বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর হাত ধরে এলো প্লাস্টিকের সম্ভাব্য বিকল্প
বাংলাদেশি দুই বিজ্ঞানী পচনশীল ব্যাকটেরিয়াল সেলুলোজকে একটি বহুমুখী উপাদানে রূপান্তরের পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছেন, যা প্লাস্টিকের বিকল্প হয়ে উঠতে পারে।
গত ৮ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, পৃথিবীতে পর্যাপ্ত পরিমাণে প্রাপ্ত ব্যাকটেরিয়াল সেলুলোজ থেকে পচনশীল পানির বোতল, প্যাকেজিং উপাদান বা ক্ষত ঢাকার ব্যান্ডেজসহ অনেক কিছুই তৈরি করা যেতে পারে।
হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয় জানায়, এই গবেষণা প্রকল্পে নেতৃত্ব দিয়েছেন হিউস্টন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেকানিক্যাল ও অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সহকারী অধ্যাপক মাকসুদ রহমান। তবে গবেষণাটি প্রথমে শুরু করেছিলেন আরেক বাংলাদেশি বিজ্ঞানী টেক্সাসের হিউস্টনের রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডির শিক্ষার্থী এম এ এস আর সাদী।

মাকসুদ রহমান ও এম এ এস আর সাদী দুজনই বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাবেক শিক্ষার্থী।
রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োসায়েন্সের পোস্টডক্টরাল ফেলো শ্যাম ভক্ত এই গবেষণায় সহায়তা করেছেন।
এই গুরুত্বপূর্ণ গবেষণাটি নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
এ ছাড়াও, রাইস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট, যুক্তরাষ্ট্রের সাইটেকডেইলি ও এনভায়রনমেন্ট নিউজ নেটওয়ার্কসহ আরও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম এ বিষয়ে প্রতিবেদন করেছে।
নেচার কমিউনিকেশনস জার্নালের তথ্যানুসারে, মাকসুদ রহমান, এম এ এস আর সাদী ও শ্যাম ভক্ত ছাড়াও একই বিষয় নিয়ে বিজ্ঞানী ইউফেই চুই, সাকিব হাসান, বিজয় হরিকৃষ্ণান, ইভান আর সিকুয়েরা, ম্যাটিও প্যাসকোয়ালি, ম্যাথু ব্যানেট ও পুলিকেল এম অজয়নও গবেষণা করেছেন।

এ বিষয়ে মাকসুদ রহমান বলেন, 'আমাদের আশা—এই শক্তিশালী, বহুমুখী ও পরিবেশবান্ধব ব্যাকটেরিয়াল সেলুলোজ শিটগুলো সর্বত্র ব্যবহৃত হবে। বিভিন্ন শিল্পে প্লাস্টিকের পরিবর্তে ব্যবহারের পাশাপাশি এটি পরিবেশগত ক্ষতি কমাতেও সহায়তা করবে।'
এম এ এস আর সাদী জানান, এটি উৎপাদনের জন্য তারা বিশেষ ধরনের ঘূর্ণায়মান কালচার ডিভাইস ব্যবহার করেছেন, যেখানে ব্যাকটেরিয়া থেকে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় উন্নতমানের সেলুলোজ ফাইবার তৈরি করা সম্ভব। এই ঘূর্ণনের ফলেই মূলত সেলুলোজ ফাইবারের গঠন আরও শক্তিশালী হয়।
এরপর এই সেলুলোজে বিশেষ উপাদান বোরন নাইট্রাইড ন্যানোশিট মেশানো হয়েছে। এই সংমিশ্রণে তৈরি হওয়া হাইব্রিড ম্যাটেরিয়াল অত্যন্ত উচ্চমানের শক্তিশালী উপাদান তৈরি করে, যার টেনসাইল শক্তি (টান সহ্য করার ক্ষমতা) সাধারণ প্লাস্টিকের তুলনায় অনেক বেশি।
গবেষণায় দেখা গেছে, এই নতুন উপাদানের টেনসাইল শক্তি প্রায় ৫৫৩ মেগাপ্যাসকেল, যা প্রচলিত প্লাস্টিকের শক্তির তুলনায় অনেক বেশি।
মাকসুদ রহমান বলেন, 'এটি কাঠামোগত উপকরণ, তাপ ব্যবস্থাপনা, প্যাকেজিং, টেক্সটাইল, সবুজ ইলেকট্রনিক্স ও শক্তি সংরক্ষণের পথ খুলে দেবে।'
Comments