ইন্টারকে গোলবন্যায় ভাসিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতল পিএসজি

ছবি: এএফপি

তারুণ্য বনাম অভিজ্ঞতার লড়াইয়ে বিজয়কেতন ওড়াল তারুণ্যই। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একক আধিপত্য দেখানো পিএসজির সামনে বিন্দুমাত্র পাত্তা পেল না ছন্নছাড়া ইন্টার মিলান। রীতিমতো গোল উৎসব করে দীর্ঘ অপেক্ষার পালা শেষ করল তারা। স্মরণীয় পারফরম্যান্সে প্রথমবারের মতো উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জয়ের উল্লাসে মাতল ফরাসি ক্লাবটি।

শনিবার রাতে জার্মানির মিউনিখের আলিয়াঞ্জ অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত একপেশে ফাইনালে ইতালিয়ান প্রতিপক্ষকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে লুইস এনরিকের শিষ্যরা। এমনকি ব্যবধান এর চেয়ে বড় হলেও অবাক হওয়ার উপায় ছিল না! আশরাফ হাকিমির কল্যাণে লিড পাওয়ার পর জোড়া গোল করেন ১৯ বছর বয়সী দিজিরে দুয়ে। এরপর খাভিচা খাভারাতস্খেলিয়া ও সেনি মায়ুলু জাল কাঁপালে তৈরি হয় ইতিহাস।

১৯৯২ সালে ইউরোপের সর্বোচ্চ ক্লাব আসর চ্যাম্পিয়ন্স লিগ নাম গ্রহণের পর (আগে পরিচিত ছিল ইউরোপিয়ান কাপ নামে) এটাই কোনো দলের ফাইনালে সবচেয়ে বড় জয়ের রেকর্ড। পিএসজির আগে কীর্তিটি ছিল ইন্টারের শহর প্রতিদ্বন্দ্বী এসি মিলানের দখলে। তারা ১৯৯৪ সালের ফাইনালে স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনাকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছিল।

ছবি: এএফপি

২০১১ সালে কাতার স্পোর্টস ইনভেস্টমেন্টস পিএসজিকে কিনে নেওয়ার পর থেকে কাড়ি কাড়ি অর্থ খরচ করে একটি লক্ষ্যের পেছনেই ছুটছিল তারা— চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ট্রফি। এবার অসাধারণ নৈপুণ্যে দেখিয়ে অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করল তারা। পাশাপাশি সদ্যসমাপ্ত ২০২৪-২৫ মৌসুমে 'ট্রেবল' জয়ের স্বাদও পেল দলটি। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আগে তারা জিতেছে ফরাসি লিগ ওয়ান ও ফরাসি কাপ।

প্রথমার্ধেই গোলমুখে ১৩টি শট নেয় জ্বলে ওঠা পিএসজি। এর মধ্যে লক্ষ্যে ছিল পাঁচটি। অন্যদিকে, নখদন্তহীন ইন্টার দুটি শট নিয়ে কোনোটিই লক্ষ্যে রাখতে পারেনি।

ম্যাচের শুরু থেকেই উজ্জীবিত থাকা প্যারিসিয়ানদের গোল পেতে বেশি সময় লাগেনি। গোছানো আক্রমণে দ্বাদশ মিনিটে এগিয়ে যায় তারা। ভিতিনিয়ার থ্রু বলে এলোমেলো হয়ে যায় ইন্টারের রক্ষণভাগ। ডি-বক্সের ভেতরে বাঁদিকে দুয়ে তা নিয়ন্ত্রণে রেখে নিজে শট না নিয়ে নিয়ে ঠাণ্ডা মাথায় খুঁজে নেন হাকিমিকে। একেবারে ফাঁকায় থাকা মরক্কান ডিফেন্ডার খুব কাছ থেকে আলতো টোকায় করেন লক্ষ্যভেদ।

ধাক্কা সামলে নেওয়ার পরিবর্তে নির্জীব ইন্টার আট মিনিট পর আরও বড় বিপদে পড়ে। ত্বরিত পাল্টা আক্রমণে ব্যবধান দ্বিগুণ করে চালকের আসন বসে পিএসজি।

ছবি: এএফপি

কর্নার আদায়ের চেষ্টায় ছিলেন নিকোলো বারেলা। তবে উইলিয়ান পাচো বল খেলায় রেখে বাড়ান খাভারাতস্খেলিয়াকে। জর্জিয়ান উইঙ্গারের পাস পেয়ে উসমান দেম্বেলে বামদিক দিয়ে পৌঁছে যান ডি-বক্সের কাছে। এরপর তিনি দেখেশুনে অন্যপ্রান্তে দুয়েকে দেন বল। তরুণ ফরাসি উইঙ্গারের ডান পায়ের শট প্রতিপক্ষের ফেদেরিকো দিমার্কোর পায়ে লেগে দিক পাল্টে জালে জড়ায়। কিছুই করার ছিল না গোলরক্ষক ইয়ান সোমারের।

