গ্রামীণ জনপদে ভেজাল ওষুধের বিষাক্ত বিস্তার: আর কতকাল চলবে এই নীরব হত্যা?

চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা শিবগঞ্জের প্রত্যন্ত বাজার 'চামার হাট'। বসে আছি হাটের উত্তর-পূর্ব কোণে রাস্তার এক ওষুধের দোকানে। কয়েক গ্রাম দূর থেকে আট বছর বয়সী নাতিসহ এসেছেন বৃদ্ধ আজমত আলী। হাটে বিক্রি করেছেন কেজি পাঁচেক করলা, এক কাঁদি কাঁচা কলা ও একটি ছাগল। শরীর ঠিক মতো না চললেও চোখে মুখে তার ফুরফুরে ভাব। কারণ পাঞ্জাবির পকেটে এসেছে কিছু টাকা।
শরীর জুড়ে প্রচণ্ড ব্যথা আজমত আলীর। জ্বালাপোড়া করে দিন-রাত। দিন কয়েক ধরে পেটে কুন কুন করছে। রাতে ঘুম আসে না। স্ত্রীরও কাশি। সঙ্গে থাকা নাতিরও ঠান্ডা-জ্বর। ওষুধের দোকানে এমনই জানালেন তিনি। খুব তাড়া করে ওষুধ চাইলেন। নাতি আবার বায়না ধরেছে জিলেপি খাবে। দোকানি আজমত আলীর কথা শুনে ওষুধ দিলেন।
খেয়াল করলাম সেই ট্যাবলেট, ক্যাপসুল ও সিরাপের কোনোটিই সুপরিচিত কোনো কোম্পানির নয়। কিন্তু, দাম রাখলেন প্রচলিত কোম্পানির ওষুধের মতোই। কথায় কথায় দোকানদার জানালেন, রাজশাহী বা তার আশেপাশের স্থানীয় কোম্পানিই ওষুধই তিনি বেশি রাখেন। এতে লাভ বেশি হয়।
গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষ—যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরোয়—অসুস্থ হলে প্রায়শই স্থানীয় ওষুধের দোকান বা হাতুড়ে ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। তিনি হয়তো জানতেই পারেন না, যে ওষুধটি তিনি কিনছেন তা আসল না ভুয়া, কার্যকর না বিপজ্জনক। সরল বিশ্বাসে ভেজাল, মেয়াদোত্তীর্ণ অথবা নিম্নমানের ওষুধ গ্রহণ করেন। ফলে, রোগ নিরাময়ের পরিবর্তে শরীরে বাসা বাঁধে নতুন জটিলতা। কিডনি বিকল হওয়া থেকে শুরু করে লিভারের সংক্রমণ, এমনকি ক্যানসারের মতো মরণব্যাধিও হানা দেয় ভেজাল ওষুধের বিষাক্ত প্রতিক্রিয়ায়।
অন্তঃসত্ত্বা নারী ও শিশুরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকে, যাদের জীবন কেড়ে নেওয়ার নীরব ষড়যন্ত্র চলে প্রতিনিয়ত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের এই অন্ধকার গলিপথে বহু জীবন প্রতিদিন ঝরে পড়ছে—নীরবে, পরিসংখ্যানের বাইরে, নীতিনির্ধারকদের দৃষ্টির আড়ালে।
দুঃখজনকভাবে, ভেজাল ওষুধ সেবনে মৃত্যুর সুনির্দিষ্ট ও নির্ভরযোগ্য জাতীয় পরিসংখ্যানের অভাব রয়েছে। এর প্রধান কারণ হলো, গ্রামীণ অঞ্চলে মৃত্যুর কারণ সঠিকভাবে নথিভুক্ত করার দুর্বলতা ও ভেজাল ওষুধের প্রভাবকে আলাদাভাবে চিহ্নিত করার অভাব।
তবে বিভিন্ন গণমাধ্যম ও মাঠপর্যায়ের গবেষণায় ভেজাল ওষুধ সেবনের কারণে অসুস্থতা বৃদ্ধি ও অস্বাভাবিক মৃত্যুর অসংখ্য মর্মান্তিক চিত্র উঠে এসেছে। ভেজাল ওষুধের কারণে সৃষ্ট জটিলতা, যেমন: কিডনি ও লিভারের কার্যকারিতা হ্রাস, প্রায়শই মৃত্যুর পরোক্ষ কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়, যা সামগ্রিক পরিসংখ্যানে প্রতিফলিত হয় না। এ কারণে, ভেজাল ওষুধের কারণে মৃত্যুর প্রকৃত সংখ্যা সম্ভবত সরকারি হিসাবের চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ।
