২০২৫-২৬ অর্থবছর

বাজেটে কর-শুল্ক কমতে-বাড়তে পারে যেসব পণ্যে

জমির নামজারিতে কর কমবে
গ্রাফিক্স: সালমান শাকিব শাহরিয়ার

বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় যেতে হলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ানো প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে আগামী বাজেটে সরকার বেশকিছু কর ও শুল্ক ব্যবস্থা চালু করতে যাচ্ছে।

আগামী ২ জুন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জাতীয় বাজেট পেশ করার কথা আছে। সেখানে প্রস্তাবিত উদ্যোগগুলোর কথা তিনি জানাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এর মধ্যে থাকছে ব্যবসার খরচ কমানো ও উন্নয়নশীল দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করনীতি ঘোষণা।

বাজেটে মূল প্রস্তাবগুলোর মধ্যে থাকছে ৬২২ পণ্যের ওপর থেকে সম্পূরক শুল্ক তুলে নেওয়া বা কমানো এবং বাণিজ্য বাড়াতে আরও ১০০ পণ্যের ওপর থেকে শুল্ক কমানো। এর মধ্যে আছে হিমাগারের যন্ত্রপাতি, কাগজের পণ্য, বাস, নিউজপ্রিন্ট, ক্যানসারের চিকিৎসার সরঞ্জাম এবং ওষুধ ও পরিবেশবান্ধব পণ্যের কাঁচামাল।

তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি ও ওষুধের কাঁচামালে শুল্ক ছাড় দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার। ব্যবসা-বাণিজ্য সহজ করতে আমদানিতে ভুল ঘোষণার জরিমানা বর্তমানের ৪০০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০০ শতাংশ করা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, উন্নয়নশীল দেশ হওয়ার পর বাংলাদেশের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়াতে এসব উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

মার্কিন শুল্ক প্রতিক্রিয়া

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য বাণিজ্য সংকট মোকাবিলায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অতিরিক্ত ১০০ পণ্যে শূন্য আমদানি শুল্কের প্রস্তাব করতে যাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগত পরিবর্তনের পর বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত ৩৭ শতাংশ শুল্কের প্রভাব কমাতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এই তালিকায় থাকছে বস্ত্র খাতের কাঁচামাল, সামরিক সরঞ্জাম ও শিল্পকারখানার যন্ত্রপাতি। নতুন শুল্কের প্রভাব কাটিয়ে উঠতে এবং বাজারে মার্কিন পণ্য বাড়াতে শুল্কমুক্ত পণ্যের তালিকা বাড়াতে চায় সরকার।

ওষুধ শিল্পে সহায়তা

ওষুধ খাতকে শক্তিশালী করতে এবং স্বাস্থ্যসেবার খরচ কমাতে বাজেটে ওষুধের কাঁচামাল ও চিকিৎসা সরঞ্জামের ওপর শুল্ক কমানো হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ক্যানসার, কিডনি ও রক্তনালীর রোগের ওষুধ প্রস্তুতকারকদের জন্য অতিরিক্ত ৭৯ পণ্য শুল্কমুক্ত করা হতে পারে। এই উদ্যোগটি দেশে চিকিত্সা খরচ কমাবে এবং স্বাস্থ্যসেবা উন্নত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

হিমাগার, খেলনা ও ক্রিকেট ব্যাট তৈরিতে সুবিধা

কৃষিপণ্যের দাম স্থিতিশীল রাখতে ও ফসল কাটার পর লোকসান কমাতে হিমাগারের যন্ত্রপাতির ওপর শুল্ক মওকুফ করার পরিকল্পনা করছে সরকার।

খেলনা ও ক্রিকেট ব্যাট উৎপাদনে ব্যবহৃত কাঁচামালের ক্ষেত্রেও শুল্ক কমানোর সম্ভাবনা আছে। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে আমদানি করা ফিনিশড টয়গুলোর শুল্ক প্রতি কেজি চার ডলার ও ক্রিকেট ব্যাট তৈরিতে ব্যবহৃত উইলো কাঠের শুল্ক ৩৭ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৬ শতাংশ করা হতে পারে।

গণপরিবহন ও মাইক্রোবাসের শুল্ক

যানজট দূর করার লক্ষ্যে ১৬-৪০ আসনের বাসের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করা হচ্ছে। একইভাবে মাইক্রোবাসের (১০-১৫টি আসন) সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হতে পারে।

চিনির আমদানি শুল্ক

দেশে উৎপাদিত চিনির দাম স্থিতিশীল রাখতে ও রাজস্ব আয় বাড়াতে সরকার পরিশোধিত চিনির আমদানি শুল্ক টনপ্রতি সাড়ে চার হাজার টাকা থেকে কমিয়ে চার হাজার টাকা করতে পারে।

সফটওয়্যার রপ্তানিতে উৎসাহ

দেশে তৈরি সফটওয়্যার রপ্তানি বাড়াতে সরকার ডেভেলপমেন্ট টুলস, অপারেটিং সিস্টেম, ডাটাবেজ ও সিকিউরিটি সফটওয়্যারের আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে পাঁচ শতাংশ করতে পারে।

বিলাসবহুল পণ্যে শুল্ক

অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের শুল্ক কমানোর পাশাপাশি সরকার কয়েকটি বিলাসবহুল পণ্যের শুল্ক বাড়ানোর পরিকল্পনা করেছে। যেমন, লিপস্টিক ও ফেসওয়াশের ন্যূনতম শুল্ক দ্বিগুণ বাড়িয়ে প্রতি কেজি ৪০ ডলার করা হতে পারে।

চকলেটের ক্ষেত্রেও শুল্ক বাড়তে পারে।

হেলিকপ্টার আমদানিতে শুল্ক

আমদানি করা হেলিকপ্টারের শুল্ক এক শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই উদ্যোগে পরিবহন ও জরুরি প্রয়োজনে হেলিকপ্টারের ওপর নির্ভরশীল ব্যবসা ও পরিষেবার খরচ বাড়তে পারে।

এলএনজি আমদানিতে ভ্যাট ছাড়

বাজেটে এলএনজি আমদানিতে বিদ্যমান ১৫ শতাংশ মূল্য সংযোজন করে (ভ্যাট) ছাড় দেওয়া হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এটি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও কারখানার জ্বালানি খরচ কমাতে সহায়তা করবে।

করপোরেট ও আয়করে পরিবর্তন

রাজস্ব বাড়াতে সরকার ধনীদের আয়করের হার ৩০ শতাংশ করে বেশ কয়েকটি আয়করের সমন্বিত ব্যবস্থা চালু করতে পারে। গতিশীল কর কাঠামো চালু করে অন্যান্য আয়কর হার সামঞ্জস্য করা হতে পারে।

Comments

The Daily Star  | English

No justifiable reason to delay nat'l polls beyond Dec: Salahuddin

We have been able to make it clear that there is not even a single mentionable reason to hold the election after December, says the BNP leader

1h ago