৪৪তম মিনিটে দেম্বেলের সামনে সুযোগ আসে। তবে গোলমুখে তালগোল পাকিয়ে ফেলেন তিনি। প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ে দুয়ের গড়ানো শট থাকেনি লক্ষ্যে।

বিরতির আগে দুবার পিএসজির রক্ষণে হানা দিলেও কাঙ্ক্ষিত ফল পায়নি ইন্টার। দুটি সুযোগই আসে কর্নার থেকে। ২৩তম মিনিটে ফ্রান্সেসকো আচেরবির হেড ক্রসবারের উপর দিয়ে চলে যায়। ৩৭তম মিনিটে মার্কাস থুরামের হেডও লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।

দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ খুঁজে বের করার বদলে আরও মলিন হয়ে যায় নেরাজ্জুরিরা। বিপরীতে, আক্রমণের তীব্র ঝাপটা জারি রাখে পিএসজি। আরও তিনবার গোলের আনন্দ ভক্ত-সমর্থকদের উপহার দেয় তারা।

ছবি: এএফপি

ফের খেলা শুরুর প্রথম মিনিটে খাভারাতস্খেলিয়ার শট গোলপোস্ট ঘেঁষে যায়। ৬১তম মিনিটে হাকিমির কোণাকুণি শট প্রতিপক্ষের একজনের গায়ে লাগায় হয় কর্নার।

দুই মিনিট পরই ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় গোল পেয়ে যান দুয়ে। আরেকটি দুর্দান্ত পাল্টা আক্রমণে ভিতিনিয়ার পাসে ডান পায়ের জোরাল শটে জাল খুঁজে নেন তিনি। তখনই পিএসজির শিরোপা উঁচিয়ে ধরা একরকম নিশ্চিত হয়ে যায়।

এরপর ছিল কেবল ব্যবধান আরও বাড়িয়ে নেওয়ার পালা। ৭৩তম মিনিটে দেম্বেলের রক্ষণচেরা পাসে মাঝমাঠের একটু সামনে বল পেয়ে যান খাভারাতস্খেলিয়া। একটানে ডি-বক্সে ঢুকে গোলরক্ষককে একা পেয়ে কোনো ভুল করেননি তিনি। চতুর্থ গোল! ৮১তম মিনিটে বদলি ব্র্যাডলি বারকোলা পায়ের কারিকুরিতে পৌঁছে যান পোস্টের একদম কাছে। কিন্তু জালের বাইরের দিকে মেরে সুযোগ হাতছাড়া করেন তিনি।

ছবি: এএফপি

পাঁচ মিনিট পরই ইন্টারের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে পঞ্চম গোলের দেখা পেয়ে যায় এনরিকের দল। বারকোলার সঙ্গে বল দেওয়া-নেওয়ার পর জোরাল শটে সোমারকে পরাস্ত করেন ১৯ বছরের ফরাসি মিডফিল্ডার মায়ুলু। বদলি হিসেবে তার মাঠে ঢোকার তখন কেবল দুই মিনিট চলছিল।

এই অর্ধে সিমোনে ইনজাগির শিষ্যরা দুটি শট লক্ষ্যে রাখতে পারে। তবে পিএসজির গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি দোন্নারুমাকে ফাঁকি দেওয়া সম্ভব হয়নি। সব মিলিয়ে চরম হতাশা নিয়ে মৌসুম শেষ করতে হলো তাদের। গত মাসেও টিকেছিল দলটির 'ট্রেবল' জয়ের সম্ভাবনা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কিছুই মিলল না। এবারের বিব্রতকর হারের আগে নাপোলির কাছে সিরি আ ও মিলানের কাছে ইতালিয়ান কাপের শিরোপা খুইয়েছে তারা।

শেষ বাঁশি বেজে উঠতেই উৎসবে মাতোয়ারা হয়ে পড়ে পিএসজি। দ্বিতীয় ফরাসি ক্লাব হিসেবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জিতল তারা। এর আগে এই কীর্তি ছিল কেবল মার্সেইয়ের। তারা ১৯৯৩ সালে মিউনিখেরই অলিম্পিয়া স্টেডিয়ামে এসি মিলানকে ১-০ গোলে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল।

Comments

The Daily Star  | English

Dhaka to send fresh note to New Delhi over push-in issue: Touhid

Touhid said Bangladesh is maintaining regular communication with India on the issue

17m ago