এই ভয়াবহ পরিস্থিতির মূলে রয়েছে বেশকিছু কাঠামোগত সমস্যা। প্রথমত, আমাদের দুর্বল নিয়ন্ত্রক কাঠামো। ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের নজরদারি অপ্রতুলতা এবং দুর্নীতিগ্রস্ত চক্রের যোগসাজশে ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনকারীরা সহজেই পার পেয়ে যায়। দ্বিতীয়ত, ওষুধ বাজারের দুর্নীতি। মুনাফালোভী অসাধু ব্যবসায়ীরা নকল ওষুধ তৈরি করে বা নামীদামী ব্র্যান্ডের মোড়কে ভেজাল ওষুধ বিক্রি করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। তৃতীয়ত, গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা। সরকারি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও প্রশিক্ষিত চিকিৎসকের অভাব থাকায় প্রান্তিক মানুষ বাধ্য হয় সেখানে যা আছে তাই কিনতে, এমনকি সেটা ভেজাল হলেও। চতুর্থত, জনসচেতনতার অভাব। সাধারণ মানুষ ভেজাল ওষুধের ভয়াবহতা সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল নয়, ফলে তারা সহজেই প্রতারিত হয়।
বাংলাদেশে ভুয়া ওষুধের বিস্তার ঘটেছে চারটি মূল কাঠামোগত সমস্যার কারণে। সেগুলো হলো—
১. তদারকির দুর্বলতা
২. অসততা ও দুর্নীতি
৩. জনসচেতনতার অভাব
৪. চিকিৎসা-বিচ্ছিন্নতা
ওষুধ প্রশাসনের পরিদর্শক সংখ্যা অপ্রতুল। প্রায় দুই লাখ ফার্মেসি আছে দেশে। কিন্তু পরিদর্শকের সংখ্যা কয়েকশ। গ্রাম তো দূরের কথা, অনেক জেলা শহরেও মাসের পর মাস কোনো পরিদর্শন হয় না। গ্রামীণ ওষুধের দোকানগুলোর বেশির ভাগই নিয়মিত তদারকির বাইরে।
কিছু অসাধু কোম্পানি বা পরিবেশক সচেতনভাবে ভুয়া বা নিম্নমানের ওষুধ সরবরাহ করে গ্রামীণ বাজারে। তারা জানে যে, সেখানে তদারকি কম। দুর্নীতির কারণে তারা শাস্তির আওতায় আসে না। আবার কিছু রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তি অবৈধ ফার্মেসি পরিচালনায় নেপথ্য ভূমিকা রাখেন।
অনেক গ্রামীণ মানুষ জানেন না, আসল ও ভুয়া ওষুধের পার্থক্য কী। তারা বোঝেন না ওষুধের গায়ে লেখা নাম, মেয়াদ বা সিরিয়াল নম্বর কীভাবে যাচাই করতে হয়।
দারিদ্রতা ও চিকিৎসা ব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে তারা অল্প দামে সহজলভ্য ওষুধকেই ভরসা করে থাকেন—তা যতোই ক্ষতিকর হোক।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোর ওষুধ বাজারে ১০ শতাংশেরও বেশি ওষুধ ভুয়া বা নিম্নমানের। বাংলাদেশে এই হার আরও বেশি হতে পারে। দক্ষিণ এশিয়ায় ওষুধ উৎপাদনের অন্যতম প্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশে ২০২৩ সালে ভুয়া ওষুধের বাজারের আনুমানিক পরিমাণ ছিল দুই হাজার কোটি টাকা, যা দেশের মোট ওষুধ বাজারের প্রায় ৫৭ শতাংশ। এই বিপুল বাজার চালিত হচ্ছে লুকানো এক সাপ্লাই চেইনের মাধ্যমে—যেখানে অসাধু উৎপাদনকারী, বিতরণকারী, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় চলা লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসি এবং অজ্ঞ গ্রাহক— সবাই জড়িত এক অদৃশ্য খেলায়, যার পরিণতিতে ঘটে জীবনহানি।
ভুয়া ওষুধের প্রভাব বহুমাত্রিক। রোগ নিরাময়ের বদলে রোগ দীর্ঘস্থায়ী হয় বা জটিল আকার ধারণ করে। রোগী ও পরিবারের অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়। কারণ তারা বারবার চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন। সবচেয়ে ভয়াবহ, কিছু ভুয়া ওষুধ সরাসরি কিডনি, লিভার ও হৃৎপিণ্ডে ক্ষতি করে মৃত্যু ডেকে আনে।
এসব মৃত্যু কখনো 'ভুয়া ওষুধজনিত' হিসেবে চিহ্নিত হয় না। ফলে সংকটের প্রকৃত গভীরতা রাষ্ট্রীয়ভাবে উপলব্ধি হয় না। একজন রোগী যখন এমন ওষুধ গ্রহণ করেন, তখন রোগ নিরাময়ের বদলে রোগ আরও বাড়ে কিংবা শরীরের অন্য কোনো ক্ষতি হয়। কিন্তু এসব ঘটনা গণমাধ্যমে আসে না।
