ময়মনসিংহে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের বাড়ি ভেঙে হচ্ছে শিশু একাডেমির ভবন

ময়মনসিংহে শিশু একাডেমির নতুন একটি ভবন বানানোর জন্য ভেঙে ফেলা হচ্ছে সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষের স্মৃতিজড়িত বাড়ি।
বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব বিবেচনা করে এটি সংরক্ষণের দাবির মধ্যেই নগরীর হরিকিশোর রায় রোডের শতাব্দী প্রাচীন ওই বাড়িটি ভাঙার কাজ শুরু হয়েছে।
হরিকিশোর রায় চৌধুরী ছিলেন কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী উপজেলার মসূয়ার জমিদার। তিনি বাংলা শিশুসাহিত্যের অন্যতম পথিকৃৎ উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী, সুকুমার রায় ও সত্যজিৎ রায়ের পূর্বপুরুষ।
ময়মনসিংহ শহরের হরিকিশোর রায় সড়কে প্রাচীন একতলা ভবনটি ১৯৮৯ সাল থেকে বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ব্যবহার করা শুরু করে। গত ১০ বছর ধরে জরাজীর্ণ ভবনটিতে কোনো কার্যক্রম চালানো যায়নি এবং এটি পরিত্যক্ত ছিল।

কিন্তু ময়মনসিংহ শিশু একাডেমির কার্যক্রম চালানোর জন্য একটি আধাপাকা ঘর নির্মাণের জন্য গত কয়েকদিন চলছে প্রাচীন বাড়িটি ভাঙার কাজ।
ময়মনসিংহ শিশু একাডেমির জেলা শিশুবিষয়ক কর্মকর্তা মো. মেহেদী জামান আজ মঙ্গলবার দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'ভাড়া বাসায় একাডেমির কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে সব প্রক্রিয়া মেনে স্থাপনাটি ভাঙা হচ্ছে। এখানে আপাতত একটি আধাপাকা স্থাপনা হবে।'
৩৬ শতাংশ জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা স্থাপনাটি ঠিক রেখে ৪-৫ রুমের আধাপাকা একটি স্থাপনা করার সুযোগ কি ছিল না, এমন প্রশ্নের জবাবে কর্মকর্তা বলেন, 'বাড়িটি থাকলে শিশুদের চলাচলে ঝুঁকি থাকত।'
বাড়িটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব তার জানা ছিল না বলেও স্বীকার করেন তিনি।
যোগাযোগ করা হলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের (ময়মনসিং ও ঢাকা বিভাগ) মাঠ কর্মকর্তা সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, 'এটি রায় পরিবারের ঐতিহাসিক বাড়ি। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে বাড়িটি এখনো তালিকাভুক্ত না হলেও এসব স্থাপনা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে তালিকাভুক্ত হতে পারে।'
শতবর্ষী স্থাপনা হিসেবে বাড়িটি রক্ষার জন্য তিনি গতকাল সোমবার জেলা প্রশাসন ও ময়মনসিংহ শিশু একাডেমি কর্মকর্তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন বলে জানান।
সরেজমিনে তিনি বাড়িটি ভাঙতে দেখেছেন বলে জানান। তিনি আরও জানান, বিষয়টি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এদিকে ঐতিহাসিক ভবনটি ভাঙার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
তীব্র নিন্দা জানিয়ে কবি শামীম আশরাফ বলেন, 'পুরাতন ও জরাজীর্ণ ভবন দেখেই ভেঙে ফেলার পায়তারা করে স্বার্থান্বেষী মানুষ। তারা জানতে চায় না এগুলোর ইতিহাস, ঐতিহ্য। ময়মনসিংহ শুধু শিল্প-সংস্কৃতিতে অনন্য নয়, স্থাপত্যশৈলীতেও অনন্য।'
'শশীলজ, আলেকজান্ডার ক্যাসেলসহ অসংখ্য নিদর্শন রয়েছে এই ময়মনসিংহে। যার কোনো কিছুর সঠিক দেখভাল করেনি সরকার। স্বার্থান্বেষী মানুষরা ভাবে, এগুলো জরাজীর্ণ, পচা। ভেঙে ফেলতে চায়, ভেঙে ফেলে উন্নয়নের নামে নানা অজুহাতে,' বলেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, 'জমিদার হরিকিশোর রায়ের এই বাড়িটিও ইতিহাসের অংশ। অভিভাবকহীন অন্ধকার ময়মনসিংহে এগুলো ভাঙার একটা রমরমা খেলা চলছে। গুঁড়িয়ে দিয়ে নয় সংস্কার ও সংরক্ষণ চাই সবকিছুর।'
Comments