক নায়িকার বিপরীতে অভিনয় করেছেন ঢাকাই সিনেমার 'মিয়াভাই'।

মুক্তিযুদ্ধের আলোচিত দুই সিনেমা 'আবার তোরা মানুষ হ' এবং 'আলোর মিছিল' নায়ক ফারুককে দিয়েছে প্রশংসা। অন্যদিকে 'ঝিনুক মালা' সিনেমা করেও ব্যাপকভাবে সফল হয়েছেন তিনি। 'ঝিনুক মালা' সিনেমায় তার নায়িকা ছিলেন নিপা মোনালিসা। এই সিনেমার একটি গান মানুষের হৃদয় জয় করেছিল দারুণভাবে। গানটি হচ্ছে—তুমি আমার মনের মাঝি।

১৯৭১ সালে 'জলছবি' সিনেমা দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন নায়ক ফারুক। ঢাকাই সিনেমাকে সমৃদ্ধ করে গেছেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English

How Chattogram built its economic legacy

Picture a crowded harbour where the salty seabreeze carries whispers of far-off lands, where merchants of all creed and caste haggle over silks and spices, and where towering ships of all varieties – Chinese junks, Arab dhows, and Portuguese carracks – sway gently in the waters of the Bay of Bengal.

14h ago