চিকিৎসা ব্যর্থতার দায় এসব ওষুধের গুণগত মানের ওপর পড়ে না—বরং রোগী বা ডাক্তারকেই দায়ী করা হয়। আরও ভয়াবহ হলো, ভুয়া ওষুধের কারণে গ্রামীণ মানুষ ঝাড়ফুঁক, কবিরাজ, গাছগাছড়া বা কুসংস্কারের দিকে ঝুঁকে থাকছেন। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার প্রতি আস্থা কমছে, বিদ্যমান চিকিৎসা সেবা সুবিধা গ্রহণ করা থেকে বিচ্ছিন্ন থাকছে।
ভুয়া ওষুধের বাজার এখন কেবল একটি স্বাস্থ্য সমস্যা নয়। এটি নৈতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ। নীতিনির্ধারকদের মনে রাখতে হবে, একটি দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থার ভিত্তি হলো ওষুধের নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা নিশ্চিত করা। যদি একজন দরিদ্র কৃষক তার শিশুর জন্য ওষুধ কিনে মৃত্যুর পথে ঠেলে দেন, সেটি কেবল ব্যক্তিগত ট্র্যাজেডি নয়—এটি রাষ্ট্রের নৈতিক ব্যর্থতা। এই নীরব হত্যা বন্ধ করতে নীতিনির্ধারকদের আর কালক্ষেপণ না করে কঠোর হাতে এই সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে।
প্রথমত, ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরকে ঢেলে সাজাতে হবে। তাদের সক্ষমতা বাড়াতে হবে, দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে এবং দেশব্যাপী ভেজাল ওষুধ উৎপাদন ও বিপণনকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা করতে হবে। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওষুধের গুণগত মান নিয়মিত পরীক্ষা করার ব্যবস্থা করতে হবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে একটি শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে তোলা জরুরি।
দ্বিতীয়ত, ওষুধ বাজারের দুর্নীতি নির্মূল করতে হবে। নকল ওষুধ প্রস্তুতকারক ও বিক্রেতাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। ওষুধের পাইকারি ও খুচরা বিক্রির ক্ষেত্রে কঠোর নীতিমালা প্রণয়ন এবং তার যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী সংস্থাগুলোর সহযোগিতা নেওয়া যেতে পারে।
তৃতীয়ত, গ্রামীণ স্বাস্থ্যসেবার মানোন্নয়নে জরুরিভিত্তিতে মনোযোগ দিতে হবে। প্রতিটি গ্রামে পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহ এবং প্রশিক্ষিত চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীর নিয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোকে কার্যকরভাবে পরিচালনা করতে হবে এবং সেখানে প্রয়োজনীয় রোগ নির্ণয়ের সরঞ্জাম সরবরাহ করতে হবে। আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো এক্ষেত্রে কারিগরি ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করতে পারে।
চতুর্থত, জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য ব্যাপকভিত্তিক প্রচারণা চালাতে হবে। ভেজাল ওষুধের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মানুষকে জানাতে হবে এবং তাদের সচেতন করতে হবে, যাতে যাচাই করে ওষুধ কেনেন। এক্ষেত্রে গণমাধ্যম, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও এনজিওর সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থাগুলো সচেতনতা বৃদ্ধির বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারে।
পঞ্চমত, একটি দীর্ঘমেয়াদী সমাধানের জন্য আমাদের স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। গবেষণার মাধ্যমে দেশীয়ভাবে মানসম্পন্ন ওষুধ উৎপাদনের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও ওষুধ কোম্পানিগুলোর সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ এই ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
