সাঁজোয়া যানে হামাসের পেতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে নিহত ৭ ইসরায়েলি সেনা

গাজায় সামরিক অভিযান চালানোর সময় সাত আইডিএফ সেনা নিহত হন। এক সেনার পরিচয় তার পরিবারের অনুরোধে গোপন রাখা হয়েছে। ছবি: আইডিএফের ওয়েবসাইট/কোলাজ
গাজায় সামরিক অভিযান চালানোর সময় সাত আইডিএফ সেনা নিহত হন। এক সেনার পরিচয় তার পরিবারের অনুরোধে গোপন রাখা হয়েছে। ছবি: আইডিএফের ওয়েবসাইট/কোলাজ

ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হলেও এখনো গাজায় ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাসের বিরুদ্ধে লড়ছে ইসরায়েলি সেনা। ওই যুদ্ধেও দেশটি উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সেনা হারিয়েছে।

আজ বুধবার ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফ (ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) জানিয়েছে, গাজায় সামরিক অভিযান পরিচালনার সময় তাদের সাত সদস্য নিহত হয়েছেন।

আজ বুধবার এএফপি ও টাইমস অব ইসরায়েল এই তথ্য জানিয়েছে।

যার ফলে ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া যুদ্ধে এখন পর্যন্ত নিহত ইসরায়েলি সেনার সংখ্যা ৪৩০ ছাড়িয়েছে।

সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইটে একই ব্যাটেলিয়নের পাঁচ নিহত সেনা ও একজন প্লাটুন কমান্ডারের নাম-পরিচয় প্রকাশ করা হয়েছে।

অপর নিহত সেনার পরিবারের অনুরোধে তার পরিচয় গোপন রাখা হয়েছে।

টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, গাজার খান ইউনিসে সামরিক অভিযান পরিচালনার সময় আইডিএফের কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পস দলের ওই সাত সদস্য 'বিস্ফোরণে' নিহত হন।

গতকাল মঙ্গলবার স্থানীয় সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে ওই ঘটনা ঘটে। আইডিএফের একটি 'পুমা' সাঁজোয়া যান (এপিসি) কমব্যাট ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পসের ৬০৫তম ব্যাটালিয়নের সাত সেনাকে বহন করে নিয়ে যাচ্ছিল। ওই সাঁজোয়া যানটি বিস্ফোরিত হলে সেনারা নিহত হন।

প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, এক অজ্ঞাত হামাস সদস্য ঐ সাঁজোয়া যানে আগে থেকে বোমা পেতে রেখেছিলেন।

দমকলবাহিনী ও সেনাবাহিনীর সদস্যদের যৌথ অভিযানে আগুন নেভানো হয়। একটি ডি৯ বুলডোজার ব্যবহার করে সাঁজোয়া যানটিকে বালু দিয়ে ঢেকে গাজা থেকে বের করে ইসরায়েলি ভূখণ্ডে নিয়ে আসা হয়।

তবে আইডিএফের মূল সাঁজোয়া যান 'নামেরা' ব্যবহার না করে কেন এই গুরুত্বপূর্ণ সামরিক অভিযানে কয়েক দশকের পুরনো পুমা ব্যবহার হয়েছিল, সে বিষয়ে কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি।

গাজায় সামরিক অভিযানে পুমা সাঁজোয়া যান। ফাইল ছবি: আইডিএফ
গাজায় সামরিক অভিযানে পুমা সাঁজোয়া যান। ফাইল ছবি: আইডিএফ

এর আগেও গাজার অভিযানে 'নামেরা' ব্যবহারও করা হয়েছে।

দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল ক্যাটজ নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে গাজা সীমান্তে অতর্কিত হামলা চালায় হামাস। এই হামলায় এক হাজার ২১৯ জন তাৎক্ষণিকভাবে নিহত হন। এএফপির প্রতিবেদন মতে, নিহতদের বেশিরভাগই বেসামরিক মানুষ।

পাশাপাশি, হামাস ও অন্যান্য সশস্ত্র সংগঠনের হাতে জিম্মি হন ২৫১ জন। জিম্মিদের মধ্যে ৪৯ জন এখনো গাজায় আছেন। আইডিএফ জানিয়েছে, তাদের মধ্যে ২৭ জন ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন।

সেদিনই ইসরায়েল গাজায় প্রতিশোধমূলক, নির্বিচার হামলা শুরু করে। এখন পর্যন্ত তাদের হামলায় ৫৬ হাজার ৭৭ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এই হিসাবকে জাতিসংঘ নির্ভরযোগ্য সূত্র হিসেবে বিবেচনা করে।

নিহত ফিলিস্তিনিদের বেশিরভাগই বেসামরিক নারী ও শিশু।

মার্চের শুরু থেকে এ বছরের মে পর্যন্ত গাজায় সব ধরনের ত্রাণ প্রবেশ বন্ধ রাখে ইসরায়েল। এতে ওই অঞ্চলে দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি দেখা দেয়। পরবর্তীতে এক মার্কিন সংস্থার মাধ্যমে ন্যুনতম ত্রাণের প্রবাহ চালু করলেও এই উদ্যোগকে 'ক্ষুধার অস্ত্রীকরণ' ও নামসর্বস্ব বলে রায় দিয়েছে বিশ্ব সম্প্রদায়।

মঙ্গলবার ইরানের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হওয়ার পর ইসরায়েলের সামরিক প্রধান ইয়াল জামির জানান, এখন আবারও গাজার দিকে নজর ফেরানো উচিত।

অপরদিকে, প্রায় প্রতিদিনই ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালাচ্ছে আইডিএফের সদস্যরা।

গাজার নাগরিক সুরক্ষা বিভাগের মুখপাত্র মাহমুদ বাসা এএফপিকে জানান, গতকাল মঙ্গলবার গাজার মধ্যাঞ্চলে জিএইচএফের ত্রাণকেন্দ্রে ত্রাণ নিতে আসা মানুষের ওপর সেনারা গুলি চালালে ২১ জন নিহত হন।

গাজার অন্যান্য অংশে ভিন্ন ভিন্ন ঘটনায় গতকাল আরও ২৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।  

Comments

The Daily Star  | English

Lottery to decide SP, OC postings during election: Home Adviser

Move aims to prevent candidates from getting preferred officers in their constituencies

41m ago