বিচার-সংস্কার-নির্বাচনের রোডম্যাপ একসঙ্গে চায় এনসিপি

ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

শুধু নির্বাচন আয়োজন নয়, বরং জুলাই গণহত্যাসহ বিগত আমলের অপরাধের বিচার এবং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কারের আকাঙ্ক্ষা পূরণের মাধ্যমেই সরকারকে নির্বাচনের দিকে যেতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে দায়িত্বে থেকেই রাজনৈতিক সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে উপনীত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

নাহিদ আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর বাংলামোটরে দলীয় কার্যালয়ে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, জুলাই ঘোষণাপত্রের সঙ্গে বিচার, সংস্কার এবং নির্বাচন—এই তিনটিরই রোডম্যাপ একসঙ্গে প্রকাশ করা উচিত। তাহলেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এবং জনমনে আস্থা তৈরি হবে।

তিনি আরও বলেন, 'আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি, জাতীয় নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যৎ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের কথা ভেবে সবাই দায়িত্বশীল আচরণ করব এবং একটি আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের দিকে যাব, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।'

গণঅভ্যুত্থানের পর সেনানিবাসে আশ্রয় নেওয়া ৬২৬ জনের তালিকা প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, এই তালিকাটি আরও আগে প্রকাশ করা হলে কোনো ধরনের সন্দেহ এবং শঙ্কা তৈরি হতো না এবং এটি নিয়ে কেউ কথা বলারও সুযোগ পেত না। তিনি বলেন, 'সেনাবাহিনী আমাদের দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। সেনাবাহিনী এই গণঅভ্যুত্থান এবং পরবর্তী সময়ে যে ভূমিকা পালন করছে, সেটি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু একই সাথে আমরা আমাদের রাজনৈতিক ইতিহাসে বিভিন্ন সময় দেখেছি সেনাবাহিনীর সাথে রাজনীতির একটি সম্পর্ক কখনো কখনো তৈরি হয়। আমরা ওয়ান ইলেভেনের ঘটনা জানি। এই সকল ঘটনা কিন্তু আমাদের গণতন্ত্রের জন্য, আমাদের রাষ্ট্রের জন্য এবং সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কারো জন্যই ভালো ফলাফল নিয়ে আসেনি। ফলে সেই বিষয়টি যাতে আমরা সকলেই বিবেচনা করি। যার যেটা কাজ, যার যেটা দায়িত্ব সেটাই যাতে সে পালন করে।'

বিগত আমলে আমলাতন্ত্র, পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে দলীয়করণ হয়েছে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, এসব প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে মানবতাবিরোধী কাজ করানোরও অভিযোগ রয়েছে। তিনি প্রত্যাশা করেন, প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এই সময়ে এসে বিচারের মাধ্যমে অভিযুক্তদের শাস্তি দেবে এবং প্রতিষ্ঠানগুলোকে জনগণের প্রতিষ্ঠান হিসেবে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করবে। গুমের অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে রয়েছে, সেই সব সেনা কর্মকর্তাদের মধ্যে অনেকেই গ্রেপ্তার হননি বা তাদের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে কিছু জানা যায় না উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, এই বিষয়গুলো সুস্পষ্ট করলে সেনাবাহিনী প্রতিষ্ঠান হিসেবে আরও বেশি জনগণের আস্থার জায়গায় যাবে এবং আমরা সেই আস্থার জায়গাতেই সেনাবাহিনীকে দেখতে চাই।

আওয়ামী লীগের আমলের নির্বাচনগুলোকে আদালতের মাধ্যমে বৈধতা নেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলেন নাহিদ। তিনি বলেন, 'আমরা মনে করি এটা বিশৃঙ্খলা তৈরি করবে। আওয়ামী আমলের সব নির্বাচনকে ফ্যাসিবাদবিরোধী  রাজনৈতিক দলগুলো অবৈধ হিসেবে ঘোষণা করেছে। ফলে সেই নির্বাচন নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি করার চেষ্টা না করে আমাদের স্থানীয় সরকার নির্বাচনের দিকে যাওয়া উচিত। স্থানীয় সরকার নির্বাচনের মাধ্যমে নাগরিক দুর্ভোগও দূর হবে।'

নির্বাচন কমিশন প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, নির্বাচন কমিশন তার নিরপেক্ষতা ও আস্থা হারিয়েছে বলে তারা মনে করেন। নির্বাচন কমিশন যদি সেই আস্থার জায়গা ধরে রাখতে না পারে, তাহলে এই কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়া সম্ভব নয়। ফলে নির্বাচন কমিশনকে আস্থার জায়গায় ফিরে আসার চেষ্টা করতে হবে অথবা দায়িত্ব ছেড়ে দিতে হবে বলে তিনি মনে করেন।

অন্তর্বর্তী সরকারে ছাত্রদের প্রতিনিধি হিসেবে থাকা উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই বলেও মন্তব্য করেন নাহিদ।

তিনি বলেন, 'তারা গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে সরকারে আছেন। আমিও তাদের মধ্যে একজন ছিলাম। তারা রাজনীতি বা নির্বাচন করতে চাইলে সরকারে থেকে তা পারবে না; সরকার থেকে বের হয়ে তাদের মতো সিদ্ধান্ত নেবে। কিন্তু উদ্দেশ্যমূলকভাবে তাদেরকে জাতীয় নাগরিক পার্টির সঙ্গে সংযুক্ত করে অপপ্রচার ও হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে।'

এই দুজনের সরকারে থাকা প্রসঙ্গে নাহিদ আরও বলেন, 'গণঅভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবে তারা সরকারে গেছেন। শহীদ পরিবার এবং আহতদের পুনর্বাসন, অপরাধীদের বিচার এবং সংস্কারের আকাঙ্ক্ষাগুলো তদারকি করার জন্য তারা অন্তর্বর্তী সরকারে গিয়েছিলেন। ফলে তারা সরকার থেকে কখন বের হবেন বা আদৌ বের হবেন কি না সেটা তাদেরই সিদ্ধান্ত।'

Comments