পানছড়ির কোমল জীবন

পাখির চোখে পানছড়ি। ছবি: লেখক

খাগড়াছড়ির পানছড়িতে ঢেউ খেলানো সবুজের আশ্রয়ে থাকা ছোট গ্রামগুলোতে সময় যেন প্রকৃতির ছন্দের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধীরেই চলে। ভোরের আলোয় সূর্যের প্রথম সোনালি রশ্মি পাহাড়ের চূড়ায় আলতো করে বিশ্রাম নেয়, এরপর তা উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়ে গ্রামগুলোকে এক উষ্ণ, স্নিগ্ধ আলোয় স্নান করায়। বাতাসে ভেসে আসে বুনো ফুল, বাঁশের ঝোপ এবং চারপাশের বনের গভীর মাটির সৌরভ।

ছবি: লেখক

এখানকার সংকীর্ণ পথগুলো কোথাও পাথুরে, কখনো কেবল হেঁটে চলা মাটির পথ; ঢাল বেয়ে এঁকেবেঁকে চলে, বরকুম্ভ জলপ্রপাতের ঝলমলে জলধারার পাশ দিয়ে। এই জলধারার সুর পাখির গানের সঙ্গে মিশে এমন এক আবহ তৈরি করে, যা কেবল এখানকারই নিজস্ব।

ছবি: লেখক

বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি পানছড়ির বাড়িগুলোর ছাদ হয় টিন বা খড়ের। সূর্যের আলোয় আলোকিত উঠানগুলোতে লাল মরিচ, সোনালি হলুদ এবং শস্য পরিপাটি করে শুকানো হয়। উজ্জ্বল পোশাকে সজ্জিত নারীদের দিন শুরু হয় খুব ভোরে। কেউ কেউ কাঠের চুলায় হাঁড়ি চড়ান, কেউ হাঁস-মুরগি চরান, পাহাড়ের ঢালে কেটে রাখা জুমের জমিতে চাষ দেন, অথবা পানি আনতে পাহাড়ি পথে হেঁটে যান। পুরুষরা রওনা দেন বাজার কিংবা পাহাড়ের ঢালে উঁচু জমিতে থাকা তাদের ফলের বাগান ও সবজির ক্ষেতের দিকে।

ছবি: লেখক

শিশুরা পায়ে হেঁটে মাইল মাইল পথ পাড়ি দিয়ে স্কুলে পৌঁছায়। তাদের কলকল কথামালা, হাসির শব্দ সকালকে আরও উজ্জ্বল করে তোলে। অন্যরা, যারা সেদিন পড়াশোনা থেকে মুক্ত, তারা পাকা ফলের জন্য গাছে চড়ে, খালি পায়ে মাঠের ওপর দিয়ে দৌড়ায় এবং দুঃসাহসিক অভিযানের সন্ধানে বাঁশের ঝোপের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যায়।

ছবি: লেখক

গোধূলি নেমে এলে, পাহাড় থেকে শীতল বাতাস বয়ে আসে, যা পাতায় শিরশির শব্দ তোলে এবং ভেজা মাটির গন্ধ বয়ে নিয়ে আসে। মখমলের মতো আকাশে অগণিত তারা ঝলমল করে। তাদের শান্ত আলো ঘুমন্ত গ্রামের ওপর ছড়িয়ে পড়ে।

ছবি: লেখক

পানছড়িতে জীবন ঋতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলে, যা মাটি আর আকাশের সঙ্গে বাঁধা—সরল, স্বাবলম্বী, শান্ত ও সুন্দর। এটি এমন একটি জায়গা যেখানে প্রকৃতি কেবল একটি পটভূমি নয়, বরং এক অবিচ্ছিন্ন সঙ্গী।

ছবি: লেখক

 

Comments

The Daily Star  | English

Remittance rose 9% in August

However, August’s inflow was 2.22 percent lower than the previous month

2h ago