জাতীয়-স্থানীয় কোনো নির্বাচনেই ইভিএম ব্যবহার হবে না: ইসি

সংবাদ ব্রিফিংয়ে কথা বলেন ইসি মো. সানাউল্লাহ। ছবি: স্টার

জাতীয় ও স্থানীয় কোনো নির্বাচনেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন বা ইভিএম ব্যবহার করা হবে না বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।

আজ বৃহস্পতিবার ইসির অষ্টম কমিশন সভায় এ সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।

সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের বলেন, 'রাজনৈতিক ঐক্যমত ও সংস্কার কমিশনের সুপারিশ উভয়ক্ষেত্রেই ইভিএমের পক্ষে কোনো মত এ মুহূর্তে নেই।'

'শুরুতেই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যে, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার হবে না। আজকে আমরা চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি এটা কোনো স্থানীয় নির্বাচনেও ব্যবহার হবে না। অর্থাৎ, ইভিএম সামনের কোনো নির্বাচনে ব্যবহার হবে না,' বলেন তিনি। 

তিনি জানান, আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রবাসীদের অনলাইনে নিবন্ধন করে পোস্টাল ব্যালটে ভোট নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।

এই নির্বাচন কমিশনার আরও জানান, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, নির্বাচন কর্মকর্তা বিশেষ আইন, হলফনামা, ইসি সচিবালয় আইন, পোস্টাল ব্যালট, ইভিএম, দল নিবন্ধন অগ্রগতি, ভোটার তালিকা হালনাগাদ, সীমানা নির্ধারণসহ সার্বিক ‍বিষয়ে নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আমলে নিয়ে তা বাস্তবায়নের পথে এগোচ্ছে ইসি।

তিনি বলেন, 'প্রক্সি, অনলাইন ও পোস্টাল ব্যালট প্রবাসীদের জন্য তিন ভোট পদ্ধতি নিয়ে প্রথমে উদ্যোগ নিলেও বৃহস্পতিবার কমিশন সভায় পোস্টাল ব্যালটের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।'

ইসি সানাউল্লাহ বলেন, 'এবার সংসদ নির্বাচনে পোস্টাল ব্যালটের মাধ্যমে প্রবাসীদের ভোটাধিকার প্রয়োগের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া ইলেকট্রনিক ইভিএম আর কোনো নির্বাচনে ব্যবহার হবে না।'

প্রবাসীদের ভোট নিয়ে তিনি বলেন, 'চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হচ্ছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা এবার ভোট দেবেন এবং ভোটের পদ্ধতি হবে পোস্টাল ব্যালট। প্রাথমিকভাবে ৪৮ কোটি টাকা লাগতে পারে। পোস্টাল ব্যালটের যে সীমাবদ্ধতা ছিল, সেই সীমাবদ্ধতা কাটানোর জন্য এখন এই পোস্টাল ব্যালট পদ্ধতিটা হবে আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ব্যালট।' 

'প্রবাসীদের অনলাইন নিবন্ধনের জন্য একটি প্রকল্প নেওয়া হবে। সেইসঙ্গে অনলাইনে নিবন্ধন করলে ইসি সরাসরি পোস্টাল ব্যালট সংশ্লিষ্ট ভোটারের কাছে পাঠাবে। ভোটদান শেষে তা সংশ্লিষ্ট নির্বাচনী এলাকয় রিটার্নিং অফিসারের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে,' যোগ করেন তিনি।

ইসি সানাউল্লাহ জানান, টেকনিক্যাল কমিটি এটাকে রিভিউ করবে। একটা ডিপিপির মাধ্যমে এই প্রকল্পটা বাস্তবায়ন করা হবে।

ব্ল্যাংক ব্যালটের মতো একটি বিকল্প নিয়েও ভাবা হচ্ছে বলে জানান এ নির্বাচন কমিশনার।

তিনি বলেন, 'একটা পোস্টাল ব্যালট ডাক বিভাগের মাধ্যমে করা হলে গড়ে ৭০০ টাকা খরচ হবে সরকারিভাবে। আর কুরিয়ারের মাধ্যমে বেসরকারিভাবে ৫ হাজার টাকা খরচ হবে।' 

পোস্টাল ভোট কীভাবে হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'এখন আমরা ডেভেলপ করছি অনলাইন রেজিস্ট্রেশন প্ল্যাটফর্ম। এই রেজিস্ট্রেশন দুই ধরনের, একটা ভোটার, আরেকটা ওসিভি রেজিস্ট্রেশন। বিদেশ থেকে ভোট দেওয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন যেটা আগে আবেদন করে নিতে হতো, এটা অনলাইনে বসে করতে পারবেন।'

অনলাইন ভোটিং প্রসঙ্গে ইসি বলেন, 'অনলাইন ভোটিং এগিয়ে নেওয়া হবে। এটা ট্রায়াল পর্যায়ে হয়তো পৌঁছাতে পারব। বাট এটা ভোটিং পর্যায়ে পৌঁছাতে পারব না।' 

বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম প্রসঙ্গে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, 'এখন পর্যন্ত ৪৪ লাখ ৬ হাজার ৬০২ জন বাদ পড়া ভোটার আমরা পেয়েছি যারা নিবন্ধন করেছেন নতুনভাবে। আর তালিকার মধ্যে মৃত ভোটার পেয়েছি ২১ লাখ ৩২ হাজার ৫৯০ জন।' 

