‘জুলাই সনদের’ আইনি ভিত্তি দিতে দলগুলোর প্রতিশ্রুতি চায় ঐকমত্য কমিশন

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যরা। ছবি: সংগৃহীত

জামায়াত-ই-ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বেশ কয়েকটি দলের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে 'জুলাই সনদ'কে একটি বাধ্যতামূলক আইনি দলিল হিসেবে উপস্থাপনের কথা বিবেচনা করছে জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন।

এখন 'জুলাই সনদ' বাস্তবায়নে একটি অধ্যাদেশ জারির জন্য সবগুলো রাজনৈতিক দলের প্রতিশ্রুতি চাইছে কমিশন। অধ্যাদেশে থাকবে বিশেষ সাংবিধানিক অঙ্গীকার যা অন্য সব আইন ও আদালতের রায়ের ঊর্ধ্বে 'জুলাই সনদের' সর্বোচ্চ আইনগত প্রাধান্য নিশ্চিত করবে।

সনদের সর্বশেষ খসড়া অনুযায়ী, রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রতিশ্রুতি দিতে বলা হবে যেন, এটি বাস্তবায়নের প্রতিটি ধাপে পুরোপুরি আইনি ও সাংবিধানিক সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। যদি সনদের কোনো শব্দ, বাক্য বা নীতি সংবিধান বা অন্য কোনো আইন-বিচারের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়, তাহলে সনদের বিধানই অগ্রাধিকার পাবে।

এর পাশাপাশি ঐকমত্য কমিশন রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে সংস্কার ছাড়া আরও একটি বিষয়ে প্রতিশ্রুতি চায়, যেটি হলো গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার ধারাবাহিক সংগ্রামের চূড়ান্ত পরিণতি ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্বের সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি।

কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, 'সনদের খসড়া রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে আজ বা আগামীকাল পাঠানোর পরিকল্পনা আছে। খসড়া শেষ পর্যায়ে আছে।'

'জুলাই সনদ' আইনি দলিল হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'এ বিষয়ে কমিশন আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে আলোচনা করছে।'

অধ্যাপক আলী রীয়াজ 'জুলাই সনদে'র সামগ্রিক অগ্রগতির বিষয়ে গতকাল প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে অবহিত করেন।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কমিশনের তৃতীয় ধাপের আলোচনা কবে, সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানান অধ্যাপক রীয়াজ।

এদিকে, দলগুলোর কাছ থেকে আরও কিছু প্রতিশ্রুতি নেওয়ার পরিকল্পনা আছে কমিশনের। এর মধ্যে আছে ২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, আন্দোলনে নিহতদের জন্য ন্যায়বিচার, শহীদদের রাষ্ট্রীয় মর্যাদা, আহতদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।

জুলাই সনদের খসড়ায় বলা হয়েছে, সনদে অগ্রাধিকার দেওয়া আছে এমন সুপারিশগুলো সংসদ নির্বাচনের আগেই অন্তর্বর্তী সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত সপ্তাহের রোববার ও মঙ্গলবার কমিশন সংবিধান ও আইন বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে বৈঠক করে 'জুলাই সনদ' বাস্তবায়নে ৯ দফা প্রতিশ্রুতির তালিকা প্রস্তুত করেছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, 'জুলাই সনদ কীভাবে বাস্তবায়ন করা যায় এবং এর আইনি ভিত্তি নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। সেখানে বিভিন্ন প্রস্তাব উপস্থাপন হয়েছে। এখনো কিছু চূড়ান্ত হয়নি, আলোচনা চলছে।'

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হয়। অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন বিষয়ে সংস্কারের জন্য ছয়টি কমিশন গঠন করে এবং পরে এসব কমিশনের প্রধানদের নিয়ে গঠন হয় ঐকমত্য কমিশন৷

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে এ কমিশন ৩২টি রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে আলোচনা করে। আলোচনার প্রথম ধাপে ১৬৬ প্রস্তাবের ৬২টি, দ্বিতীয় ধাপে ২০টিসহ মোট ৮২টি প্রস্তাবে ঐকমত্য গঠনের মধ্যে দিয়ে 'জুলাই সনদের' খসড়া তৈরির ভিত্তি তৈরি হয়।

৮২টি ঐকমত্য প্রস্তাবের ওপর ভিত্তি করে সনদের প্রাথমিক খসড়া ২৮ জুলাই দলগুলোর কাছে পাঠানো হয়। ওই খসড়ায় কমিশন দলগুলোর কাছে '২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং গণঅভ্যুত্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্বকে যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে সাংবিধানিক স্বীকৃতি দেওয়ার ও সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করার' প্রতিশ্রুতি চেয়েছিল।

তবে, ওই খসড়ায় দীর্ঘ গণতান্ত্রিক সংগ্রাম ও বিভিন্ন হত্যাকাণ্ডের ন্যায়বিচার নিশ্চিতের কোনো সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির উল্লেখ ছিল না।

খসড়ার ৩ নম্বর ধারায় পরবর্তী সাধারণ নির্বাচনের দুই বছরের মধ্যে সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের প্রস্তাব করা হয়। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো এ প্রস্তাব সমর্থন করলেও, জামায়াত, এনসিপি, ইসলামী আন্দোলনসহ কিছু দল এই প্রস্তাব বর্তমান সরকারের মেয়াদেই বাস্তবায়ন ও আইনি ভিত্তির দাবি করে। এটা না হলে তারা সনদে সই করবে না বলেও হুঁশিয়ারি দেয়।

এরপর কমিশন দ্রুত বাস্তবায়নযোগ্য একটি রূপরেখা প্রস্তুত করতে শুরু করে। কমিশন সূত্র জানায়, এখন যে খসড়াটি তৈরি হচ্ছে, তাতে গণঅভ্যুত্থানের পটভূমি, সংস্কার কমিশনগুলোর গঠন, ৮২টি ঐকমত্য প্রস্তাব এবং সনদ বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত ৯ দফা প্রতিশ্রুতি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।

প্রতিশ্রুতিগুলোতে বলা হয়েছে, 'জুলাই সনদের' ব্যাখ্যা ও বৈধতা নির্ধারণের একমাত্র এখতিয়ার থাকবে আপিল বিভাগের।

এতে আরও বলা হয়েছে, সনদটি হবে একটি আইনি দলিল এবং কোনো আদালত এর বৈধতা, প্রয়োজনীয়তা বা এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারবে না।

প্রতিশ্রুতির মধ্যে আছে সংবিধানের ৯৩(২) অনুচ্ছেদ বা অন্য কোনো আইন বা আদালতের রায়ের ঊর্ধ্বে এই সনদের বিধানগুলো বাস্তবায়ন করতে প্রয়োজনীয় অধ্যাদেশ জারি করা হবে।

দলগুলোর সম্মতিতে 'জুলাই সনদ' গৃহীত হলে সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, জননিরাপত্তা এবং দুর্নীতি দমন ব্যবস্থার সংস্কার ও সংশোধন করতে হবে এবং প্রতিশ্রুত সুপারিশগুলো বাস্তবায়নের জন্য কিছু আইন, বিধি ও প্রবিধান প্রণয়ন বা সংশোধন করতে হবে।

Comments

The Daily Star  | English

Trump, Putin in Alaska to end Ukraine war

Donald Trump and Vladimir Putin flew to Alaska yesterday for a high-risk summit that promises a stern test of the US president’s promise to end the bloody war in Ukraine.

4h ago