টানা ৩ বছর ধরে কমছে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি

অলঙ্করণ: আনোয়ার সোহেল/স্টার ডিজিটাল গ্রাফিক্স

দুই বছরের মন্দার পর সদ্য বিদায়ী অর্থবছরে দেশের আমদানি বাড়লেও টানা তৃতীয় বছরের মতো মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে। এ থেকে বোঝা যায়, ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক আছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ তথ্য বলছে—গত অর্থবছরে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ কমে হয় এক দশমিক ৭৪ বিলিয়ন ডলার।

এলসি নিষ্পত্তি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৫ শতাংশ কমেছে। বিশ্লেষক ও ব্যবসায়ীরা একে বিনিয়োগকারীদের আস্থা ও শিল্পকারখানার চাহিদা কমে যাওয়ার লক্ষণ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এটি বর্তমান ও ভবিষ্যৎ বিনিয়োগে মন্দার লক্ষণ।'

বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে—চামড়া শিল্পের জন্য মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি কমেছে সবচেয়ে বেশি। এরপর আছে প্যাকিং, বস্ত্র ও পাট খাত।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন—বিদ্যমান সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে অনেকে বিনিয়োগে উৎসাহ পাচ্ছেন না।

গত অর্থবছরের মে মাসে বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধি ছিল সাত দশমিক ১৫ শতাংশ। লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে নয় শতাংশ। মোস্তাফিজুর রহমানের ভাষ্য, 'সরকারি নীতি ও ব্যবসায় অনিশ্চয়তার কারণে এমনটি হয়েছে।'

'দেশের রিজার্ভের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের কারণে এলসি খোলা কমেছে,' বলে মনে করেন বিজনেস ইনিশিয়েটিভ লিডিং ডেভেলপমেন্টের (বিল্ড) সাবেক চেয়ারপারসন আসিফ ইব্রাহিম।

তিনি ডেইলি স্টারকে বলেন, 'বাণিজ্য ঘাটতি বেড়ে যাওয়ার পাশাপাশি রেমিট্যান্স কম আসায় বাংলাদেশ ব্যাংক খাদ্য, জ্বালানি ও ওষুধের মতো প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানিকে অগ্রাধিকার দিতে বাধ্য হয়েছে। রিজার্ভ ধরে রাখতে অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসবহুল পণ্য আমদানিতে বিধিনিষেধ দেওয়া হয়।'

তার মতে, টাকার অবমূল্যায়ন আমদানি খরচ আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আমদানি পরিকল্পনা স্থগিত বা বাতিল করেছে।

'একই সঙ্গে দেশে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যাওয়া ও বেসরকারি খাতে ঋণ কমে যাওয়ায় মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির চাহিদা কমেছে। এটি সামগ্রিক আমদানিও কমিয়ে দিয়েছে।'

প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আমিরুল হক ডেইলি স্টারকে বলেন, 'এলসি খোলার প্রবণতা কমে যাওয়ায় নতুন বিনিয়োগে নেতিবাচক মনোভাব দেখা যাচ্ছে।'

তিনি মনে করেন, নতুন বিনিয়োগের অভাবের তিনটি প্রধান কারণ—অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে নীতি সহায়তা ঘিরে অনিশ্চয়তা, অপর্যাপ্ত ইউটিলিটি পরিষেবা ও দুর্বল প্রশাসন।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মদ আলী ডেইলি স্টারকে বলেন, 'মনে হচ্ছে, উদ্যোক্তারা রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সুদের হার কমার জন্য অপেক্ষা করছেন।'

'মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়াতে হলে রপ্তানিও বাড়াতে হবে,' বলে মন্তব্য করেন তিনি।

ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আশরাফ আহমেদ ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সাধারণত মূলধনী যন্ত্রপাতির আমদানি বাড়লে তা ভালো অর্থনীতির ইঙ্গিত দেয়। বর্তমান পরিস্থিতি দেশে শিল্পকারখানা বিকাশে দুর্বলতাগুলো তুলে ধরে।'

'নিম্ন প্রবৃদ্ধি, কম বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে ধীরগতির কারণে এটি ঘটছে,' বলে মনে করেন তিনি।

Comments

The Daily Star  | English
Strategies we can employ in tariff talks with the US

US tariff talks: Bangladesh writes to USTR, seeking date

The negotiation team from Bangladesh will fly to America once the USTR fixes a date for the talks

11h ago