তিনি জানান, ভোটার তালিকা হালনাগাদের একটি সম্পূরক তালিকা আগামী সপ্তাহেই প্রকাশ করা হবে। 

পড়ে থাকা ইভিএম নিয়ে কী করা হবে জানতে চাইলে ইসি বলেন, 
'এ অবস্থায় এই ইভিএম কীভাবে কি করতে হবে সেটার জন্য একটা কমিটি ফর্ম করতে বলা হয়েছে।' 

সংসদীয় আসন পুনবিন্যাস প্রসঙ্গে ইসি বলেন, 'ডিলিমিটেশনটা আমাদের ফাইনাল পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। টেকনিক্যাল কমিটি দ্বারা এটাকে যাচাই করার সুযোগ আছে। আগামী সপ্তাহে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।' 

নতুন রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধনের প্রাথমিক যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে জানিয়ে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, 'যাচাইয়ের পরে যেসব দল ফরমেট অনুযায়ী সব শর্ত সম্পন্ন করেছে, সেগুলো মাঠ পর্যায়ে ভেরিফিকেশনের জন্য চলে যাবে। আর যারা সম্পন্ন করেনি তাদের ১৫ দিনের সময় দিয়ে আবারও চিঠি দেওয়া হবে।' 

তিনি আরও জানান, নির্বাচন কমিশনের আইনজীবী প্যানেল রিভাইজ করে হালনাগাদ করা ও শক্তিশালী করার ব্যাপারে আলোচনা চলছে।

সংসদীয় সীমানা পুনবিন্যাসের বিষয়ে তিনি বলেন, 'আমরা চেষ্টা করছি যতটুক সম্ভব রিপ্রেজেন্টেশন যেন হয় সেটা করা। পাশাপাশি এটাও খেয়াল রাখতে হবে যে দীর্ঘদিনের হিস্টরিক্যাল যে অরিয়েন্টেশন সেটাও যেন খুব বেশি ডিস্টার্ব না হয়।' 

তরুণদের জন্য আলাদা ভোটকেন্দ্র করার কথা ইসি ভাবছে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, 'যদি আমরা একটা ইয়াং জনগোষ্ঠীকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ভোটের প্রতি যারা ভোটের বিমুখ হয়ে গেছেন, এ ধরনের যদি কোনো প্রস্তাব থাকে, আমরা অবশ্যই বিবেচনা করে দেখব।' 

পুরো নির্বাচনী আসনের ফল বাতিল বা স্থগিত করার ইসির ক্ষমতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'কেন্দ্র বাতিলের সক্ষমতা আমাদের ছিল। আমাদের যেটা ছিল না সেটা হচ্ছে পুরো নির্বাচনী আসনের ভোট বন্ধ করার। যেটা একসময় সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এটাও আমরা ফেরত পাওয়ার জন্য প্রস্তাব করেছি এবং আশা করি এটা ফেরত পাব।'

ইসি সানাউল্লাহ বলেন, 'গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধনের বিষয়টি আজকের সভায় উপস্থাপন হয়েছে। পরে এটি নিয়ে আলোচনা হবে। কমিশন সভায় নির্বাচন কমিশন সচিবালয় আইন বা অধ্যাদেশ নিয়ে আলোচনা হয়েছে সচিব এবং অন্যান্য কর্মকর্তাদের নিয়োগের জন্য নির্বাচন কমিশন সার্ভিস নামে একটা সার্ভিস যেটা সংস্কার প্রস্তাব করেছেন। আমরা এটার সাথে একমত শুরু থেকেই এবং এটা প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত বিদ্যমান দ্বারা পরিচালিত হবে।' 

তিনি বলেন, 'সংশোধিত হলফনামাকে বেশ টাইট করা হয়েছে এবং এটা সংস্কার কমিশনের যতগুলো প্রস্তাব ছিল মোটামুটি সবগুলো এখানে ধারণ করা হয়েছে।' 

তিনি আরও বলেন, 'নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক এবং আর্থিক ক্ষমতা নতুন করে অর্পণ রিভাইজ করা হয়েছে। কিছু জিনিস ফাইন টিউন করা হয়েছে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে উপরে যারা নিয়োগ পাবেন তাদের নিয়োগটা কমিশন কর্তৃক অ্যাপ্রুভড হবে। আগে যেটা সরাসরি সচিব করতেন।' 

তিনি বলেন, 'নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে যে ডিপার্টমেন্টাল হেড, তার নিয়োগও কমিশন করবে। পাশাপাশি টেকনিক্যাল যে বা যারা আছেন তাদের ব্যাপারে আমরা একটা নীতিমালা করতে যাচ্ছি।' 

এনআইডির হালনাগাদ তথ্য প্রসঙ্গে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, 'এই কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার সময় ৩ লাখ ৭৪ হাজার এনআইডি সংশোধনীর আবেদন পেন্ডিং ছিল। গত ৭ মাসে ৯ লাখ এনআইডির সংশোধনের আবেদন নিষ্পত্তি হয়েছে। বর্তমানে ৭৪ হাজার আবেদন পেন্ডিং আছে।'

Comments

The Daily Star  | English
chief adviser yunus confirms election date

Election in February

Chief Adviser Prof Muhammad Yunus last night announced that the general election will be held before Ramadan in February 2026, kickstarting the process of handing over the power to an elected government.

7h ago