তবে দীর্ঘমেয়াদে সবচেয়ে কার্যকর ও টেকসই প্রতিরোধ হতে পারে—ওষুধ-সাক্ষরতা। ওষুধ-সাক্ষরতা হলো, ওষুধের সঠিক ব্যবহার, গঠন, পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া, মেয়াদ ও নিরাপত্তা সংক্রান্ত ন্যূনতম জ্ঞান। এই জ্ঞান না থাকলে জনগণ সহজেই প্রতারণার শিকার হয়। বাংলাদেশে বিষয়টি নিয়ে তেমন আলোচনা হয় না। এটি পাঠ্যপুস্তকে নেই, গণমাধ্যমে নেই, এমনকি সরকারি স্বাস্থ্য প্রচারণায়ও 'ওষুধ' নিয়ে সচেতনতা নেই। অথচ স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় প্রবেশের প্রথম দরজাই ওষুধ।
ওষুধ-সাক্ষর জনগণ গড়ে তুলতে জরুরি হলো বিদ্যালয়ে স্বাস্থ্য শিক্ষায় ওষুধ বিষয় অন্তর্ভুক্ত করা, মিডিয়া ও প্রচারাভিযান, কমিউনিটি ক্লিনিকে নিয়মিত ওষুধ শিক্ষা সেশন ও ডিজিটাল অ্যাপ বা হেল্পলাইন চালু। এজন্য সপ্তম বা অষ্টম শ্রেণি থেকেই মৌলিক ওষুধ জ্ঞান শেখানো যেতে পারে। টেলিভিশন, রেডিও, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে পোস্টার বা ব্যানারে সচেতনতা বাড়াতে হবে।
সরকারি স্বাস্থ্যকর্মীরা স্থানীয় জনগণের মাঝে ছোট ছোট ওয়ার্কশপ করতে পারেন, যেখানে সাধারণ মানুষ ওষুধ যাচাই কিংবা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারেন সহজে। ওষুধ-সাক্ষরতা শুধু ভুয়া ওষুধ প্রতিরোধই নয়, স্বাস্থ্য ব্যয় কমানো, রোগের প্রতিরোধ বাড়ানো এবং জনস্বাস্থ্যের মানোন্নয়নের দিক থেকেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মসজিদ, মন্দিরসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও স্কুলে সচতেনতা প্রচার অভিযান চালিয়ে ওষুধের প্যাকেটে ছজ কোড শনাক্ত করার পদ্ধতি শেখাতে হবে।
মনে রাখাতে হবে, স্বাস্থ্যসেবা মানেই কেবল হাসপাতাল নির্মাণ বা ডাক্তার নিয়োগ নয়। এর ভিত্তি হলো নিরাপদ ও কার্যকর ওষুধ। আর গ্রাম যদি হয় ভুয়া ওষুধের অভয়ারণ্য, তাহলে জাতীয় স্বাস্থ্যব্যবস্থা পূর্ণতা পায় না। স্বাস্থ্যসেবার ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে এই ভুয়া ওষুধের সংকটকেই আগে চিহ্নিত করতে হবে।
এখনই সময় রাষ্ট্র, বাজার ও সমাজের একযোগে কাজ করার। গ্রামে ওষুধ যেন আর রোগ বাড়ানোর হাতিয়ার না হয়—এই নিশ্চয়তা দিতে হবে এখনই। অন্যদিকে বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প আন্তর্জাতিক প্রশংসা অর্জন করলেও ভুয়া ওষুধের ছোবলে দেশের ভেতরের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই হুমকির মুখে। এই সংকট শুধু একটি আইন-শৃঙ্খলার বিষয় নয়; এটি এক গভীর নৈতিক ও সামাজিক প্রশ্ন—কীভাবে রাষ্ট্র তার জনগণকে নিরাপদ ও কার্যকর ওষুধ নিশ্চিত করবে?
প্রযুক্তি, আইন ও বাজার-ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সঙ্গে আমাদের প্রয়োজন এক ওষুধ-সচেতন নাগরিক সমাজ। মানুষ যদি নিজেই বুঝতে পারে যে কোন ওষুধ আসল, কোনটি ভুয়া—তাহলে প্রতারকরা আর সহজে চলতে পারবে না। তাই 'ওষুধ-সাক্ষরতা'কে এখনই স্বাস্থ্যনীতির কেন্দ্রে নিয়ে আসা উচিত। বাংলাদেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাস্থ্য ও জীবন রক্ষায় এটি হবে সবচেয়ে টেকসই বিনিয়োগ।
মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম: জনস্বাস্থ্য ও যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ এবং ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশের (ইউল্যাব) মিডিয়া স্টাডিজ অ্যান্ড জার্নালিজম বিভাগের সিনিয়র লেকচারার।
Comments